গ্যালাক্সি
বানান বিশ্লেষণ:
গ্+য্+আ+ল্+আ+ক্+স্+ই।
উচ্চারণ:
gæ.lak.si
(গ্যা.লাক্.সি)
শব্দ-উৎস:
গ্রিক
galaxias
(kuklos=দুগ্ধবৃত্ত)>ফরাসি
Galaxy>ইংরেজি
galaxy
>বাংলা
গ্যালাক্সি।
পদ :
১. অধীনস্থ গ্যালাক্সি : গ্যালাক্সিগুলো তৈরি হওয়ার সময়, কিছু গ্যালাক্সি একটি সুনির্দিষ্ট এলাকায় এককভাবে বিন্যস্ত হয়েছিল। এই সকল গ্যালাক্সির কাছাকাছি অন্য কোন গ্যালাক্সি না থাকায়, এরা একাকী নিজেদের রাজত্ব রক্ষা করতে সমর্থ হয়েছিল। কিন্তু এই জাতীয় গ্যালাক্সি সত্যিকার অর্থে স্বাধীন কিনা তা মহাকাশের সার্বিক চিত্র মানুষের কাছে যতদিন প্রকাশ না পায়, ততদিন সুনিশ্চিতভাবে বলা মুসকিল। কারণ, এর আগে কোন কোন গ্যালাক্সিকে স্বাধীন মনে করা হলেও, পরে দেখা গেছে এরা অন্য কোন গ্যালাক্সির উপ-গ্যালাক্সি মাত্র।
অন্যদিকে মহাকাশের অল্প দূরত্বের মধ্যে যখন একাধিক গ্যালাক্সি তৈরি হয়েছিল, তখন তারা পরস্পরের সাথে মহাকর্ষীয় আকর্ষণে বাধা পড়ে গিয়েছিল। এক্ষেত্রে একটি গ্যালাক্সির ভিতরে অপরটি ঢুকে না পরে- একটি অপরটির অধীনস্ত হয়ে পড়েছিল। স্বাভাবিকভাবে যে গ্যালাক্সিটির ভর এবং মহাকর্ষীয় শক্তি অধিকতর প্রবল ছিল, তাকে কেন্দ্র করে অল্প ভরবিশিষ্ট ও অল্প মহাকর্ষীয় শক্তির গ্যালাক্সি আবর্তিত হতে শুরু করেছিল। এক্ষেত্রে আমরা সূর্য এবং এর গ্রহগুলোর ভিতরে যে আবর্তনের সম্পর্ক লক্ষ্য করি, গ্যালাক্সি কেন্দ্রিক গ্যালক্সির আবর্তনের সম্পর্কও সে রকমই লক্ষ্য করবো।
এইভাবে বিভিন্ন সংখ্যক গ্যালাক্সি মহাকাশে মহাকর্ষীয় শক্তির দ্বারা ছোট-বড় দল গঠন করতে পারে। এই দলগঠনের সবচেয়ে ছোট দলকে বলা হয় স্থানীয় দল (Local Group)। সাধারণত ৩০-৫০টি গ্যালাক্সি মিলিত হয়ে একটি লোকাল গ্রুপ তৈরি হয়। আমাদের গ্যালাক্সি (ছায়াপথ), এ্যান্ড্রোমিডা, এম১১০ ইত্যাদি এরূপ একটি স্থানীয় দল অন্তর্গত।
স্থানীয় দলের তালিকা : এম৮১ ।
আবার বেশকিছু লোকাল গ্রুপে মিলে অনেক বড় এককের সৃষ্টি করে। একে বলা হয় গ্যালাক্সিগুচ্ছ (cluster)। একটি গ্যালাক্সিগুচ্ছে গ্যালাক্সি সংখ্যা থাকে প্রায় সহস্রাধিক। এরূপ দশহাজার গ্যালাক্সি নিয়ে যে গ্যালাক্সিগুচ্ছ তৈরি হয়, তাকে বলা হয়- অতি-গ্যালাক্সিগুচ্ছ (Supercluster)। এরূপ একটি অতি-গ্যালাক্সিগুচ্ছ হলো কন্যা অতি-গ্যালাক্সিগুচ্ছ (Virgo Supercluster)
২. নক্ষত্র ও নক্ষত্রগুচ্ছ (star cluster) : গ্যালাক্সিতে রয়েছে বিভিন্ন প্রকৃতির অসংখ্য নক্ষত্র (star)। একটি ছোটমাপের গ্যালাক্সিতে প্রায় ১০,০০০ নক্ষত্র থাকে। পক্ষান্তরে একটি বড় ধরনের গ্যালাক্সিতে নক্ষত্রের সংখ্যা দাঁড়ায় ৩,০০০,০০০,০০০,০০০। আমাদের সৌরজগতের মতো অসংখ্য সৌরজগত প্রতিটি গ্যালাক্সিতে রয়েছে। গ্যালাক্সির ভিতরে নক্ষত্রগুলো এককভাবে বা গুচ্ছবদ্ধভাবে থাকতে পারে। বিজ্ঞানীরা গুচ্ছবদ্ধ নক্ষত্রসমূহকে নক্ষত্রগুচ্ছ (star cluster) হিসাবে বিবেচনা করেছেন। দূর থেকে দেখলে, এদেরকে গুচ্ছবদ্ধ বলে মনে হয়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে নক্ষত্রগুচ্ছের নক্ষত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে বহু অলোকবর্ষের ব্যবধান।
