নীহারিকা
ইংরেজি :
Nebula
[গ্রিক
nephele,
nephos,
ল্যাটিন
nebula
()শব্দের অর্থ হলো—
কুয়াষা, বাষ্প, ধোঁয়া]।
সূত্র :
Online etymology dictionary।
[early 15c.,
nebule "a cloud, mist," from L. nebula
"mist, vapor, fog, smoke, exhalation," figuratively "darkness, obscurity," from
PIE *nebh- "cloud" (cf. Skt.
nabhas- "vapor, cloud, mists, fog, sky;" Gk.
nephele, nephos "cloud;" Ger.
nebel "fog;" O.E. nifol
"dark, gloomy;" Welsh niwl "cloud, fog;" Slavic
nebo]
সাধারণ অর্থে নীহারিকা হলো মহাকাশীয় মেঘ। এতে থাকে হাইড্রোজেন, হিলিয়াম এবং অন্যান্য আয়নিত গ্যাস। দূর আকাশে যে সকল লক্ষ্যবস্তুকে মেঘের মতো দেখায়, তার সবই নীহারিকা নয়। এই সব নীহারিকার ভিতরে থাকতে পারে গ্যালাক্সির মতো বিশাল কোনো মহাকাশীয় উপাদান। যেমন– অনেক আগে এ্যান্ড্রোমিডা নামে যে নীহারিকা চিহ্নিত করা হয়েছিল, বিজ্ঞানী এডউইন হাবল তার ভিতরে একটি গ্যালাক্সি আবিষ্কার করেন। হাবলের নব আবিষ্কৃত গ্যালাক্সির নাম রাখা হয় এ্যান্ড্রোমিডা। এর ফলে বর্তমানে অখণ্ড এ্যান্ড্রোমিডা নীহারিকা থেকে এ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সিকে পৃথকভাবে বিচার করা হয়ে থাকে।
ঈগল নীহারিকা-র Pillars of Creation |
নীহারিকাকে বলা যায়
নক্ষত্রের সূতিকাগার। বহু নীহারিকাতে দূর অতীতে নক্ষত্রের জন্ম হয়েছে
আবার এখনও কোনো নীহারিকাতে নক্ষত্র তৈরির প্রক্রিয়া চলছে। এই জাতীয় একটি নীহারিকা
হলো ঈগল নীহারিকা (Eagle Nebula)।
এই নীহারিকার মেঘস্তম্ভকে নক্ষত্র সৃষ্টির আধার হিসাবে বিবেচনা করা হয়। নাসার
বিজ্ঞানীরা এর নাম দিয়েছেন "Pillars
of Creation"। ঈগল নীহারিকার এই অঞ্চলে
গ্যাস, মহাকাশীয় ধূলা এবং অন্যান্য উপাদান জমাট বেঁধে একটি ভারি পিণ্ডের সৃষ্ট
করেছে। এই পিণ্ড ঘূর্ণায়মান অবস্থায় আশপাশের আরও বহু বস্তুকে আকর্ষণ করে আরই বড়
আকার ধারণ করছে। ধারণা করা হয়, এই জমাটবদ্ধ বস্তু পিণ্ড থেকে এক সময় বহু
নক্ষত্রের জন্ম হবে। এই সূত্রে এই নীহারিকায় এক সময় জন্ম নেবে গ্রহ উপগ্রহ
ধূমকেতুর মতো নানা ধরনের মহাকাশীয় উপকরণ।
১৫০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে ক্লাউডিয়াস টলেমিয়াস (টলেমি) (Claudius
Ptolemaeus (Ptolemy)) তাঁর আলমাগেস্ট (Almagest)
গ্রন্থের ৭ম-৮ম খণ্ডে পাঁচটি তারার কথা লিপিবদ্ধ করেছিলেন। এগুলো উপস্থাপিত হয়েছিল
