 বিষ্ণুদিগম্বর পলুস্কর,পণ্ডিত
বিষ্ণুদিগম্বর পলুস্কর,পণ্ডিত
১৮৭২- ১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দ 
ভারতীয় রাগসঙ্গীতের একজন স্বনামধন্য পণ্ডিত এবং নবতর স্বরলিপির উদ্ভাবক।
১৮৭২ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ আগষ্ট তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বোম্বাই 
প্রেসিডেন্সি'র কুরুদণ্ড নামক এক স্থানীয় একটি রাজ্যে জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমানে এই 
অঞ্চল ভারতের মহারাষ্ট্র প্রদেশের অন্তর্গত। তাঁর পিতা দিগম্বর 
গোপাল ছিলেন সেখালের বিখ্যাত কীর্তনিয়া। বংশপরম্পরায় তিনি শৈশব থেকে কীর্তন গানে 
দক্ষতা অর্জন করেছিলেন।
শৈশবে তিনি কুরুদণ্ডের একটি 
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এর কিছুদিন পর, এক দীপাবলী উৎসবে আতশবাজীর বিষাক্ত 
ধোঁয়া এবং চোখ ঝলাসানো আলোতে তাঁর দৃষ্টিশক্তি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। সেসময়ে এর যথাযথ 
চিকিৎসা করা সম্ভব হয় নি। স্থানীয় বৈদ্যরা তাঁকে চিকিৎসা দিলে তিনি কিছুটা সুস্থ 
হলেও, তাঁর দৃষ্টিশক্তি অত্যন্ত ক্ষীণ হয়ে যায়। এর ফলে তাঁর স্কুলে পড়া বন্ধ হয়ে 
যায়। এরপর তিনি বাড়িতেই পিতার কাছে সঙ্গীত শিখতে থাকেন। তাঁর সঙ্গীতের প্রতিভা লক্ষ 
করে, তাঁর পিতা তাঁকে মিরাজের প্রসিদ্ধ গায়ক পণ্ডিত বালকৃষ্ণ বুয়ার কাছে 
পাঠান। 
১৮৯৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি এই গুরুর কাছে সঙ্গীত শিক্ষা করেন। তাঁর শিক্ষা 
সমাপ্ত হওয়ার ১ বছর পরে, ১৮৯৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি রামাবাঈ-কে বিয়ে করেন। অচিরেই তিনি 
সংসারের আটপৌরে জীবন ত্যাগ করে, সঙ্গীত প্রচারের জন্য মহারাষ্ট্রের গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়ান। এই সময় তিনি 
মহারাষ্ট্রের লোকসঙ্গীতের বিষয়ে বিশেষভাবে অবগত হন। এই সময় তিনি বিভিন্ন রাজদরবারেও 
সঙ্গীত নিয়ে হাজির হন। তিনি তিনি এই সময় মন্দিরে মন্দিরে গান গেয়ে শ্রোতাদের 
সঙ্গীতে আকৃষ্ট করে তোলার চেষ্টা করেন। এই সময় তিনি 
ব্রজভাষা
শেখেন। এরপর তিনি পণ্ডিত চন্দন দুবের কাছে কিছুদিন ধ্রুপদ শেখেন।
১৯০১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি লাহোর 
যান এবং সেখানে একটি সঙ্গীত বিদ্যায়ন প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। এই বিদ্যালয়ের নাম দেন 
গান্ধর্ব মহাবিদ্যালয়। এই মহাবিদ্যালয় চালানোর জন্য তিনি সর্বসাধরণের কাছে অনুদান 
প্রার্থনা করেন। বিদ্যালয়ের শুরুতে তিনি প্রচুর শিক্ষার্থী পান। এছাড়া বিভিন্ন 
জলসার আয়োজন করেও বিদ্যায়তেনের জন্য অর্থ সংগ্রহ করেন। 
১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দে তৎকালীন 
বোম্বাই (অধুনা মুম্বাই) শহরে এই বিদ্যালয়ের একটি শাখা স্থাপন করেন। লাহোরের চেয়ে 
তিনি মুম্বাই শহরে অধিক সাড়া পান। ১৯১৫ খ্রিষ্টাব্দের দিকে এই বিদ্যায়তনের একটি 
নিজস্ব ভবন তৈরি 
হয়। এই ভবন তৈরিতে তিনি ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়েন। তারপরে তিনি সাধ্যমত বিদ্যায়তনটি 
চালানোর চেষ্টা করে যান। এক্ষেত্রে সেকালের ধনবানদের কেউই তাঁর পাশে এসে দাঁড়ান নি। 
১৯২৩-২৪ খ্রিষ্টাব্দের দিকে বিদ্যায়তনটি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর 
তিনি কিছুদিন কলকাতার পাথুরিয়া ঘাটার বিশিষ্ট সঙ্গীত-পৃষ্ঠপোশক তিনি 
ভূপেন্দ্রকৃষ্ণের বাড়িতে ছিলেন। এই সময় তিনি জনসমক্ষে 
গান গাওয়া বা অনুষ্ঠান করা ছেড়ে দিয়েছিলেন। চোখেও দেখতে পেতেন না। তবে
তিনি প্রতিদিন ব্রাহ্মমুহূর্তে ঘুম থেকে উঠে তিনি গলা 
সাধতেন। এখানে তিনি স্থানীয় কিছু শিষ্যদের 
সঙ্গীতের পাঠ দিয়েছিলেন। এঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন 
	
জ্ঞানেন্দ্রপ্রসাদ গোস্বামী।
এরপর তিনি সব ছেড়ে দিয়ে নাসিকে চলে যান। 
সেখানকার রামমন্দিরে তিনি শিষ্যদের নিয়ে গান করে সময় কাটান। এরপর তিনি মীরাজে চলে 
আসেন। ১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দের ৩১ আগষ্ট মীরাজে তিনি পরলোকগমন করেন।
বিবাহিত জীবনে তিনি বারোটি 
সন্তানের পিতা হন। কিন্তু এর ভিতরে ১১টি সন্তান শৈশবে মারা যায়। একমাত্র জীবিত 
পুত্র ছিলেন দত্তাত্রেয় বিষ্ণু পলুস্কর। ১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ অক্টোবর এই পুত্রও 
মৃত্যুবরণ করেছেন। 
তাঁর শিষ্যদের মধ্যে 
উল্লেখযোগ্যরা ছিলেন পণ্ডিত ওঙ্কারনাথ ঠাকুর, পণ্ডিত বিনায়ক রাও পথবর্ধন, পণ্ডিত 
নারায়ন রাও ব্যাস, পণ্ডিত বামন রাও পাধ্যে,  
	
জ্ঞানেন্দ্রপ্রসাদ গোস্বামী,
প্রোঃ বি.আর দেওধর, এসএস বোডস্, বি.এন. 
কশলকর, বিএন ঠকার প্রমুখ
তাঁর প্রণীত স্বরলিপিকে 
'বিষ্ণুদিগম্বর 
স্বরলিপি' নামে অভিহিত করা হয়।
 
সূত্র :
লিপিচিত্রে সঙ্গীত সাধক। বিষ্ণুদিগম্বর পলুস্কর। শ্রীপ্রশান্তকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়।