৩. গ্যালাক্সি-অধীনস্থ বস্তুপুঞ্জ (interstellar matter) : গ্যালক্সির ভিতরে বিভিন্ন প্রকৃতির অসংখ্য নক্ষত্র ছাড়াও রয়েছে বিপুল পরিমাণ হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম গ্যাস ও ভারি বস্তুকণা। এই জাতীয় বস্তুগুলো গ্যালাক্সির ভিতরে ভাসমান অবস্থায় রয়েছে। গ্যালাক্সির ভিতরের এই জাতীয় বস্তুগুলোকেই বলা হয়-গ্যালাক্সি-অধীনস্থ বস্তুপুঞ্জ। মূলত গ্যালাক্সি-অধীনস্থ বস্তুপুঞ্জের ৯৯% ভাগই গ্যাসীয় উপকরণ। অবশিষ্ট ১% থাকে মহাকাশীয় ধূলিকণা বা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মহাকাশীয় কঠিন বস্তু। অনিয়ন্ত্রিত গ্যালাক্সি ছাড়া অন্য সকল ধরনের গ্যালাক্সিতে এই বস্তুপুঞ্জে নিউক্লিয়াসকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়।
গ্যালাক্সির
আকার : মহাকাশে বিভিন্ন আকৃতি বা বৈশিষ্ট্যের গ্যালাক্সি দেখতে পাওয়া যায়।
বিজ্ঞানী হাবল,
কুণ্ডলিত
গ্যালাক্সিগুলোর প্রকৃতি বিশ্লেষণ করে শ্রেণী বিন্যাস করেছিলেন।
এই বিন্যাস হাবল স্কিম (Hubble
scheme)
নামে পরিচিত।
এখন পর্যন্ত সামান্য কিছু
পরিবর্তন ছাড়া এই শ্রেণী বিভাজনকেই অনুসরণ করা হয়ে থাকে।
প্রথম দিকে হাবল
গ্যালাক্সিগুলোকে প্রধান দুটি ভাগে ভাগ করেছিলেন।
এই ভাগ দুটো হলো-
উপবৃত্তাকার এবং কুণ্ডলিত।
পরে এর সাথে অনিয়মিত
নামে অপর এক শ্রেণীর গ্যালাক্সি যুক্ত করেন।
এছাড়া হাবল উপবৃত্তাকার
ও কুণ্ডলিত গ্যালাক্সির মধ্যবর্তী আরও একটি শ্রেণীর গ্যালাক্সির কথা বলেছিলেন।
এই শ্রেণীর গ্যালাক্সিকে
বর্তমানে বলা হয় লেন্সধর্মী গ্যালাক্সি (lenticular
galaxy)
সব মিলিয়ে আমরা গ্যালাক্সির যে
প্রাথমিক শ্রেণীবিভাজন পাই,
তা হলো- উপবৃত্তাকার (Elliptical),
কুণ্ডলিত
(Spira),
লেন্সধর্মী গ্যালাক্সি (lenticular
galaxy)
ও অনিয়মিত (Irregular)
।
১. উপবৃত্তাকার (Elliptical) : এই জাতীয় গ্যালাক্সি দেখতে অনেকটা ডিমের মত। ধারণা করা হয়, এই জাতীয় গ্যালাক্সির ভিতরে প্রচুর পরিমাণে আন্তঃগ্যালাক্সি বস্তুপুঞ্জ (interstellar matter) থাকে না। দূর থেকে এদেরকে হলুদাভ-লাল বর্ণের মনে হয়। উপবৃত্তাকার গ্যালাক্সির রয়েছে উপবৃত্তাকার উজ্জ্বল কেন্দ্রীয় অংশ। হাবল একে মোট ৭টি ভাগে ভাগ করেছেন। এই ভাগগুলো হলো- E0 (বৃত্তাকার) থেকে E7 (সিগারেটের মতো)। এই উপবৃত্তাকারের প্রকৃতিকে যে গাণিতিক বিধি দ্বারা নির্দেশিত করা হয়েছে, তা হলো- 10(a-b)/a । এখানে a হলো প্রধান অক্ষ ও b হলো গৌণ অক্ষ। তবে হাবলের এই শ্রেণী বিভাজন থেকে উপবৃত্তাকার এই গ্যালাক্সিগুলোর প্রকৃত আকার জানা যায় না। উদাহরণ হিসাবে পাশের চিত্রে Virgo cluster-এর অন্তর্গত গ্যালাক্সি M87 (E0 শ্রেণীর) দেখানো হলো। | ||||
