হেরাক্লেজ
গ্রিক
Ήρακλης>ইংরেজি Heracles>বাংলা হেরাক্লেজ।
ওই রাত্রিতেই রাজা ফিরে এসে
এ্যাল্ক্মেনের
সাথে মিলিত হলে, তিনি
এ্যাম্ফিট্রায়োন
সন্তানও ধারণ করেন। পরে রাজা
জিউসের সাথে
এ্যাল্ক্মেনের
মিলনের কথা জানতে পারেন।
কিন্তু দেবতার সন্তান গর্ভে ধারণের কারণে,
এ্যাল্ক্মেনের
গর্ব অনুভব করে সন্তান নষ্ট
করলেন না। অপরদিকে রাজাও দেবতার সন্তানকে ক্ষেত্রজ সন্তান হিসাবে পাবেন বলে,
এ্যাম্ফিট্রায়োন তাঁকে সন্তান ধারণ করার জন্য উৎসাহিত করলেন। এর কিছুদিন পর
জিউস
এক
ভবিষ্যৎ বাণীতে ঘোষণা দেন যে, রানীর
গর্ভস্থ তাঁর সন্তান সমগ্র গ্রীসের অধিপতি হবেন।
এ্যাল্ক্মেনের
গর্ভে উভয় সন্তান পূর্ণতা লাভ করে। এদের ভিতরে
জিউস-এর
সন্তান
হেরাক্লেজ
নামে পরিচিত হন এবং
এ্যাম্ফিট্রায়োন
সন্তান
ইফিক্লেজ নামে পরিচিত হন।
উল্লেখ্য,
ইফিক্লেজ পুরোপুরি মরণশীল মানবসন্তান হলেও হেরাক্লেজ ছিলেন অর্ধ-দেবতা।
একই সময়ে একই উদরে ছিলেন বলে- হেরাক্লেজ ও
ইফিক্লেজকে জমজ ভাই হিসাবে বিবেচনা করা
হয়।
পার্সেয়ুসের
পুত্র ছিলেন
আল্কায়েয়াস
আর
আল্কায়েয়াস-এর
পুত্র ছিলেন
এ্যাম্ফিট্রায়োন।
পক্ষান্তরে
পার্সেয়ুসের
অপর পুত্র
ছিলেন স্থেনেলাস (Sthenelus)।
প্রায় একই সময় এ্যাল্ক্মেনে এবং স্থেনেলাসের
স্ত্রী নিসিপ্পে (Nicippe)-ও গর্ভবতী হন।
এই নারীর গর্ভজাত সন্তানদের মধ্যে যাঁর সন্তান আগে জন্মগ্রহণ করবে, সে হবে রাজ্যের
রাজা। স্বাভাবিক নিয়মে এ্যাল্ক্মেনে আগে প্রসব করার কথা। কিন্তু
জিউসের স্ত্রী
হেরা,
জিউসের
এই প্রণয়িনী
এ্যাল্ক্মেনের
সন্তান আগে জন্মগ্রহণ করে সিংহাসন লাভ করুক সেটা
সহ্য করতে পারলেন না। তাই দৈববলে হেরাক্লেজের জন্মের বিলম্ব ঘটালেন।
ফলে, হেরাক্লেজের জন্মের আগেই ইউরিস্থেয়ুসের (Eurystheus) জন্ম হলো। এই কারণে,
এ্যাম্ফিট্রায়োনে মৃত্যুর পর ইউরিস্থেয়ুসের রাজা হন।
এ্যাল্ক্মেনে
হেরার এই বিরুদ্ধাচরণের বিষয় জানতে পেরে, ভীতা হয়ে পড়লেন।
হেরার চক্রান্তে হেরাক্লেজের যাতে কোনো ক্ষতি না হয়, সে কারণে তিনি
হেরাক্লেজের
জন্মের পরপরই উন্মুক্ত প্রান্তরে রেখে আসেন। কারণ,
এ্যাল্ক্মেনের বিশ্বাস ছিল যে,
জিউস
তাঁর সন্তানকে রক্ষা করবেন। ঘটনাক্রমে কিছুক্ষণ পর
হেরা এবং
এথেনা
ওই প্রান্তর অতিক্রম করার সময় এই শিশুটিকে দেখতে পান। মাতৃস্নেহে
