ছায়াপথ
ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা {|
নক্ষত্রমণ্ডল  | মহাকাশীয় বস্তু | প্রাকৃতিক লক্ষ্যবস্তু | এককঅংশ  | দৈহিক-লক্ষ্যবস্তু | দৈহিক সত্তা | সত্তা |}
 

মহাকাশের অসংখ্য গ্যালাক্সির একটি। এটি একটি কুণ্ডলিত গ্যালাক্সি (Sb বা SBb কুণ্ডলিত গ্যালাক্সি)। পৃথিবী থেকে রাতের আকাশে এই গ্যালাক্সিকে আলোর ফিতার মতো মনে হয়। বাংলাতে এর সমার্থক অন্যন্য নাম- অজবীথি, অজবীথিকা, অজবীথী, অমরমার্গ, আকাশগঙ্গা, আকাশসরিৎ, ছায়াপথ, দুধপথ, দুগ্ধসরণি, দেবযান, দ্বীপবিশ্ব, হরিতালিকা, হরিতালী, হারাবলী।
ইংরেজি :
Milky Way, Milky Way Galaxy, Milky Way System
 

গ্রিক পুরাণে ছায়াপথ তৈরির একটি গল্প আছে। দেবরাজ জিউস রাজা এ্যাম্ফিট্রায়োনের পত্নী এ্যাল্ক্‌মেনের রূপে মুগ্ধ হয়ে, সঙ্গোপনে তাঁর সাথে মিলিত হন। এর ফলে এ্যাল্ক্‌মেনে গর্ভবতী হন। যথাসময়ে  এ্যাল্ক্‌মেনে একটি পুত্র সন্তান প্রসব করেন এবং ‌এই পুত্রের নাম রাখেন হেরাক্লেজ (রোমান নাম হার্কিউলস)। এ্যাল্ক্‌মেনে তাঁর এই সন্তানের অমঙ্গলের আশংকায় অস্থির হয়ে উঠেন। কারণ জিউসের স্ত্রী হেরা এই পুত্র সন্তানের কথা জানতে পারলে হেরাক্লেজ-এর ক্ষতি করার চেষ্টা করবেন। এই সে কারণে তিনি হেরাক্লেজ-এর জন্মের পরপরই তাকে উন্মুক্ত প্রান্তরে রেখে আসেন। কারণ, এ্যাল্ক্‌মেনের বিশ্বাস ছিল যে, জিউস তাঁর সন্তানকে রক্ষা করবেন। ঘটনাক্রমে কিছুক্ষণ পর হেরা এবং  এথেনা ওই প্রান্তর অতিক্রম করার সময় এই শিশুটিকে দেখতে পান। মাতৃস্নেহে হের এই শিশুটির স্তন্যদান করতে থাকেন। কিন্তু শিশু হেরাক্লেজ এত জোরে স্তনপান করতে থাকেন যে, হের ব্যথাতুর ও বিরক্ত হয়ে স্তন ফিরিয়ে নেন। এর ফলে কিছুটা দুধ ছিটকে বাইরে পড়ে। গ্রিক পৌরাণিক কাহিনিতে- বলা হয়, হেরর এই ছিটকে পড়া দুধ থেকে আকাশের ছায়াপথ তৈরি হয়।

আদিকাল থেকে এই রাতের আকাশে সাদাটে পথকে মানুষ নানা নামে চিহ্নিত করেছেন। ১৬১০ খ্রিষ্টাব্দে এই গ্যালাক্সি সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা দিয়েছিলেন
গ্যালিলিও গ্যালিলাই। ১৭৮০ খ্রিষ্টাব্দে ফরাসি জ্যোতির্বিজ্ঞানী চার্লস মেসিয়ার ছায়াপথ-সহ ৩২টি গ্যালাক্সি অন্তর্ভুক্ত করেন। ১৭৮৫ খ্রিষ্টাব্দে ইংরেজ জ্যোতির্বিজ্ঞানী স্যার উইলিয়াম হার্শেল প্রথম ছায়াপথের আকৃতি সম্বন্ধে একটি ধারণা দেয়ার চেষ্টা করেন, এর জন্য তিনি আকাশের বিভিন্ন অঞ্চলে দৃশ্যমান তারার সংখ্যা গণনা করেন।

১৯২০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল, মহাবিশ্বের সকল গ্রহ-নক্ষত্র
এই গ্যালাক্সিই রয়েছে। এরপর ধীরে বিজ্ঞানীরা ধারণা করতে শুরু করেন যে, ছায়াপথের বাইরে অন্যান্য গ্যালাক্সিতে অসংখ্য নক্ষত্র রয়েছে।