২ . কুণ্ডলিত (Spiral)) : এই জাতীয় গ্যালাক্সির একটি কেন্দ্র থাকে। এই কেন্দ্র থেকে এক বা একাধিক বাহু নির্গত হয়ে কেন্দ্রকে আবর্তন করে কুণ্ডালাকারে ছড়িয়ে পড়ে। পারস্যের একজন জ্যোতির্বিজ্ঞানী আল-সুফি (al-Sufi) প্রথম কুণ্ডলিত গ্যালাক্সি সম্পর্কে বর্ণনা করেন। আধুনিককালে হাবলের শ্রেণীবিভাজনের সাথে আরও কিছু অতিরিক্ত তথ্য যুক্ত করা হয়েছে।
|
||||
দণ্ডভিত্তিক বিভাজন SA কুণ্ডলিত গ্যালাক্সি : এই জাতীয় কুণ্ডলিত গ্যালাক্সির কেন্দ্রীয় অংশ দণ্ডের মতো দেখায় না। SB কুণ্ডলিত গ্যালাক্সি : এই জাতীয় কুণ্ডলিত গ্যালাক্সির কেন্দ্রীয় অংশ দণ্ডের মতো দেখায়। SAB কুণ্ডলিত গ্যালাক্সি : এই জাতীয় কুণ্ডলিত গ্যালাক্সির কেন্দ্রীয় অংশ দুর্বল দণ্ডের মতো দেখায়। বলয়ভিত্তিক বিভাজন r কুণ্ডলিত গ্যালাক্সি : এই জাতীয় কুণ্ডলিত গ্যালাক্সিতে বলয় থাকে। rs কুণ্ডলিত গ্যালাক্সি : এই জাতীয় কুণ্ডলিত গ্যালাক্সিতে বলয় থাকে না। কুণ্ডলিত
বাহুভিত্তিক বিভাজন |
||||
৩ . লেন্সধর্মী গ্যালাক্সি (lenticular galaxy) : কিছু কিছু গ্যালাক্সির কেন্দ্রীয় অংশ ঠিক ডিস্কের মতো না হয়ে অনেকটা উভোত্তল লেন্সের মতো হয় এবং এদের কোন কুণ্ডলিত বাহু থাকে না। এই সকল গ্যালাক্সিকে লেন্সধর্মী গ্যালাক্সি (lenticular galaxy) বলা হয়। এর শ্রেণী প্রতীক হলো- S0। যেমন M84, M85, NGC 5866 ইত্যাদি। ধারণা করা হয়, এই গ্যালাক্সিতে মুক্ত গ্যাস বা ধূলীকণা প্রায় নেই বললেই চলে। এই গ্যালাক্সির অধিকাংশ নক্ষত্র প্রাচীন। অধিকাংশ নক্ষত্রের বয়স ১০১০ বৎসর। দূর থেকে এদেরকে লাল রঙের দেখায়। পাশের চিত্রে NGC 5866এর ছবি দেখানো হলো।শ্রেণিবিভাজন : SA0 লেন্সধর্মী গ্যালাক্সি: এই গ্যালাক্সির কেন্দ্রীয় অংশ দণ্ডের মতো দেখায় না। SB0 লেন্সধর্মী গ্যালাক্সি: এই গ্যালাক্সির কেন্দ্রীয় অংশ দণ্ডের মতো দেখায়।
বিজ্ঞানীরা এই জাতীয়
গ্যালাক্সিকে দুটি ভাগে ভাগ করেছেন।
এই ভাগ দুটি হলো-
Irr I
এবং
Irr II
। |
||||
ক।
Irr I
অনিয়মিত গ্যালাক্সি : এই জাতীয় অনিয়মিত গ্যালাক্সিগুলোকে দূর
থেকে দণ্ডের মতো মনে হয়। এই গ্যালাক্সিগুলোতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ
গ্যালাক্সি-অধীনস্থ বস্তু। এতে কখনো কখনো অতিরিক্ত বাহু দেখা যায়, তবে তা
কুণ্ডলিত গ্যালাক্সির বাহুগুলোর মতো কেন্দ্র
দ্বারা নিয়ন্ত্রিত গতিপ্রাপ্ত হয় না। দূর থেকে এই গ্যালাক্সিগুলোকে
নীল বর্ণের মনে হয়। পাশের চিত্রে এই গ্যালাক্সির নমুনা
হিসাবে
LMC-Irr I
দেখানো হলো। খ। Irr II অনিয়মিত গ্যালাক্সি : এই জাতীয় গ্যালাক্সিগুলো অধিকতর ছড়ানো মনে হয়। গ্যালাক্সির মাঝে কৃষ্ণবস্তুর আস্তরণ দেখা যায়। দূর থেকে এদের রঙ নীলাভ-সাদা দেখায়। |
গ্যালাক্সি তালিকা
এম৮১
এম৮১
স্থানীয় দল
এম৮২
এম৮৬
এম৮৭
এম১০১
এম ১০২
এনজিসি ২৭৭০
এ্যান্ড্রোমিডা
ছায়াপথ