হেরা
এই শিশুটির স্তন্যদান করতে থাকেন। কিন্তু শিশু হেরাক্লেজ এত জোরে স্তনপান
করতে থাকেন যে,
হেরা
ব্যথাতুর ও বিরক্ত হয়ে স্তন ফিরিয়ে নেন। এর ফলে কিছুটা দুধ ছিটকে বাইরে
পড়ে। গ্রিক পৌরাণিক কাহিনিতে- বলা হয়,
হেরার এই ছিটকে পড়া দুধ থেকে আকাশের ছায়াপথ তৈরি হয়। এরপর
এথেনা এই সন্তানকে কোলে
তুলে নেন এবং প্রতিপালনের ভার
এ্যাল্ক্মেনের উপর দেন।
অন্যমতে,
হের্মেজ
এই সন্তানকে প্রান্তর থেকে কুড়িয়ে এনে জিউসকে প্রদান করেন। জিউস
এই সন্তানকে হেরার কোলে তুলে দেন। হেরা অপত্যস্নেহে শিশুটিকে স্তনপান করান। শিশু
হেরাক্লেজ এত জোরে স্তনপান করতে থাকেন যে, হেরা বিরক্ত হয়ে স্তন ফিরিয়ে নেন। এর
ফলে কিছুটা দুধ ছিটকে বাইরে পড়ে। গ্রিক পৌরাণিক কাহিনিতে- বলা হয়, হেরার এই ছিটকে
পড়া দুধ থেকে আকাশের ছায়াপথ তৈরি হয়। এরপর এথেনা এই সন্তানকে কোলে তুলে নেন এবং
প্রতিপালনের ভার এ্যাল্ক্মেনের উপর দেন।
হেরাক্লেজ সাপ হত্যা
করছে |
হেরা খুব স্বল্প সময়ের জন্য হলেও এই শিশুটিকে স্তনদান করেছিলেন। এই কারণে হেরা এই শিশুর
দুধমাতা হিসাবে পরিচিতা হন এবং হেরার নামানুসারে তার নাম রাখা হয় হেরাক্লেজ। পরে
হেরা হেরাক্লিজের প্রকৃত পরিচয় জানতে পেরে এর ক্ষতি করার উদ্যোগ নেন। হেরাক্লেজের
বয়স যখন ৮ বা ১০ মাস (কোন কোন মতে ১ বৎসর), তখন হেরা হেরাক্লেজকে হত্যা করা জন্য
দুটো বিষাক্ত সাপ পাঠিয়ে দেন। এই সময় হেরাক্লেজ ও তাঁর যমজ ভাই ইফিক্লেজ একই ঘরে
ঘুমাচ্ছিলেন। হঠাৎ ঘুম ভেঙে
ইফিক্লেজ
সাপ দেখে
চিৎকার করতে থাকলে, হেরাক্লেজ জেগে উঠেন এবং সাপদুটির গলা টিপে হত্যা করলেন।
ইফিক্লেজের চিৎকার শুনে বাড়ির অন্যান্যরা এই ঘরে এসে হেরাক্লিজের এই অলৌকিক
ক্ষমতা দেখে হতবাক হয়ে যান।
হেরাক্লিজে কিছুটা বড় হয়ে উঠলে রাজা
এ্যাম্ফিট্রায়োন
তাঁকে যত্নের সাথে প্রতিপালন করেন। তিনি হেরাক্লেজকে রথ চালনার বিবিধ কৌশল শিক্ষা
দেন। এই সময় তরবারী ও অন্যান্য অস্ত্র চালনা শিক্ষা দেন ক্যাস্টর । এই সময়
মুষ্টিযুদ্ধ শিক্ষা দেন অটোলাইকাস। কারো কারো মতে তিনি মুষ্টিযুদ্ধ শিখেছিলেন
হারাপালাইকাসের কাছে। তিনি তীরচালনা শিখেছিলেন ইউরিটাস
(Eurytus)-এর
কাছে।
