দীনেশরঞ্জন দাশ
(১৮৮৮-১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দ )
কল্লোল পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতাদের একজন এবং এই পত্রিকার
সম্পাদক।
১৮৮৮ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ জুলাই ব্রিটিশ ভারতের
ফরিদপুর জেলার কুঁয়রপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার কৈলাসচন্দ্র দাশ ছিলেন নব বিধান ব্রাহ্ম সমাজের উচ্চপদস্থ কর্মচারী।
মায়ের নাম ইচ্ছাময়ী দেবী।
তিনি চট্টগ্রাম স্কুল থেকে এন্ট্রান্স পাশ করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। পরে স্বদেশী আন্দোলনের প্রভাবে কলেজ ত্যাগ করেন। অল্প বয়সেই পিতা পরলোক গমন করেন এবং এরপর পরিবারের সবাই কলকাতায় চলে আসেন ।
চিত্রাঙ্কনের প্রতি বিশেষ আগ্রহ থাকায় কিছুদিন আর্ট কলেজে অঙ্কনবিদ্যার শিক্ষাগ্রহণ
করেন। কর্মজীবনের প্রথম দিকে এক ফ্যান কোম্পানিতে, পরে কিছুকাল কখনো ক্রীড়াসামগ্রীর দোকানে কখনো ঔষধের দোকানে কাজ করেন । কিন্তু কোন চাকরি তার ভালো না লাগায় বিভিন্ন প্রকাশকের পুস্তকাদির প্রচ্ছদপট ছবি কার্টুন অঙ্কন এবং অল্প স্বল্প লেখা নিয়ে জীবন চালাতে থাকেন ।
১৯২১ খ্রিষ্টাব্দে
কলকাতার হাজরা রোডে 'চার শিল্প গোষ্ঠী' নামক একটি সাহিত্য আড্ডায়
যুক্ত হন। এই আড্ডার অন্য তিনজন সদস্য ছিলেন।
গোকুলচন্দ্র নাগ,
সুনীতা দেবী এবং মনীন্দ্রলাল বসু। উল্লেখ্য আনুষ্ঠানিকভাবে এই আড্ডার সূচনা হয়েছিল
১৯২১ খ্রিষ্টাব্দের ৪ঠা জুন। এই সাহিত্য আড্ডার উদ্দেশ্য ছিল বাংলা সাহিত্য, ললিত
কলা, সংগীত ও নাটক সৃষ্টি ও চর্চা। ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দে এই চার সদস্য 'ঝড়ের দোলা'
নামক একটি সাহিত্য সংকলন প্রকাশ করেন। এই সংকলনটি সাহিত্যিকমহলে বিপুলভাবে আদৃত হলে
'চার শিল্প গোষ্ঠী' একটি পত্রিকা প্রকাশের উদ্যোগ নেন এবং ১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দে
'কল্লোল' নামক পত্রিকা প্রকাশ করেন। পত্রিকাটির প্রথম সম্পাদক ছিলেন দীনেশরঞ্জন
দাশ।
এই পত্রিকার মাধ্যমে একটি নব্যধারার সাহিত্য-গোষ্ঠী সৃষ্টি হয়। এঁরা
প্রায় নিয়মিতভাবে
দীনেশরঞ্জন দাশের পটুয়াতলা লেনের বাড়িতে বসতেন।
এই পত্রিকার সূত্রে 'চার শিল্পী-গোষ্ঠী' কল্লোল সাহিত্য গোষ্ঠীতে
পরিণত হয়েছিল। বাংলা সাহিত্যের ক্রমবিবর্তনের ধারায় এই পত্রিকা যে বাংলা সাহিত্যের
অধ্যায়টি রচনা করেছিল, তা 'কল্লোল সাহিত্য যুগ' নামে অভিহিত করা হয়।
১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দে ২৪ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার, ৮ আশ্বিন ১৩৩২) পত্রিকার অন্যতম সংগঠক
ও সহ-সম্পাদক গোকুলচন্দ্র নাগ,
দার্জিলিং-এ মৃত্যুবরণ করেন। এর ফলে পত্রিকার মূল দায়িত্ব এসে পড়েছিল সম্পাদক দীনেশরঞ্জন দাশের উপর।
তিনি পটুয়াটোলা লেনে 'কল্লোল পাবলিশিং হাউস' নামক প্রকাশনা
সংস্থা তৈরি করেছিলেন। বিভিন্ন লেখকের বেশ কিছু বই ছাপানো হয় এখান থেকে।
এই ব্যবসায় বিশেষ সুবিধা করতে না পেরে তিনি ঋণগ্রস্ত হয়ে
পড়েন। এরপর তিনি চলচ্চিত্রের
চিত্র বিশেষজ্ঞ ধীরেন্দ্রনাথের অধীনে কাজ করেনন এবং ফটোগ্রাফি বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিলেন। ১৩৩৬ বঙ্গাব্দের
'কল্লোল পত্রিকার' আষাঢ়,
শ্রাবণ, অগ্রহায়ণ ও পৌষ সংখ্যায় প্রকাশিত
হয়েছিল 'চলচ্চিত্র' নামক প্রবন্ধ। ১৩৩৬ বঙ্গাব্দের পৌষ সংখ্যাটিই কল্লোলের শেষ সংখ্যা (৮১তম সংখ্যা) ছিল।
উল্লেখ্য, অর্থাভাবে পত্রিকটি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
তিনি ব্রহ্মানন্দ কেশবচন্দ্র সেনের বাসভবন 'কমল কুটীরে' কেশবচন্দ্র-রচিত 'নব বৃন্দাবন' নাটকের অভিনয়
করেন। ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি নিউ থিয়েটার্সের
অন্যতম ডিরেক্টর হিসাবে পরিচালক মণ্ডলীতে যোগদান করেন।
১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দের আগষ্ট মাসে মুক্তিপ্রাপ্ত হেমচন্দ্র চন্দ্র পরিচালিত 'প্রতিশ্রুতি' ছায়াছবিতে অভিনয়ের কাজ শেষ
করার পর অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর ডিউডোনাল আলসারে আক্রান্ত হয়ে, আলিপুরের দিদির
বাড়িতে থাকা শুরু করেন। এই রোগে
১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দের ১২ মে মৃত্যুবরণ করেন।
দীনেশচন্দ্র দাশের উল্লেখযোগ্য রচনা
- উতঙ্ক। ১৩২৭ বঙ্গাব্দ। (রূপক নাট্য)
- মাটির নেশা। ১৩৩২ বঙ্গাব্দ (গল্পসংগ্রহ)
- ভুঁই চাঁপা । ১৩৩২ বঙ্গাব্দ (গল্পসংগ্রহ)
- কাজের মানুষ’ (ব্যঙ্গ রচনা)