নীহারিকা হিসাবে। তিনি সপ্তর্ষিমণ্ডল
(Ursa Major)
এবং সিংহ (Leo)
রাশির মধ্যবর্তী স্থানে একটি নীহারিকার কথা উল্লেখ করেছিলেন। এই অংশটুকু কোনো তারার
সাথে সম্পর্ক নেই এ কথাও তিনি উল্লেখ করেছিলেন।
প্রকৃত নীহারিকার কথা পাওয়া যায় আরবীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানী আব্দেল রাহমান আল সুফির
বর্ণনা থেকে। তিনি কিছু স্বতন্ত্র নক্ষত্রগুচ্ছকে নীহারিকা হিসাবে বিবেচনা
করেছিলেন। তিনি এ্যান্ড্রোমিডা গ্যালক্সি বরাবর ছোটি মেঘের অস্তিত্বের কথা উল্লেখ
করেছিলেন। তিনি ওমিক্রোন ভেলোরাম (Omicron
Velorum) নক্ষত্রগুচ্ছ এবং ব্রোচ্ছি'র
ক্লাস্টারকে নীহারিকা ধর্মী নক্ষত্র হিসাবে উল্লেখ করেছিলেন।
১০৫৪ খ্রিষ্টাব্দে অতি নবতারা
(supernova) থেকে ক্র্যাব নীহারিকা
(Crab Nebula)
তৈরি হওয়ার প্রক্রিয়াটি পর্যবেক্ষণ করেছিলেন
চীনা এবং আরবীয় জ্যোতির্বজ্ঞানীরা। ১৭৪৬ খ্রিষ্টাব্দে পূর্বে আবিষ্কৃত হয় নি, এমন
৮টি নীহারিকা-সহ মোট ২০টি নীহারিকার তালিকা প্রস্তুত করেন। ১৭৫১-৫৩ খ্রিষ্টাব্দ
পর্যন্ত আফ্রিকার উত্তমাশা অন্তরীপ
(Cape of Good Hope)
আকাশ পর্যবেক্ষণের পর মোট ৪২টি নীহারিকার নাম লিপিবদ্ধ করেন। উল্লেখ্য এর অধিকাংশই
ছিল তাঁর আবিষ্কৃত।
১৭৮১ খ্রিষ্টাব্দে চার্লস মেসিয়ের
(Charles Messier) ১০৩টি নীহারিকার নাম
লিপিবদ্ধ করেন। এদেরকে বলা হয় মেসোয়ের-এর লক্ষ্যবস্তুসমূহ
(Messier objects)।
মেসোয়ের-এর লক্ষ্যবস্তুসমূহের অনেকগুলোই বর্তমানে গ্যালাক্সি হিসাবে বিবেচনা করা
হয়ে থাকে।
বিজ্ঞানী উইলিয়াম হার্সেল (William
Herschel) এবং তাঁর বোন ক্যারোলিন
হার্সেল (Caroline Herschel)
আরও বহু নীহারিকাকে তালিকাভুক্ত করেন। ১৭৮৬
খ্রিষ্টাব্দে তাঁরা একটি তালিকা প্রকাশ করেন। এই তালিকায় ছিল এক হাজার নতুন
নীহারিকা এবং নক্ষত্রগুচ্ছ। পরে এই তালিকার দ্বিতীয় সংস্করণ ১৭৮৯ খ্রিষ্টাব্দে এবং
তৃতীয় সংস্করণ ১৮০২ খ্রিষ্টাব্দে
প্রকাশিত হয়। ১৭৯০ খ্রিষ্টাব্দে নীহারিকা পরিবেষ্টিত একটি তারকা আবিষ্কার করেন।
১৮৬৪ খ্রিষ্টাব্দের শুরুর দিকে উইলিয়াম হাগ্গিন্স (William
Huggins) প্রায় ৭০ট নীহারিকার
বর্ণালী পরীক্ষা করেন। তিনি তাঁর দেখা নীহারিকার এক তৃতীয়াংশকে দেখতে পান নিষ্প্রভ
মেঘ হিসাবে। কারণ এই সকল নীহারিকার জমাটবদ্ধ উপাদান আলোক তরঙ্গ শোষণ করে নিচ্ছে।