ইনি সঙ্গীত শিক্ষা শুরু করেন ইউমোলপাস -এর কাছে। ইনি হেরাক্লেজকে শেখাতেন বীণা ও কণ্ঠসঙ্গীত। তাঁর অপর শিক্ষক লিনাস তাঁকে সাহিত্যে বিষয়ক শিক্ষা প্রদান করেন। কোনো কোনো মতে- লিনাসকেই তিনি সঙ্গীতের পাঠ দিয়েছিলেন। একদিন সঙ্গীত শিক্ষক ইউমোলপাসের অবর্তমানে, লিনাস তাঁকে নূতন পদ্ধতিতে বীণা শেখানোর চেষ্টা করেন। হেরাক্লেজ এই পদ্ধতিতে শিখতে আপত্তি করেন। কিন্তু লিনাস হেরাক্লেজকে বীণা শিক্ষায় বাধ্য করার চেষ্টা করলে, তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে এই বীণার আঘাতে লিনাসকে হত্যা করেন। আত্মরক্ষার জন্য এই হত্যা করেছেন, এই অজুহাতে ইনি বিচারে মুক্তি লাভ করেন। হেরাক্লেজ পরে এই জাতীয় অপরাধ পুনরায় করতে পারে, এমন আশংকায় এ্যাম্ফিট্রায়োন তাঁকে একটি পশু খামারে পাঠিয়ে দেন। এই খামারে ইনি ১৮ বৎসর পর্যন্ত কাটান। এই সময় ইনি তাঁর দৈহিক চূড়ান্ত বিকাশ ঘটে। ইনি শক্তি ও সাহসে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেন। এই সময় ইনি নিয়মিতভাবে ব্যায়াম এবং খেলাধূলা করতেন।
সিথেরনের সিংহ হত্যা এবং থেসপিয়াসের
কন্যাদের গর্ভে ৫১ সন্তান উৎপাদন
আঠার বৎসর বয়সে ইনি পশু খামার ত্যাগ করে সিথেরনের সিংহ
(Lion of Cithaeron)
হত্যা করার জন্য যাত্রা করেন। এই সিংহটি এ্যাম্ফিট্রায়োন প্রতিবেশী রাজ্যের গবাদি
পশুকে হত্যা করে শেষ করে ফেলেছিল। সিংহটি বাস করতো থেসপিয়া নগরীর প্রান্তদেশে
অবস্থিত হেলিকন পর্বতে।
এই রাজ্যের রাজার নাম ছিল থেসপিয়াস। এই রাজার ছিল ৫০টি কন্যা। এ কন্যারা কোনো
নিচু জাতের কাউকে পছন্দ করে ফেলে কিনা, এ নিয়ে রাজার শঙ্কা ছিল। তাই হেরাক্লেজ যখন
সিংহ হত্যা করতে এলেন, তখন রাজা সিদ্ধান্ত নিলেন যে, তাঁর প্রতিটি কন্যার গর্ভে
হেরাক্লেজ একটি করে সন্তান উৎপাদন করুক। তাই প্রথম দিনেই রাজা হেরাক্লেজকে বললেন
যে, চিত্ত বিনোদনের জন্য তুমি আমার বড় মেয়েকে শয্যাসঙ্গিনী হিসাবে গ্রহণ করতে
পারো। হেরাক্লেজ প্রথম রাত্রিতে তাঁর বড় মেয়ের সাথে কাটিয়ে, পরদিন সিংহের সন্ধানে
বেরিয়ে গেলেন। সন্ধ্যায় হেরাক্লেজ সিংহের সন্ধান না পেয়ে ফিরে এলে, রাজা আগের মতোই
আদর-আপ্যায়ন করলেন এবং সে রাত্রে হেরাক্লেজর কাছে তাঁর দ্বিতীয় মেয়েকে পাঠালেন।
হেরাক্লেজ সিংহ হত্যা করতে ৫০ দিন অতিবাহিত করেছিলেন। এর ভিতর একটি মেয়ে ছাড়া ৪৯টি
