কায়িন, কাবিল
Cain
আদম আঃহাওয়া (আঃ)-এর প্রথম পুত্র সন্তান। আরবি ভাষা একে কাবিল নামে অভিহিত করা হয়েছে। বাংলার মুসলমানদের কাছে তিনি কাবিল নামেই পরিচিত। নানা সূত্র থেকে জানা যায়- আদম আঃহাওয়া (আঃ)-এর প্রথম কন্যা আকলিমা ছিলেন কাবিলের যমজ বোন।

ইহুদীদের ধর্মগ্রন্থ তোরাহের (
Tanakha) -এর Genesis, (আদিপুস্তক। ৪:১)-এর মতে- এ্যাডাম তাঁর স্ত্রী ইভের সাথে মিলিত হলে, ইভ গর্ভবতী হন এবং কায়িনের জন্ম দেন। এর পরে ইভের গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন আবেল (Abel, ইসলামী নাম হাবিল)-এর জন্ম দেন। এই দুই সন্তানের মধ্যে কায়িন ছিলেন অগ্রজ। তিনি হয়েছিল চাষী। আর ছোট ভাই আবেল হয়েছিলেন মেষ পালক।

কিছুদিন পর কায়িন তাঁর ভূমির ফল সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করলেন। আর আবেল [
হাবিল] তাঁর পশুপালের প্রথমজাত কয়েকটি পশু ও এদের মেদ সদাপ্রভুকে উৎসর্গ করলেন। কিন্তু সদাপ্রভু আবেলের উপহার গ্রহণ করলেন এবং কায়িনের উপহার অগ্রাহ্য করলেন। এই কারণে কায়িন অত্যন্ত ক্রোধান্বিত হলেন এবং তঁর মুখ  বিষণ্ণতায় ভরে গেল। সদাপ্রভু তাঁর বিষাদিত মুখ দেখে ক্রোধ ত্যাগ করে সাদচরণ করার পরামর্শ দেন। কিন্তু কায়িন কি অসদাচরণ করেছিলেন তা বললেন না। এরপর কায়িন ভাইয়ের প্রতি প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য আবেল নিয়ে মাঠে যান এবং তাঁকে হত্যা করেন।

এরপর সদাপ্রভু কায়িনকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর কায়িনকে অভিশাপ দিয়ে বললেন- 'এবার ধেকে তুমি তুমি যখন জমি চাষ করবে, তখন ভূমি তোমাকে ফসল দেবে না। তুমি পৃথিবীর সর্বত্র ভবঘুরের মতো বিচরণ করবে। কায়িন সদাপ্রভুকে বললেন- আমকে যে কেউ দেখবে সেই আমাকে এই অপরাধে জন্য হত্যা করবে। এই কথার উত্তর সদাপ্রভু আশ্বাস দিলেন যে, কেউ তাঁকে হত্য করবে না। আর যদি তা করে, তা হলে সে সাতগুণ প্রতিফল পাবে। তাঁকে কেউ যেন ভুল করেও হত্যা না করে, তাই তিনি কায়িনের গায়ে একটি বিশেষ চিহ্ন এঁকে দিলেন। এরপর কায়িন নোদ দেশে চলে যান।
সাথে গিয়েছিলেন আওয়ান (আকলিমা)

ইহুদীদের ধর্মের আদি গ্রন্থ- জুবলি বাইবেল (The Book of Jubilees)- এর ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে- হাবিল যখন তাঁর স্রষ্টার উদ্দেশ্যে উৎর্গ করেছিলেন, তখন তাঁর বয়স ছিল ২২ বৎসর।

কুরআন শরীফে হাবিল ও কাবিলের ঘটনা সূরা মায়েদাহর যেভাবে বর্ণনা করা হয়েছে, তা হলো-
হাবিল-কাবিলের ঘটনা বর্ণনায় বেশির ভাগ ঐতিহাসিক হত্যাকাণ্ডের পেছনে নারীঘটিত কারণ ছিল বলে উল্লেখ করেন। তাঁরা বলেন, আদম (আ.)-এর শরিয়তের বিধান লঙ্ঘন করে কাবিল নিজের যমজ সুন্দরী বোনকে বিয়ে করতে চাইছিল। এ ক্ষেত্রে হাবিলকে পথের কাঁটা মনে করে তাকে চিরতরে সরিয়ে দিতেই তাকে হত্যা করেছিল সে। তবে গবেষক আলেমরা বলেন, এ সংক্রান্ত বর্ণনাগুলো মুরসাল (যা অসম্পূর্ণ সনদে বর্ণিত), দুর্বল ও বানোয়াট। আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) বলেন, এগুলো ইসরায়েলি উপকথা মাত্র এবং পরবর্তী সময়ে মুসলমান হওয়া সাবেক ইহুদি পণ্ডিত কাব আল আহবার থেকে বর্ণনাকৃত। (তাফসিরে ইবনে কাসির)।

ইহুদীদের ধর্মগ্রন্থ তোরাহের (Tanakha) -এর Genesis, (আদিপুস্তক। ৪:১৭)-এর মতে- কায়িন নোদ দেশে চলে যান। সাথে গিয়েছিল তাঁর জমজ বোন  আওয়ান (আকলিমা)। কায়িন তাঁকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করেন। এঁদের পুত্রের নাম ছিল এনোখ
(Enoch)-এর জন্ম হয়। ইহুদীদের ধর্মগ্রন্থ তোরাহের (Tanakha) -এর Genesis, থেকে এনোখের মায়ের নাম জানা যায় না। তবে এই গ্রন্থ থেকে কাবিলের পরবর্তী বংশধরদের যে পরিচয় পাওয়া যায় তা হলো-

লামেখের দুটি স্ত্রী গ্রহণ করেছিলে। প্রথম স্ত্রীর নাম আদা। দ্বিতীয় স্ত্রীর নাম সিল্লা। তিনি দুটি মানুষকে হত্যা করেছিলেন। এই হত্যার কারণ হিসেবে তিনি তাঁর স্ত্রীদের বলেছিলেন- দুটি মানুষ তাঁকে জখম করেছিল, তাই তিনি তাঁদের হত্যা করেছিলেন। সম্ভবত এই দুটি হত্যার জন্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলেন। তাই তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন যেম- কাবিলকে হত্যা করলে হত্যাকারী সাত গুণ বেশি শাস্তি পাবে, কিন্তু তাঁকে (লামেখ) হত্যা করলে চৌদ্দগুণ বেশি শাস্তি পাবে


সূত্র :