বিন্দুসার
পিতা চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য ধর্মের অনুশাসন
অনুসারে, সিংহাসন ত্যাগ করার পর, বিন্দুসার উত্তরাধিকারসূত্রে রাজত্ব লাভ করেন।
সিংহাসনে আরোহণকালে তিনি 'অমিত্রঘাত' অর্থাৎ 'শত্রুনিধনকারী' উপাধি লাভ করেন।
অধিকাংশ ঐতিহাসিকের মতে তাঁর রাজ্যে খ্রিষ্টপূর্ ৩০০ অব্দের দিকে।
বিন্দুসার রাজ্য পরিচালনা করলেও তাঁর রাজত্বের তেমন কোন বিবরণ পাওয়া যায় নি। জানা
যায়, বিন্দুসারের সাথে তাঁর পিতা
চন্দ্রগুপ্তের নানা বিষয়ে মতভেদ ছিল। তা সত্ত্বেও তিনি তাঁর পিতার
আভিজাত্য ও ঐতিহ্য রক্ষা করেছিলেন। তৎকালীন বৌদ্ধ গ্রন্থকার তারানাথের বিবরণ থেকে
দেখা যায় যে, চাণক্য বিন্দুসারের মন্ত্রী হিসেবে কাজ করেছিলেন। সে সময়ে চাণক্য
রাষ্ট্রশাসনে তাঁর প্রতিপত্তি রক্ষায় ব্রতী ছিলেন। দাক্ষিণাত্যের কিছু অংশ কিছু অংশ
বিন্দুসারের সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল বলে ধারণা করা হয়। সম্রাট অশোক শুধু
কলিঙ্গ জয় করেছিলেন, কিন্তু তাঁর রাজ্য দাক্ষিণাত্যের পেনার নদী পর্যন্ত বিস্তৃত
ছিল। তাই অনেকেরই ধারণা এই যে, বিন্দুসারের শাসনামলে দাক্ষিণাত্য মৌর্য সাম্রাজ্যের
অন্তর্ভূক্ত ছিল।
বিন্দুসারের রাজত্বকালের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা ছিল
তক্ষশীলার বিদ্রোহ। সে সময়ে
তক্ষশীলা অধিবাসীরা শাসকদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে বিদ্রোহে লিপ্ত হয়। তক্ষশীলার
এই বিদ্রোহ দমন করেছিলেন যুবরাজ অশোক। বিন্দুসারের রাজত্বকালে একমাত্র কলিঙ্গ জয়
করা ছাড়া আর কোন রাজ্য জয়ের ইতিহাস সমসাময়িক কোন গ্রন্থেই পাওয়া যায়নি। তবে তাঁর
মন্ত্রী চাণক্য একবার ১৬টি রাজ্যের নৃপতি ও সামন্তদের পরাজিত করে তাঁর সাম্রাজ্যের
পরিধি পূর্ব সমুদ্র হতে পশ্চিম সমুদ্র অবধি বিস্তৃত করেছিলেন বলে তিব্বতীয়
গ্রন্থকার তারানাথের বিবরণে পাওয়া যায়। তবে তারানাথের এই বিবরণ গ্রহণযোগ্যতা পায়
না, কারণ, সৌরাষ্ট্র চন্দ্রগুপ্তের মৌর্য সাম্রাজ্যভুক্ত ছিল তা প্রমাণিত হয়েছে।
নানা বিষয়ে পিতার সাথে মতবিরোধ থাকা সত্ত্বেও বিন্দুসার ছিলেন পিতার মতোই গ্রিকদের
অনুরাগী। তিনি তাঁর পিতার মতোই গ্রিকদের সাথে সৌহার্দ্য বজায় রেখেছিলেন। সিরিয়ার
অধিপতি এন্টিয়োকস ও মিশর-রাজ দ্বিতীয় টলেমি বিন্দুসারের রাজসভায় যথাক্রমে ডায়োনিসাস
ও ডেইমেকসকে রাজদূত হিসেবে পাঠিয়েছিলেন। বিন্দুসার সিরিয়ার অধিপতির কাছে কিছু শুষ্ক
ডুমুর, মিষ্টি মদ ও একজন দার্শনিক চেয়ে পত্র লিখেছিলেন বলে গ্রিক ঐতিহাসিক
হেগেসেনার এর বর্ণনা থেকে জানা যায়। তবে ঐ সময়ে গ্রিসে গ্রিক পণ্ডিত ব্যক্তির
ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ ছিল, এই কারণে এন্টিয়োকস কোনো গ্রিক দার্শনিক পাঠাতে পারেন নি।
তবে তিনি মিষ্টি মদ ও শুষ্ক ডুমুর পাঠিয়েছিলেন।
বিন্দুসার প্রায় ২৮ বছর রাজত্ব করে পরলোক গমন করেছেন বলে জানা যায়। তবে, পুরাণ
অনুসারে জানা যায়, তিনি ২৫ বছর রাজত্ব করেছিলেন। বৌদ্ধ কিম্বদন্তী অনুসারে জানা
যায়, তাঁর স্ত্রীর সংখ্যা ছিল ১৬টি এবং পুত্রের সংখ্যা ছিল ১০১টি। তাঁর মৃত্যুর
তাঁর পুত্র অশোক অন্যান্য ভাইদের পরাজিত ও হত্যা করে সিংহাসন দখল করেছিলেন।
সূত্র :
ভারতের ইতিহাস । অতুলচন্দ্র রায়, প্রণবকুমার চট্টোপাধ্যায়।
http://annoyzview.wordpress.com/2012/02/17/birth-of-bindusara-and-chanakyas-death/