ইহুদি, খ্রিষ্টান এবং ইসলাম ধর্মমতে প্রথম নবী।
ইসলাম ধর্মে তাঁর সম্মানার্থে বলা হয়- হযরত আদম আলাইহি
সালাম। এর সংক্ষিপ্ত লিখিত রূপ হযরত আদম আঃ।
এই নবীর বিবরণ প্রথম বিবিরণ লিপিব্দ্ধ হয়েছে, হিব্রু বাইবেল 'তানাখ'-এর
আদিপুস্তক ১.২৬-২৭ পাঠ্যাংশে। ঈশ্বর তাঁর অনুগত ফেরেস্তাদের ডেকে বললেন-
'১. ২৬...আমরা
আমাদের প্রতিমূর্তিতে, আমাদের সাদৃশ্যে মনুষ্য নির্মাণ
করি; আর তাহারা সমুদ্রের মৎস্যদের উপরে, আকাশের পক্ষীদের উপরে, পশুগণের উপরে,
সমস্ত পৃথিবীর উপরে, ও ভূমিতে গমনশীল যাবতীয় সরীসৃপের উপরে কর্তৃত্ব
করুক।
১.২৭. পরে ঈশ্বর আপনার প্রতিমূর্ত্তিতে মনুষ্যকে
সৃষ্টি করিলেন; ঈশ্বরের প্রতিমূর্ত্তিতেই তাহাকে সৃষ্টি করিলেন, পুরুষ ও স্ত্রী
করিয়া তাহাদিগকে সৃষ্টি করিলেন।
ইহুদি, খ্রিষ্টান এবং ইসলাম ধর্মমতে এই প্রথম মানবই হলেন-আদম
আঃ।
ইহুদি 'তানাখ' এবং খ্রিষ্টীয় বাইবেলের আদি-পুস্তক অনুসারে ঈশ্বর পুরুষ ও নারী
পৃথকভাবে তৈরি করেছিলেন। এর ভিতরে আদম প্রথম পুরুষ, আর প্রথম নারী ছিলেন
লিলিথ।
লিলিথ ছিলেন বুদ্ধিদীপ্ত,
আত্মসম্মানবোধে পরিপূর্ণ এক নারী। তাই আদমের আধিপত্য মেনে নিতে পারেন নি
লিলিথ। সকল
ক্ষেত্রে তিনি নিজেকে আদমের সমকক্ষ হিসেবে বিবেচনা করতেন। উভয়ের ভিতরে সকল ধরনের
সমকক্ষতার উল্লেখ এই গ্রন্থে নেই। গ্রন্থটিতে উদাহরণ হিসেবে পাওয়া সঙ্গমের অধিকারের
বিষয়ে। সঙ্গমের সময় আদম লিলিথের উপরে উঠে অধিকার প্রতিষ্ঠা করবে, এটা
লিলিথ মেনে
নিলেন না। তিনি বললনে, আদমের দেহের উপরে উঠে তিনি ভোগ করবেন। এই দ্বন্দ্বের সুরাহা
না হওয়ায়
লিলিথ স্বরগ ত্যাগ করে আদমকে ছেড়ে মর্তে নেমে আসে। এরপর নিঃসঙ্গ আদমের জন্য
ঈশ্বর ইভকে (হাওয়া আঃ)
সৃষ্টি করেছিলেন তাঁরই
পাঁজর থেকে। এ বিষয়ে আদি পুস্তকের রাব্বাহতে একটি উপাখ্যান আছে। খ্রিষ্টীয়
৯ম-১০ম শতাব্দীর দিকে ‘এলফাবেট অফ বেন সিরা’-তে এ বিষয়ে বিস্তারিত পাওয়া যায়।
ঈশ্বর আদম এবং ইভকে
এদেন উদ্যানের থাকার ব্যবস্থা করে দেন।
এদেন উদ্যানের কেন্দ্রে
ঈশ্বর একটি জ্ঞানবৃক্ষ তৈরি করেছিলেন। ঈশ্বর এই উদ্যানের এই
জ্ঞানবৃক্ষের ফল ব্যতীত সকল বৃক্ষের ফল ভক্ষণের অনুমতি দিয়েছিলেন। পরে শয়তানরূপী
একটি সাপ (হাওয়া আঃ) কে ওই গাছের ফল ভক্ষণে প্ররোচিত করে। প্ররোচিত
