দণ্ডমাত্রিক স্বরলিপি

ভারতবর্ষের সৃষ্ট প্রথম স্বরলিপি
। এই সঙ্গীত পদ্ধতিটি উদ্ভাবন করেছিলেন
ক্ষেত্রমোহন গোস্বামী। ধারণা করা হয় ১৮৫০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে তিনি এর পূর্ণাঙ্গ রূপ দিতে সক্ষম হন। ১৮৬৭ খ্রিষ্টাব্দে কৃষ্ণধন বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম মুদ্রিত স্বরলিপি গ্রন্থ প্রকাশ করেন। এই গ্রন্থটির নাম 'বঙ্গৈকতান'। এই বিচারে কৃষ্ণধন বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রথম স্বরলিপি গ্রন্থ প্রণেতা হিসাবে সম্মানিত করা যায়। ক্ষেত্রমোহন গোস্বামী
-র প্রথম স্বরলিপি গ্রন্থ 'ঐকতানিক স্বরলিপি' প্রকাশিত হয়েছিল ১৮৬৮ খ্রিষ্টাব্দে। প্রকাশিত হয় বর্তমানে বাংলাদেশের অধিকাংশ গান আকারমাত্রিক স্বরলিপিতে লেখা হয়ে থাকে। পুরানো সঙ্গীত-বিষয়ক গ্রন্থে এই স্বরলিপি দেখা যায়। ধীরে ধীরে এই স্বরলিপি হারিয়ে যেতে বসেছে। নিচে এই স্বরলিপিতে ব্যবহৃত চিহ্নসমূহ দেখানো হলো।

১. স্বর-চিহ্ন : স্বরের জন্য সাধারণভাবে যে সকল সঙ্কেত ব্যবহৃত হয়, তা হলো

      

শাস্ত্রীয় নাম

স্বরসঙ্কেত

ষড়্‌জ

সা

কোমল ঋষভ

ঋষভ

কোমল গান্ধার

গান্ধার

গা

মধ্যম

মা

কড়ি মধ্যম বা তীব্র মধ্যম

পঞ্চম

পা

কোমল ধৈবত

ধৈবত

ধা

কোমল নিষাদ

নিষাদ

নি


. স্বর-সপ্তকে ব্যবহৃত স্বরচিহ্ন : স্বরসপ্তক উদারা, মুদারা ও তারা অনুসারে স্বরচিহ্ন নির্ধারিত হয়। উদারা সপ্তকের জন্য স্বরচিহ্নের নিচে বিন্দু চিহ্ন বসে। মুদারা সপ্তকে কোনো বাড়তি চিহ্ন বসে না। তারা সপ্তকে স্বরের উপরে বিন্দু চিহ্ন ব্যবহৃত হয়। যেমন

  উদারা সপ্তক  :
          

মুদারা  সপ্তক :
         

তারা সপ্তক :  
          

. শ্রুতি প্রকাশক স্বরচিহ্ন : এই স্বরলিপিতে শ্রুতি প্রকাশক কোনো চিহ্ন নেই।

৪. স্পর্শস্বর : এই স্বরলিপিতে স্পর্শস্বরের জন্য মূল স্বরের পাশে  ঊর্ধ-স্বরসঙ্কেত ব্যবহার করা হয়। যেমন-
                    মাপা

৪. রেশস্বর : এই স্বরলিপিতে রেশস্বরকেও একই পদ্ধতিতে ব্যবহার করা হয়, তবে রেশস্বরকে মূল স্বরের পরে ব্যবহার করা হয়
                    পামা

৫. মীড় চিহ্ন : গানের সুর যখন এক স্বর থেকে গড়িয়ে অন্য স্বরে যায়, তখন তা মীড় হিসাবে গণ্য করা হয়। এক্ষেত্রে যতমাত্রা এবং যে স্বর পর্যন্ত গড়িয়ে যাওয়ার বিষয় ঘটে, ঠিক সেই পর্যন্ত স্বরের উপরে মীড় চিহ্ণ বসে। যেমন

                                               

৬. স্বরচিহ্নে মাত্রা প্রকাশক সঙ্কেত : সাধারণ স্বরজ্ঞাপক চিহ্নের সাথে তালের মাত্রার জন্য কোনো পৃথক চিহ্ন নেই, তাই আকার মাত্রিকস্বরলিপিতে এই জাতীয় চিহ্ন স্বাধীনভাবে ব্যবহৃত হয় না। মূল স্বরচিহ্নের সাথে বিভিন্ন সহায়ক চিহ্ন বসিয়ে তালের মাত্রা নির্দেশ করা হয়। যেমন

একমাত্রা :    মূল স্বরচিহ্নের সাথে আকার যুক্ত করা হয়। যেমন
    মূল স্বরচিহ্ন : সা
এক মাত্রা চিহ্ন : দণ্ড।
একমাত্রার স্বরস্বিহ্ন হবে :
 
     
অর্ধমাত্রা :    মূল স্বরচিহ্নের সাথে একটি ঃ চিহ্ন ব্যবহৃত হয়। যেমন
    মূল স্বরচিহ্ন : স
অর্ধ-মাত্রা চিহ্ন : ঁ
অর্ধমাত্রার স্বরস্বিহ্ন হবে : সঁ।
     
সিকিমাত্রা :    মূল স্বরচিহ্নের সাথে একটি বৃত্ত ব্যবহৃত হয়। যেমন
    মূল স্বরচিহ্ন : স
অর্ধ-মাত্রা চিহ্ন : গুণচিহ্ন এবং তা স্বরের উপরে বসে।
অর্ধমাত্রার স্বরস্বিহ্ন হবে :
 

৭. তাল চিহ্ন :

    + সম
    ০ ফাঁক
    সম ছাড়া অন্যান্য তালি অঙ্ক দ্বারা প্রকাশ করা হয়। এক্ষেত্রে ফাঁকের পরে প্রথম তালি হয়, তারপর সম এরপরে তালি। এই বিচারে ত্রিতালের তালাঙ্ক হবে-
                        +, ৩, ০, ১

৮. স্বরকম্পন, মুড়কি, গিটকারী : এক মাত্রা একাধিক স্বরের আন্দোলন বা কম্পন-জাত স্বরসমূহ প্রকাশের জন্য স্বর সমূহের নিচে অনুভূমিক রেখা যুক্ত করা হয়। যেমন-