১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দে এডুইন পাওয়েল হাবল এ্যান্ড্রোমিডা নীহারিকা এবং ত্রিকোণমণ্ডলের ভিতরে বিষম তারা আবিষ্কার করেন। ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দে এ্যান্ড্রোমিডা নীহারিকার ভিতরে তিনি ১২টি বিষম তারা আবিষ্কার করেন। তিনি বলেন এ্যান্ড্রোমিডা নীহারিকা পৃথিবীর ছায়াপথের বাইরে এবং পৃথিবী থেকে অনেক দূরে অবস্থিত। তাঁর এই সকল আবিষ্কার প্রথম প্রকাশিত হয় নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকার ২৩ নভেম্বর সংখ্যায়। অবশ্য সে সময় অনেক জ্যোতির্বিজ্ঞানী তাঁর মতামতের সাথে একমত হতে পারেন নি।

এখন পর্যন্ত জানা গেছে যে এই ছায়াপথ লানিয়াকি নামক প্রধান মহা-গ্যালাক্সিগুচ্ছ (Laniakea Supercluster) অধীনে। এই প্রধান মহা-গ্যালাক্সিগুচ্ছের অধীনে রয়েছে চারটি মহা-গ্যালাক্সিগুচ্ছ। এগুলো হলো-

এর ভিতরে ধনু মহা-গ্যালাক্সিগুচ্ছের অধীনে অন্তর্গত ছায়াপথ একটি কুণ্ডলিত গ্যালাক্সি  

প্রায় ১৩৬০ কোটি বৎসর পূর্বে ছায়াপথ জন্মলাভ করেছিল। এর কেন্দ্রে রয়েছে ধনু এ (
Sagittarius A) নক্ষত্রে নিকটবর্তী একটি কৃষ্ণগহ্বর। এই কেন্দ্রটি নিজ অক্ষের উপর প্রতি সেকেণ্ডে ২২০ কিলোমিটার গতিতে আবর্তিত হচ্ছে। কিন্তু ছায়াপথ আবর্তিত হচ্ছে প্রতি সেকেণ্ডে প্রায় ৬০০ কিলোমিটার বেগে।
 

এই গ্যালাক্সিটির  এর নিকটবর্তী গ্যালাক্সি হলো- মৃগব্যাধ বামন গ্যালাক্সি (Canis Major Dwarf, ২০০৩ খ্রিষ্টাব্দে আবিষ্কার হয়েছে)। এর কেন্দ্র থেকে ছায়াপথের দূরত্ব প্রায় ৪২,০০০ আলোকবর্ষ। আর আমাদের সৌরজগৎ থেকে এর দূরত্ব প্রায় ২৫,০০০ আলোকবর্ষ। অবশ্য বিজ্ঞানীরা এই গ্যালাক্সিকে ছায়াপথের একটি দূরবর্তী অংশ হিসাবে বিবেচনা করে থাকেন। এছাড়া ছায়াপথের নিকটবর্তী অপর গ্যালাক্সি হলো এ্যান্ড্রোমিডা (Andromeda Galaxy (M31)। এই গ্যালাক্সিটিও ছায়াপথের সাথে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি দ্বারা আবদ্ধ। এই কারণে উভয় গ্যালাক্সি একটি স্থানীয় দলের (Local Group) অংশ হিসেবে হিসেবে বিবেচনা করা হয়। উল্লেখ্য এই স্থানীয় দলে আছে ছায়াপথ, এ্যান্ড্রোমিডা এবং আরও প্রায় ৩০টি ছোটো বড় গ্যালাক্সি  পৃথিবী থেকে এ্যান্ড্রোমিডার দূরত্ব প্রায় ২,৫০,০০,০০০ আলোকবর্ষ।


ধরনের নক্ষত্র।  এর কেন্দ্র থেকে সৌরজগতের দূরত্ব গড় দূরত্ব ২৭,০০০ আলোকবর্ষ। এই গ্যালাক্সি ভর ৫.৮´১০১১(M) সৌরভর ছায়াপথ ১৩০ কিমি/সে থেকে ১০০০কিমি/সে গতিতে নিজ অক্ষের উপর ঘুরছে।

কুণ্ডলিত এই গ্যালাক্সির মূল বাহু রয়েছে,  পাঁচটি। এই বাহুগুলির নাম হলো-


তথ্যসূত্র :
http://www.universetoday.com/21563/milky-way/
http://www.enchantedlearning.com/subjects/astronomy/
http://en.wikipedia.org/wiki/Milky_Way