বাকি নীহারিকাকেগুলোকে আকাশে আলোকিত বা উজ্জ্বল অবস্থায় দেখতে পান। এই সকল উজ্জ্বল
নীহারিকার অভ্যন্তরে তারকাগুচ্ছ আছে, এবং ওই তারকাসমূহের কারণেই এই নীহারিকাগুলো
উজ্জ্বল দেখায়। ১৯১২ খ্রিষ্টাব্দে এরূপ আলোকিত নীহারিকাগুলোকে পৃথক শ্রেণিতে ভাগ
করা হয়। ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দে বিজ্ঞানী হাবল ঘোষণা দেন যে, প্রায় সকল নীহারিকার সাথেই
বহসংখ্যক নক্ষত্র আছে। আর সেই কারণেই এদের আলোকিত অবস্থায় দেখা যায়। এই সকল
নীহারিকাতেই অন্তত
নীলাভ-সাদা বর্ণের বড় নক্ষত্র বা প্রধান ধারার নক্ষত্রের মতো বহু নক্ষত্র আছে।
নীহারিকার শ্রেণি বিভাজন
রাতের আকাশে পৃথিবী থেকে বা মহাকাশীয় দূরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে নীহারিকাগুলো যে
ভাবে দেখা যায়, তার ভিত্তিতে কিছু বৈশিষ্ট্যকে বিবেচনা করে নীহারিকার প্রকৃতি
নির্ধারণ করা হয়েছে। যেমন—
পরিব্যাপ্ত নীহারিকা (Diffuse
nebula)
অধিকাংশ নীহারিকাই পরিব্যাপ্ত
শ্রেণিভুক্ত করা হয়েছে। এই জাতীয় নীহারিকার উপাদানগুলো বেশ বিস্তৃত অবস্থায় ছড়ানো
থাকে। এদের কোনো সুনির্দিষ্ট সীমানা থাকে না। এই জাতীয় নীহারিকা থেকে আগত দৃশ্যমান
আলোর বিচারে নীহারিকাগুলোকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা হয়। ভাগ দুটি হলো — বিকিরিত নীহারিকা
(emission nebula)
ও প্রতিফলিত নীহারিকা (reflection
nebula)।
বিকিরিত নীহারিক ngc60 |
বিকিরিত নীহারিকা
(emission nebula)
এই জাতীয় নীহারিকার আয়নিত গ্যাস
থেকে (অধিকাংশ ক্ষেত্রে আয়নিত হাইড্রোজেন গ্যাস) বিকিরিত আলো নীহারিকাকে উজ্জ্বল
করে রাখে। এদেরকে অনেক HII
(আয়োনিত হাইড্রোজেন)
সময় বলা হয়। যেমন-
এম৪২,
এম৪৩
প্রতিফলিত নীহারিকা ওমেগা (Omega) |
প্রতিফলিত নীহারিকা (reflection
nebula)
এই জাতীয় নীহারিকার উপাদানসমূহ নিজে
কোনো আলো উৎপন্ন করে না। বরং নীহারিকার অভ্যন্তরের নক্ষত্রসমূহ নীহারিকার
উপাদানসমূহে পতিত হয় এবং ওই আলো নীহারিকার উপাদানসমূহ দ্বারা প্রতিফলিত
হয়ে পর্যবেক্ষকের কাছে দৃশ্যমান হয়ে উঠে। এই জাতীয় নীহারিকায়
হাইড্রোজেনের অণু থাকে। এই কারণে একে অনেক সময় আণবিক মেঘ (Molecular
cloud) বলা হয়।
এই আণবিক মেঘমণ্ডলে রয়েছে,
কালপুরুষ নক্ষত্রের
NGC 1990
এবং
এম৭৮ একটি নীহারিকা।
অন্ধ-নীহারিকা 'অশ্বমুণ্ড' |