(হাওয়া আঃ) নিজে ওই ফল আহার করেন এবং
আদম আঃ-কেও খাওয়ান। বিষয়টি ঈশ্বর জানার পর, উভয়কে এদেন উদ্যান থেকে বহিষ্কার করে দেন। [আদিপুস্তক
২-৩]
স্বর্গতুল্য
এদেন উদ্যান থেকে
বিতারিত হয়ে আদম আঃ এবং হাওয়া আঃ কঠিন বাস্তব পৃথিবীতে বাস করা শুরু করেন। এঁদের প্রথম
সন্তান কয়িন (কাবিল)
এবং দ্বিতীয় সন্তান হেবল- (হাবিল)এর জন্ম হয়।
কাবিল ভূমিকর্ষক অর্থাৎ চাষী ছিলেন। অন্যদিকে হাবিল ছিলেন মেশপালক।
ইহুদীদের ধর্মের আদি গ্রন্থ- জুবলি বাইবেল (The Book of Jubilees)-এর
তৃতীয় ও চতুর্থ অধ্যায়ে আদম আঃ এবং হাওয়া আঃ-এর দাম্পত্য জীবন ও সন্তানাদি সম্পর্কে
বলা হয়েছে-
- চতুর্থ মাসের নতুন চাঁদে আদম তাঁর স্ত্রী উদ্যানে
প্রবেশ করেন। এবং এই উদ্যানের যেখানে তাঁদের তৈরি করা হয়েছিল, সেখানে বাস
করা শুরু করেন। এই স্থানের নাম ছিল এলডা। এখানে আদম তাঁর স্ত্রীকে ইভ নামে
সম্বোধন করেছিলেন। এঁদের বিবাহ বার্ষিকীতে কোনো সন্তান জন্মগ্রহণ করে নি।
এই সময় তিনি এই উদ্যানের নামকরণ করেন- এদেন উদ্যান।
- বিবাহের দ্বিতীয় জন্মবার্ষিকীর তৃতীয় সপ্তাহে হাওয়া আঃ
কয়িনকে (কাবিল)।
চতুর্থ সপ্তাহে আবেলকে (হাবিল)
এবং পঞ্চম সপ্তাহে আওয়ান (কন্যা)-কে
জন্ম দেন। এই গ্রন্থের পাদটীকায় আদম আঃ-এর দ্বিতীয় কন্যার নাম লেখা হয়েছে
আজুরা। কাবিল
-হাবিল
দ্বন্দ্বে কাবিল হাবিলকে হত্যা করে এবং সে স্রষ্টার অভিশাপে দেশত্যাগ করেন। এরপর
হাওয়া
আঃ তাঁর তৃতীয় পুত্র শেথকে প্রসব করেন।
আদিপুস্তক ৫-থেকে জানা যায়, আদমের ১৩০ বৎসর বয়সে আদমের অনুরূপ 'শেথ'
নামক একটি পুত্রের জন্ম হয়েছিল। এরপর আরও ৮০০ বৎসর তিনি জীবিত ছিলেন এবং আরও বহু
সন্তানের পিতা হয়েছিলেন। হিব্রু বাইবেল 'তানাখ'-এর আদিপুস্তক ৫:২-এর বিবরণ অনুসারে
জানা যায়- আদম আঃ ৯৩০ বৎসর জীবিত ছিলেন।
আদম আঃ এবং হাওয়া আঃ-এর সন্তান-সন্ততি
- হিব্রু বাইবেল 'তানাখ'-এর আদিপুস্তক অনুসারে তিনটি
পুত্র সন্তানের নাম পাওয়া যায়। এঁরা হলেন-
-
ইহুদীদের ধর্মের আদি গ্রন্থ- জুবলি বাইবেল (The Book of Jubilees)-
অনুসারে পাওয়া যায়- তিনটি পুত্র এবং ২টি কন্যার নাম
সূত্র :
-
Hebru-English Tanakh/The Jewish
Bible/Varda Books. 2009