জর্জ
লেমিটর
ইংরেজি :Georges
Lemaître।
বেলজিয়ামের পদার্থ বিজ্ঞানী ও ধর্মযাজক। প্রখ্যাত বিগ ব্যাং সূত্রের জনক।
১৮৯৪ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ জুলাইতে বেলজিয়ামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি Society of Jesus
-এর সেকেন্ডারি স্কুল (Collège
du Sacré-Coeur, Charleroi)
প্রাথমিকভাবে প্রথাগত
লেখাপড়া শেষ করেন। ১৭ বৎসর বয়সে লুভেইনের ক্যাথলিক বিশ্ববিদ্যালয় (Catholic
University of Louvain)
-এ
পুরপ্রকৌশল
বিভাগে
ভর্তি হন। ১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়
তিনি
বেলজিয়ান সেনাবাহিনীতে
গোলন্দাজ কর্মকর্তা হিসাবে যোগদান করেন। এই কারণে তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখাপড়ায়
সাময়িক ব্যাঘাত ঘটে। এই যুদ্ধের শেষে তিনি বেলিজয়ান সেনাবাহিনী থেকে 'ওয়ার ক্রস'
পুরস্কার পান।
যুদ্ধের পরে তিনি পদার্থবিজ্ঞান এবং গণিত নিয়ে নতুন করে লেখাপড়া শুরু করেন। একই
সাথে নিজেকে ধর্মযাজক হিসাবে গড়ে তোলার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে থাকেন। ১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দে অর্ডিনেট ধর্মযাজক হন। এই
বৎসরেই তিনি ক্যাম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সেন্ট এডমুন্ড হাউজ (বর্তমানে
সেন্ট এডমুন্ড কলেজ,
ক্যাম্ব্রিজ)-এ
জ্যোতির্বিজ্ঞানের গ্রাজুয়েড ছাত্র হিসাবে ভর্তি হন। এই সময় আর্থার এডিংটোনের সাথে
সৃষ্টিতত্ত্ব (cosmology),
নক্ষত্রসমূহ গতিপ্রকৃতি
এবং এতদ্সংক্রান্ত
গাণিতিক বিশ্লেষণ নিয়ে কাজ করেন। পরবর্তী কয়েক বৎসর তিনি হার্লো শ্যাপলি'র
সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসে্টস প্রদেশের মিডিডলসেক্স কাউন্টির
ক্যাম্ব্রিজ শহরের 'হার্ভার্ড কলেজ মহাকাশ পর্যবেক্ষণ' কেন্দ্রে গবেষণা করেন। এই
সময়
নীহারিকা নিয়ে কাজ করার জন্য তিনি সুনাম অর্জন করেন। এখানে তিনি বিজ্ঞান বিভাগে
ডক্টরেট লাভ করেন।
১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বেলজিয়ামে ফিরে আসেন। এই সময় লুভেইন বিশ্ববিদ্যালয়ের
খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন। ১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দে মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ
সম্পর্কিত তাঁর বিখ্যাত প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। এই প্রবন্ধের নাম ছিল - 'Un
Univers homogène de masse constante et de rayon croissant rendant compte de la
vitesse radiale des nébuleuses extragalactiques'
(ধ্রুব ভরের সমমাত্রিক মহাবিশ্ব এবং অতিদূরের
নীহারিকার অভিসারী গতির জন্য বৃদ্ধিশীল ব্যাসের গণনা)। এই প্রবন্ধটি বেলজিয়ামের
বাইরে ভাষাগত কারণে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারে নি। ১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দে এই প্রবন্ধটি
ইংরেজিতে অনূদিত হয়। এই বৎসরেই তিনি লুভেইন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হন।
১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দে, এডিংটোন
Monthly Notices of the Royal Astronomical
Society -এতে, লেমিটরের ১৯২৭
খ্রিষ্টাব্দ প্রকাশিত ওই প্রবন্ধের উপর বিস্তারিত আলোচনা করেন এবং তাঁর প্রবন্ধে লেমিটরের
গবেষণা পত্রের উচ্ছসিত
প্রশংসা করেন। ১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দে লেমিটরের প্রবন্ধটি সংক্ষিপ্তাকারে
ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত হয়। এরপর পদার্থবিজ্ঞান এবং আধ্যত্মিক জগতের মধ্যে সম্পর্ক
নিয়ে আলোচনার জন্য ব্রিটিশ এ্যাসোসিয়েশান তাঁকে লণ্ডনে আহ্বান করেন। এখানে তিনি
বলেন যে, মহাবিশ্ব একটি সুনির্দিষ্ট বিন্দু থেকে সম্প্রসারিত হচ্ছে। পরে তিনি তাঁর
ধারণাকে আরও সম্প্রসারিত রূপ দেন এবং তার ন্যাচার পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এই
প্রবন্ধে তিনি জানান যে, একটি বিশালাকার মহাজাগতিক ডিম বিস্ফোরিত হয়ে
মহাবিশ্বসৃষ্টি হয়েছে। পরবর্তী সময়ে এই সূত্রটি 'বিগ ব্যাং সূত্র (Big
Bang theory) নামে খ্যাত হয়েছে। এখন
পর্যন্ত মহাবিশ্বের সৃষ্টি তত্ত্বের ক্ষেত্রে এই
বিগ ব্যাং
সূত্রটি সবচেয়ে বিজ্ঞানসম্মত সূত্র হিসাবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে।
১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দের ভিতরে বিভিন্ন কার্যকারণ
উপলক্ষে, বেশ কয়েকবার জর্জ লেমিটর ও আইনস্টাইনের সাক্ষাৎ হয়। এই সময় উভয়ই বিজ্ঞানের
নানাবিধ বিষয়সহ মহাবিশ্বের সম্প্রাসরণ নিয়ে মত বিনিময় করেন। ১৯৩৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি
মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ নিয়ে বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে একটি প্রবন্ধ রচনা করেন এবং এই
প্রবন্ধটি
Annals of the Scientific Society of
Brussels-তে প্রকাশিত
হয়। ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ মার্চে তিনি বেলজিয়ামের সর্বোচ্চ পুরস্কার
Francqui Prize
পান।
১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দে
Pontifical Academy of Sciences-এর
সদস্য হন। তাঁর সক্রিয় কার্যক্রমের জন্য ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দে এই প্রতিষ্ঠানের সভাপতি
নির্বাচিত হন। এই পদে তিনি তাঁর মৃত্যুকাল পর্যন্ত ছিলেন। ১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি
Royal Academy of Sciences and Arts
of Belgium-র সদস্য
নির্বাচিত হন। ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ
L'Hypothèse de l'Atome
Primitif (The Primeval Atom Hypothesis)
প্রকাশিত হয়।
১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি Royal Astronomical Society কর্তৃক প্রবর্তিত প্রথম Eddington Medal পুরস্কার লাভ করেন।
জীবনের শেষ দিকে তিনি বেশির ভাগ সময় কাটান
গাণিতিক পরীক্ষা নিরীক্ষা নিয়ে গবেষণা করেন। ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি প্রথম
বৈদ্যুতিন কম্পিউটার Burroughs E 101-এর
কার্যক্রম দেখে তিনি এর উন্নয়নে বিশেষভাবে উৎসাহিত হন। এরপর কম্পিউটার প্রোগ্রাম
এবং কম্পিউটার ল্যাঙ্গুয়েজ নিয়ে গবেষণা করেন।
১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দের ২০ জুনে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
সূত্র :
http://en.wikipedia.org/wiki/Georges_Lema%C3%AEtre