অনেক সময় নীহারিকার গভীরে অবস্থিত নক্ষত্রের আলো নীহারিকার বাইরের অংশ আয়োনিত দশায় আলো দ্বারা উজ্জীবিত হয় না বা অন্যা কোনো নক্ষত্রের আলোকে প্রতিফলিত করে না। তখন এই জাতীয় নীহারিকার চারপাশের আলোর আভা দেখা যায় কিন্তু মূল নীহারিকাকে কালো দেখায়। এই জাতীয় নীহারিকাকে অন্ধ-নীহারিকা (dark nebulae) বলা হয়।
গ্রহান্বিত নীহারিকা 'বিড়ালাক্ষি' |
গ্রহান্বিত নীহারিকা
(Planetary
nebula)
এই জাতীয় নীহারিকার একটি গ্যাসীয়
খোলস থাকে। এর ভিতরে
শ্বেত বামন তারা
(white
dwarf star)
থাকে। এই তারা থেকে আগত আলো, গ্যাসীয় খোলসকে উজ্জ্বল করে রাখে। মূলত শ্বেত বামন
নক্ষত্রকে ঘিরে একটি বিশাল মহাকাশীয় মেঘমালা আবদ্ধ হয়ে থাকে এবং নক্ষত্রকে কেন্দ্র
করে ঘুরতে থাকে। এই অবস্থায় শ্বেত বামন তারা আলো ওই মেঘকে আলোকিত করে এবং মেঘমালায়
নানা রকম বর্ণের সৃষ্টি করে। এই জাতীয় নীহারিকা দেখা যায় নক্ষত্র উৎপন্ন হওয়ার
উপযোগী মহাকাশীয় মেঘমালায়। আয়োনিত হাইড্রোজেন থাকায় এদের প্রকৃতি হয় অনেকটা বিকিরিত
নীহারিকার মতো। ধারণা করা হয়, আমাদের সূর্য এক সময় গ্রহান্বিত নীহারিকায় পরিণত হবে।
প্রাক্-গ্রহান্বিত নীহারিকা PIA04533 |
প্রাক্-গ্রহান্বিত নীহারিকা (Protoplanetary
nebula)
কোনো প্রধান ধারার নক্ষত্র যখন ক্রম
বিবর্তনের মধ্য দিয়ে শ্বেত বামনে পরিণত হয়, তখন যে অন্তর্বর্তী সময়ে এই জাতীয়
নীহারিকার সৃষ্টি হয়। যখন কোনো নক্ষত্র তার জীবনকাল শেষ করে, তখন নক্ষত্র প্রচুর
পরিমাণ ভর হারায়। এর ফলে নক্ষত্রের বাইরের হাইড্রোজেন খোলস হাল্কা হয়ে যায়। একসময়
এই নক্ষত্র হাইড্রোজোনের খোলস মুক্ত হয়ে নগ্ন হয়ে যায়। এই অবস্থায় নক্ষত্রকে ঘিরে
হাইড্রোজনের হাল্কা কুয়াশা থেকে যায়। নক্ষত্রের এই দশাতে দূর থেকে কুয়াশাঘন আবরণের
ভিতর দিয়ে নক্ষত্রকে রঙিন দেখায়। নক্ষত্রের দশাকেই প্রাক্-গ্রহান্বিত নীহারিকা বলা
হয়।
কতিপয় উল্লেখযোগ্য নীহারিকার তালিকা
এম৪২
এম৪৩
এম৭৮
সূত্র:
তারা পরিচিত। মোহাম্মদ আব্দুল
জব্বার। বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল এসোসিয়েশান। ফেব্রুয়ারি ১৯৯৪
বাংলা একাডেমী বিজ্ঞান বিশ্বকোষ। ১-৫ খণ্ড।
http://en.wikipedia.org/wiki/
contemporary Astronomy/ Jay M. Pasachoff।
2nd edition
A
Brief history of time /
Stephen Hawking
Essays about Univesre/Boris A. Vorontrov-Vel'Yaminov/Mir
Pulishers Moscow/1985