বিগব্যাং
[অভিধান: বিগব্যাং]

মহাবিশ্বের সৃষ্টিবিষয়ক এবং বিবর্তন বিষয়ক বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব।  এই তত্ত্ব অনুসারে− প্রায় ১৩৮০ কোটি বৎসর আগে একটি অত্যন্ত ঘন, উৎতপ্ত এবং দশা থেকে মহাবিশ্ব উৎপন্ন হয়েছিল । যা পরবর্তী সময়ে দ্রুত প্রসারিত হয়ে আজকের মহাবিশ্বের রূপ নিয়েছে।

১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দে বেলজিয়ামের পদার্থ  বিজ্ঞানী জর্জ লেমিটর ( Georges Lemaître) প্রথম প্রথম প্রস্তাব করেন যে, মহাবিশ্ব একটি অত্যন্ত ঘন ও উত্তপ্ত আদিম পরমাণু থেকে প্রসারিত হয়ে বর্তমান রূপ নিয়েছে। ১৯২৯ সালে এডুইন পাওয়েল হাবল (Edwin Powell Hubble) গ্যালাক্সিগুলোর লাল-সরণ দেখিয়ে মহাবিশ্বের প্রসারণের প্রমাণ দেন। এর বিস্তারিত ব্যাখ্যার মাধ্যমে এই তত্ত্বকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন জর্জ গ্যামো

বিগ-ব্যং-এর নামকরণ ও বিপরীত ভাবনা
বিগ-ব্যং  অর্থাৎ মহা-বিস্ফোরণ, নামটি প্রথন ব্যঙ্গার্থে ব্যবহার করেছিলেন- ব্রিটিশ জ্যোতির্পদার্থবিদ
 স্যার ফ্রেড হয়েল (Sir Fred Hoyle)

১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ মার্চ  বিবিসি রেডিওতে "The Nature of Things" নামে একটি অনুষ্ঠানে ফ্রেড হয়েল বক্তৃতা দেন। তিনি বিগ ব্যাং মডেলের সমালোচনা করতে গিয়ে বলেন: "This theory relies on a universe that began with a big bang — an idea that seems no less mythical than the creation myths of ancient cultures." (এই তত্ত্বটি এমন এক মহাবিশ্বের উপর নির্ভর করে যা 'বিগ ব্যাং' নামে একটি বিস্ফোরণ দিয়ে শুরু হয়েছিল। যা প্রাচীন সভ্যতার সৃষ্টি পৌরাণিক কাহিনীর চেয়ে কম কাল্পনিক নয়।)

এখানে
 "big bang" শব্দটি তিনি উপহাসের ঢং-এ ব্যবহার করেন। তাঁর মতে এটা যেন একটা বোমার বিস্ফোরণ। তাঁর কাছে বিগব্যং অবৈজ্ঞানিক, পৌরাণিক গল্পের মতো। তাঁর ধারণ মহাবিশ্বের এমন হঠাৎ শুরু থাকতে পারে না। তিনি মনে করতেন, বিগ ব্যাং মডেল পদার্থ সংরক্ষণের নীতি লঙ্ঘন করে । কারণ এর শুরু আগের বিষয় সম্পর্কে কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারে না।

১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দে কসমিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ড রেডিয়েশন (CMB) আবিষ্কারের পর বিগ ব্যাং মডেল প্রমাণিত হয়। শেষপর্যন্ত এই ব্যঙ্গাত্মক নামটি- তত্ত্বগত নাম হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। 

বিগ ব্যাং তত্ত্ব: এই ত্ত্ত্ব
অনুসারে, মহাবিশ্বের শুরু হয়েছিল একটি অতি ঘন এবং অতি উষ্ণ অবস্থা থেকে। এই অবস্থায় সময়, স্থান, পদার্থ এবং শক্তি একটি বিন্দুতে সংকুচিত ছিল। এই বিন্দু থেকে একটি বিস্ফোরণের মাধ্যমে প্রসারিত হওয়া শুরু করে। এই বিস্ফোরণের সূত্রে মহাবিশ্বের সমস্ত পদার্থ, শক্তি, স্থান এবং সময়ের সৃষ্টি করে। এটি কোনো সাধারণ বিস্ফোরণ নয়; এটি ছিল স্থান-কালের নিজস্ব প্রসারণ।

উল্লেখ্য এই সময় কোন স্থান ও কালের অস্তিত্ব ছিল না। অসীম ঘনত্বের এই মহাপরমাণুর ভিতরে বস্তুপুঞ্জের ঘন সন্নিবেশের ফলে এর তাপমাত্রা দাঁড়িয়েছিল- ১০১৮ কেলভিন

মহাবিশ্ব সৃষ্টির জন্মলগ্নকে যদি ০ সময় ধরা যায়, তা হলে, সেই সময়ই বিগব্যাং শুরু এবং শেষ হয়ে গিয়েছিল। এর ফলাফলের বিচারে-  বিগ ব্যাং-এর পরের ১ সেকেন্ডে আনা হয়, এর অনুষঙ্গ হিসেবে। বিগব্যাং-এর পরবর্তী ০-১ সেকেন্ডের মধ্যে যে ঘটনাগুলি ঘটেছিল, বিজ্ঞানীরা তা কালানুক্রমে কয়েকটি অন্তঃযুগে ভাগ করেছেন। ভাগগুলো হলো-

মহাবিশ্ব ফোটন কণায় ভরে গিয়েছিল। এই কারণে লেপ্টন অন্তঃযুগের পরের সময়ের নাম দেওয়া হয়েছে ফোটন অন্তঃযুগ (Photon epoch)। ফোটন অন্তঃযুগ হলো বিগ ব্যাং-এর ১০ সেকেন্ড থেকে ৩.৮ লক্ষ বছরের মধ্যে সেই সময়, যখন আলোর কণা (ফোটন) সবচেয়ে শক্তিশালী ছিল। মহাবিশ্ব ছিল গরম প্লাজমা, আলো আটকে থাকত। শেষে পরমাণু গঠিত হলে আলো মুক্ত হয় 

বিগ ব্যাং-এর প্রমাণ। বিগ ব্যাং তত্ত্বের পক্ষে বেশ কিছু শক্তিশালী প্রমাণ রয়েছে। যেমন:

বিগব্যং-এর পরবর্তী পর্ব- ফোটন অন্তঃযুগ (Photon epoch)। এর বিগব্যাং-এর ১০ সেকেন্ড থেকে ৩৮০,০০০ বৎসর। বর্তমান সময় থেকে এর সময় দূর্ত্ব ১৩৭৯.৯৬২ কোটি বছর।

সূত্র: