পণ্ডিত বিনায়ক রাও পটবর্ধন
প্রখ্যাত সঙ্গীততজ্ঞ।

১৮৯৮ খ্রিষ্টাব্দের ২২ জুলাই, ভারতের
মহারাষ্ট্র প্রদেশের মিরাজ-এর একটি মধ্যবৃত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। এঁরা ছিলেন দাসগ্রন্থি মহারাষ্ট্রীয় ব্রাহ্মণ। তিনি 'গণেশ চতুর্থী'তে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। এই কারণে তাঁর নাম রাখা হয়েছিল বিনায়ক (গণেশের অপর নাম)।

১৯০২ খ্রিষ্টাব্দে কিছুদিনের ব্যবধানে তাঁর মা এবং পরে তাঁর পিতা নারায়ণ রাওয়ের মৃত্যু হয়। এরপর তিনি তাঁর চাচার কাছে প্রতিপালিত হন। মূলত এঁরা ছিলেন যৌথ পরিবারভুক্ত।

বংশানুক্রমিকভাবে এই পরিবারে কোনো সঙ্গীতের ঐতিহ্য ছিল না। তারপরেও তাঁর দুই চাচা নিজেদের চেষ্টায় সঙ্গীতে পারদর্শিতা লাভ করেছিলেন। এঁর এক চাচা গুরুদেব পটবর্ধন ছিলেন পাখোয়াজ বাদক। তিনি বিষ্ণু দিগম্বর পলুস্কারের সঙ্গীত বিদ্যায়নের পাখোয়াজ বাজাতেন। তাঁর অপর চাচার নাম ছিল কেশবরাও পটবর্ধন ছিলেন বালাকৃষ্ণবুওয়া ইচাল্কারান্জিকার এর শিষ্য। তিনি সঙ্গীতের পাঠ নিয়েছিলেন গণেশ সঙ্গীত বিদ্যালয়ে। এই স্কুলে ১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি সঙ্গীত-শিক্ষার জন্য ভর্তি হন। এই সময়
বিষ্ণুদিগম্বর পলুস্কর তাঁর সঙ্গীত বিদ্যায়তনের জন্য শিক্ষার্থী  সংগ্রহ করছিলেন। তিনি তাঁর লাহোরে প্রতিষ্ঠিত গান্ধর্ব মহাবিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে নির্বাচন করেন। এই সময় মিরাজ-এর শাসক লাহোরে গিয়ে লেখাপড়ার জন্য তাঁকে মাসিক ১৬ টাকা ভাতা মঞ্জুর করেন।

১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দে পলুস্কর তৎকালীন বোম্বাই (অধুনা মুম্বাই) শহরে গন্ধর্ব মহাবিদ্যালয়ের একটি শাখা স্থাপন করেন। বিনায়ক মুম্বাই শাখায় এসে ভর্তি হন। ১৯১১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি তাঁর সঙ্গীতের পাঠ শেষ করেন। কিন্তু ১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি সঙ্গীতের বর্ধিত পাঠ গ্রহণ করেন। এই সময় তাঁর গুরু পুলস্করের চোখে সমস্যা দেখা দিলে, তিনি রাতদিন গুরু সেবা করেন। ফলে তাঁর সাথে পুলস্করের হৃদ্যতা জন্মে। এই সূত্রে পুলস্করের কাছ থেকে সঙ্গীতের নানা বিষয়ে অবগত হওয়ার সুযোগ লাভ করেন। এই সময় তিনি এই বিদ্যালয়ের প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের গান শেখানোর সুযোগ পান। ১৯১৫ খ্রিষ্টাব্দের দিকে এই বিদ্যায়তনের একটি নিজস্ব ভবন তৈরি হয়। এই সময় তিনি বিদ্যায়তনের বাগান ও মুদ্রণ বিভাগ দেখাশোনার দায়িত্ব পালন করেন। ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি সঙ্গীত প্রবীণ ডিপ্লোমা লাভ করেন।

এরপর তিনি প্রায় ছয় বৎসর  ইচাল্কারান্জিকার-এর কাছে গোয়ালিয়র ঘরানার রাগ চর্চা করেন। মিরাজে থাকার সময় তাঁর ওস্তাদ রহমত খাঁর গান শোনার সৌভাগ্য হয়। তিনি এই গুণী শিল্পীর তারানা শুনে মুগ্ধ হন। এরপ[র কিছুদিন তাঁর কাছে তালিম নেন। এছাড়া তিনি ভাস্করবুয়া বাখলে-এর গান শুনে তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। এই শিল্পীর বহু অনুষ্ঠানে তিনি তানপুরা বাজিয়েছেন।

তাঁর শিক্ষাজীবনে তিনি বিভিন্ন সঙ্গীতগুরুদের কাছ থেকে হারমোনিয়াম, তবলা, জলতরঙ্গ, তার শানাই, সেতার এবং বেহালা শেখেন। এছাড়া তিনি কত্থক নাচের মূল বিষয়গুলো শিখেছিলেন।

পুলস্করের সৃষ্ট 'বিষ্ণুদিগম্বর স্বরলিপি'র সহজতর করার জন্য স্বরলিপি তৈরি করেছিলেন। এই স্বরলিপিটি ঠিক কবে তিনি তৈরি করছিলেন তা বিশেষভাবে জানা যায় না।

১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ আগষ্ট তিনি পরলোকগমন করেন।


তথ্যসূত্র :
সংসদ বাঙালি চরিতাবিধান (প্রথম খণ্ড)। জানুয়ারি ২০০২।
বাঙালির রাগসঙ্গীত চর্চ্চা। দিলীপকুমার মুখোপাধ্যায়।