মেয়ের সাথে ইনি মিলিত হন। একটি মেয়ে হেরাক্লেজের আলিঙ্গন গ্রহণ করলেও সঙ্গম থেকে
বিরত থাকেন। বাকি কন্যাদের মধ্যে ৪৭টি কন্যা একটি করে সন্তান প্রসব করেছিলেন।
কিন্তু প্রথমা ও কনিষ্ঠা দুটি করে সন্তান প্রসব করাতে, মোট সন্তান সংখ্যা
দাঁড়িয়েছিল ৫১টি। কিন্তু
Pseudo-Apollodoru-এর তালিকা অনুসারে
সন্তান সংখ্যা পাওয়া যায় ৫০টি।
এই কন্যা ও সন্তানদের তালিকা দেখুন :
থেসপিয়ুস
হেরাক্লেজ ৫০ দিনের পর সিংহের সন্ধান পান। ইনি সিংহের পদচিহ্ন অনুসরণ করে, সিংহের
গুহায় পোঁছান। ইনি জলপাই গাছের একটি শক্ত ডাল কেটে বর্শা তৈরি করেন। এই বর্শার
আঘাতে ইনি এই সিংহটিকে হত্যা করতে সক্ষম হন।
ইর্গিনুসের সাথে হেরাক্লেজের সংঘাত ও মেগরার সাথে বিবাহ
ওনচেষ্টাসে পোসেইডোনের এক উৎসবে থেবানদের একজনের নিক্ষিপ্ত পাথরে মিনিয়ানের
রাজা ক্লাইমেনাস মারাত্মকভাবে আহত হন। তাঁকে মুমূর্ষু অবস্থায় দেশে
ফিরিয়ে আনা হয়। ইনি তাঁর ছেলেদের ডেকে এর প্রতিশোধ নেবার আদেশ দিয়ে মৃত্যুবরণ
করেন। এরপর ক্লাইমেনাসের বড় ছেলে ইরগিনুস পিতার আদেশ অনুসারে থিবানদের
বিরুদ্ধে একটি অভিযান পরিচালনা করেন এবং থেবানদের পরাজিত করতে সক্ষম হন। এরপর
থিবানদের সাথে ইর্গিনুসের একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তি অনুসারে থিবানরা
বাৎসরিক কর হিসাবে ১০০ পশু ইর্গিনুসকে দিতে স্বীকার করেন। এই শর্ত অনুসারে থিবানদের
কাছে ইরগিনুস কয়েকজন কর আদায়াকারীকে পাঠান। এই সময় হেলিকনের সিংহ হত্যা করে
হেরাক্লেজ যখন
দেশে ফিরছিলেন, তখন এই কর আদায়কারীদের সাথে তাঁর সাক্ষাৎ হয়। হেরাক্লেজ এদের সাথে
কথা বলে- পুরো বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হন এবং ক্রোধান্বিত হয়ে আদায়কারীদের ফিরিয়ে দেন।
এরপর ইর্গিনুস থিবিসের রাজা ক্রেয়নকে আত্মসমর্পণ করতে বলেনে। রাজা ক্রেয়ন
সম্মত হলেও হেরাক্লেজ নিজ উদ্যোগে জনসাধারণকে যুদ্ধে উজ্জীবিত করে তোলেন এবং একই
সাথে জনসাধারণকে দ্রুত সামরিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলেন। ইর্গিনুস এতে অসন্তুষ্ট
হয়ে থিবিস অধীকারের জন্য অগ্রসর হন। হেরাক্লেজ পাহাড়ের একটি সংকীর্ণ পথে সংগোপনে
অবস্থান নেন। এই স্থানে ইর্গিনুস পৌঁছুলে- হেরাক্লেজ অকস্মাৎ আক্রমণ করেন। খুব
