|
গিয়াস উদ্দিন আজমশাহের মুদ্রা |
আজম শাহ
বাংলাদেশে ইলিয়াস
শাহী রাজবংশ-এর তৃতীয় শাসক।
ইলিয়াস
শাহী রাজবংশ-এর দ্বিতীয় সুলতান
সিকান্দার শাহ -এর
পুত্র। ১৩৮৯ খ্রিষ্টাব্দে
সিকান্দার শাহ -এর মৃত্যুর পর আজম শাহ সিংহাসনে আরোহণ করেন। সিংহাসনে আরোহণের
পর তিনি নাম গ্রহণ করেন গিয়াস উদ্দিন আজম শাহ।
পিতার জীবদ্দশাতেই তিনি পূর্ববঙ্গে স্বাধীনভাবে রাজত্ব করতেন। এই কারণে ইলিয়াস শাহী
রাজত্বে কিছুটা শক্তির অপচয় হয়। ১৩৮৯ খ্রিষ্টাব্দে পূর্ণ ক্ষমতার অধিকারী হওয়ার পর,
তাঁর রাজত্বকালের উল্লেখ্য যোগ্য যুদ্ধ হলো, কামতার হিন্দু রাজ্য আক্রমণ। তবে
অভিযান ব্যর্থ হয়েছিল। এছাড়া তিনি রাজ্য বিস্তারের চেয়ে, মিত্রতা স্থাপনের মধ্য
দিয়ে সংঘাত এড়িয়ে রাজ্যকে সমৃদ্ধ করার চেষ্টা করেন। জৌনপুরের রাজার সাথে মিত্রতা
করেন। সে সময়ে চীনের সম্রাট ইয়োলুং-এর সাথে দূত বিনিময় করেন। ১৪০৬
খ্রিষ্টাব্দে চীনা-দূত মাহুয়ান বাংলাদেশে এসে তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করেন। ১৪০৯
খ্রিষ্টাব্দে তিনি মৃত্যবরণ করেন। এরপর তাঁর পুত্র সৈয়ফদ্দিন হামজা শাহ সুলতান হন।
আজম শাহ সাহিত্যের অনুরাগী ছিলেন। তিনি
পারস্যের কবি হাফিজকে বাংলায় নিমন্ত্রণ করেছিলেন। কবি এর প্রত্যুত্তরে একটি গজল
রচনা করে, আজমশাহকে পাঠান। এই গজলটি হলো
−
"শক্কর শিকন শওন্দ হমাঃ তূতিয়ানে হিন্দ।
যী কন্দে ফারসী কেঃ ব-বঙ্গালাঃ মী রওদ॥
হাফিয যে শওকে মজ্লিসে সুলতানে
গিয়াস্দীন।
গাফিল ম-শও কেঃ কারে তূ আয নালাঃ মী রওদ॥"
ভারতের তোতা হবে মিষ্টি-মুখো সকল-ই,
ফারসীর মিছরী যবে বাঙ্গালায় চলিছে।
হে হাফিয! গিয়াসুদ্দীন শাহের সভার বাসনা
ছেড়ো না, কাজ তোমারি কাঁদা-কাটায় চলিছে।
ধারণা করা হয় তাঁর আমলে বিদ্যাপতি জীবিত ছিলেন। বিদ্যাপতি আনুমানিক ১৩৭০-১৪৬০
খ্রিষ্টাব্দের ভিতর জীবিত ছিলেন। এছাড়া বিদ্যাপতির সমসাময়িক কালে ছিলেন করেছিলেন
বড়ু চণ্ডিদাস (১৪০০-১৪৩৩ খ্রিষ্টাব্দ)। তাঁর রচিত কাব্যগ্রন্থ শ্রীকৃষ্ণকীর্তন।
১৪১৮-১৪৩১ খ্রিষ্টাব্দের ভিতর কবি কৃত্তিবাস অনুবাদ করেছিলেন রামায়ণ। তবে
এঁদের রচনাকাল নিয়ে কিছুটা মতভেদ আছে। এঁরা আজমশাহের প্রত্যক্ষ সহায়তা না পেলেও,
বলা হয় তাঁর সময়ে সাহিত্য চর্চার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল।
সূত্র :
বাংলাদেশের
ইতিহাস/রমেশচন্দ্র মজুমদার।
ভারতের ইতিহাস । অতুলচন্দ্র রায়, প্রণবকুমার চট্টোপাধ্যায়।