বিষ্ণুদিগম্বর স্বরলিপি

পণ্ডিত
বিষ্ণুদিগম্বর পলুস্কর
প্রণীত স্বরলিপি। কালানুক্রমিক বিচারে এই স্বরলিপিটি তৃতীয়। উল্লেখ্য এর পূর্বর্তী দুটি স্বরলিপি বাংলাদেশে তৈরি করেছিলেন  ক্ষেত্রমোহন গোস্বামী জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর।  ক্ষেত্রমোহন গোস্বামী-কৃত স্বরলিপিটি দণ্ডমাত্রিক নামে পরিচিত। অপর স্বরলিপিটি করেছিলেন জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর। এর নাম আকারমাত্রিক স্বরলিপি। ১৯০১ খ্রিষ্টাব্দে বিষ্ণুদিগম্বর পলুস্কর লাহোর যান এবং সেখানে একটি সঙ্গীত বিদ্যায়ন প্রতিষ্ঠা করেন। ছাত্রছাত্রীদের সুর লিপিবদ্ধ করে দেওয়ার প্রেরণা থেকে তিনি এই স্বরলিপি প্রণয়ন করেছিলেন।


১. স্বর-চিহ্ন : স্বরের জন্য সাধারণভাবে যে সকল সঙ্কেত ব্যবহৃত হয়, তা হলো

       সাধারণ শুদ্ধ স্বরচিহ্ন : সা রে গ ম প ধ নি
       কোমল স্বরের নিচে হসন্ত বসে। যেমন কোমল ঋষভ হবে

       কড়ি মধ্যমে
ম-এর নিচে উল্টো হসন্ত বসে। কেউ কেউ শুধু ম ব্যবহার করেন।  যেমন- বা ম।

২. স্পর্শস্বর : কোনো স্বরের পূর্বে যখন অন্য স্বর নিমেষকালস্থায়ী হয়, তবে তা মূল স্বরের বামপ্রান্তে ঊর্ধ্বলিপিতে যুক্ত থাকবে।  যেমন

                 গ          মূল স্বর
                 র           স্পর্শ স্বর
            স্বরলিপিতে তা প্রকাশিত হবে
 রেগ।

৩. রেশস্বর : কোনো স্বরের পরে যখন অন্য স্বর নিমেষকালস্থায়ী হয়ে, একটি রেশ সৃষ্টি করে মাত্র, তখন তা মূল স্বরের ডানপ্রান্তে ঊর্ধ্বলিপিতে যুক্ত থাকবে। 
যেমন

                 গ          মূল স্বর
                 ম           রেশ স্বর
            স্বরলিপিতে তা প্রকাশিত হবে- গ

. মীড় চিহ্ন : গানের সুর যখন এক স্বর থেকে গড়িয়ে অন্য স্বরে যায়, তখন তা মীড় হিসাবে গণ্য করা হয়। এক্ষেত্রে যতমাত্রা এবং যে স্বর পর্যন্ত গড়িয়ে যাওয়ার বিষয় ঘটে, ঠিক সেই পর্যন্ত স্বরের নিচে মীড় চিহ্ণ বসে। যেমন
                                               

৫. মাত্রা প্রকাশক চিহ্ন

৬. স্বরের প্রলম্বিত অংশে বাণীরা সাথে সুরের সমন্বয়
কোনো স্বর একাধিক মাত্রা নিয়ে রেশ রেখে চলতে থাকলে, তাহলে উক্ত স্বরের পরবর্তী মাত্রাগুলো সেখানে ইংরেজি
s বর্ণ দিয়ে প্রকাশ করা হয়। আর বাণী অংশে ওই প্রলম্বিত অংশে ০ বসে। যেমন

                           

৭. কোন স্বর যদি বক্র বন্ধনীতে আবদ্ধ থাকে, তাহলে ওই স্বর দুইভাবে গীত বা বাদিত হতে পারে। যেমন

৮. তাল চিহ্ন :

সম চিহ্ন ১, ফাঁক চিহ্ন + অন্যান্য তালি সংখ্যা অঙ্কবাচক হয়, তবে তা নির্ধারিত হয় মাত্রার বিচারে। যেমন-

১        +          ৫              +            ৯              ১১
ধা ধা | দেন্ তা | কৎ তাগে | দেন   তা | তেটে কতা | গদি ঘেনে।

উল্লেখ্য এই পদ্ধতিতে ১৬ মাত্রার ত্রিতালকে ৮ মাত্রায় দেখানো হয়। ত্রিতালের মধ্যলয়ের পরিমাপ বুঝানোর জন্য এইভাবে ত্রিতাল লেখা হয়।


সূত্র :
সংগীত পরিচিতি (উত্তর ভাগ)। শ্রীনীলরতন বন্দ্যোপাধ্যায়। ৪ এপ্রিল, ১৯৭৯।