স্বল্প সময়ের যুদ্ধে ইর্গিনুস বাহিনী পরাজিত হয় এবং ইর্গিনুস যুদ্ধে নিহত হন। এই
যুদ্ধ জয়ের পর থিবিসের রাজা ক্রেয়ন অত্যন্ত খুশি হয়ে হেরাক্লিজের সাথে তাঁর বড় মেয়ে
মেগারার বিবাহ দেন। উল্লেখ্য, একই সময় হেরাক্লেজের জমজ ভাই
ইফিক্লেজের সাথে তাঁর
ছোট মেয়ের বিবাহ হয়।
মেগরার গর্ভে তাঁর দুটি (মতান্তরে তিন, চার বা আটটি) সন্তান জন্মগ্রহণ করে। এই সময় দেবী হেরা হেরাক্লেজের শাস্তি হিসাবে উন্মাদ রোগ প্রদান করেন। এর ফলে ইনি তাঁর সকল সন্তান ও ইফিক্লেসের দুই সন্তানকে আগুনে নিক্ষেপ করে হত্যা করেন এবং স্ত্রীকে বিতারিত করেন। অনেকের মতে ইনি মেগরাকেও হত্যা করেছিলেন। রোগ অন্তর্হিত হলে, ইনি তাঁর কৃতকর্মের জন্য তীব্র অনুশোচনায় দগ্ধ হতে থাকেন। ইনি দীর্ঘসময় দেবতাদের মন্দিরে মন্দিরে কাটাতে থাকেন। এই সময় ডেলফির মন্দিরে এক দৈববাণীতে জানতে পারেন যে, তাঁর ভাই ইউরিসথেউসের বশ্যতা স্বীকার করে, তাঁর কথা মত চললে এই পাপ মোচন হবে।
এই পাপ মোচনের জন্য হেরাক্লেজ ইউরিস্থেয়ুসের কাছে যান। হেরাক্লেজকে দেখে গেলে, ইউরিস্থেয়ুস ভাবলো- সে রাজ্যের দাবী জানাতে এসেছে। ইউরিস্থেয়ুসের হেরাক্লেজের শক্তিমত্তার কথা আগেই জানতো। তাই, সে কোন সরাসরি কোন দ্বন্দ্বে না একটি- একটি শর্ত আরোপ করে বললে, যদি হেরাক্লেজ তাঁর জন্য দশটি কাজ করে দিতে পারে, তবে তাঁর সুখ ঐশ্বর্য ফিরিয়ে দেওয়া হবে। এবং হেরাক্লেজ তাতেই রাজি হয়ে গেলেন।
হেরাক্লেজের প্রথম দশ অভিযান
এই দশটি অভিযান
শেষে রাজা ইউরিস্থেয়ুসের ভিন্ন এক অজুহাত দেখিয়ে, তাঁকে
আরও
দুটি অভিযানে পাঠান। ইউরিস্থেয়ুসের অভিযোগ ছিল, হেরাক্লেজ দ্বিতীয় অভিযানে হায়েড্রা
হত্যার সময় তার ভাইপো আলায়ুসের সাহায্য নিয়েছিল, এবং পঞ্চম অভিযানে রাজা অগিয়াসের
আস্তাবল পরিস্কারে সময় পেলেয়ুস ও আলকেয়ুস নামক দুটি নদীর সাহায্য নিয়েছিল। ফলে শর্ত
ভঙ্গ হওয়ার কারণে আরও দুটি অতিরিক্ত অভিযান করতে হবে। এবারেও হেরাক্লেজ এই নূতন
দুটি অভিযানে রাজি হলেন।
হেরাক্লেজেরে অতিরিক্ত প্রথম অভিযান (তিনটি সোনার আপেল সংগ্রহ)
হেরাক্লেজের অতিরিক্ত দ্বিতীয় অভিযান (নরকের কুকুর সার্বেরাস আনয়ন)
এই অতিরিক্ত অভিযান সমাপ্ত হওয়ার পর রাজা ইউরিস্থেয়ুসের শর্ত থেকে মুক্তি লাভ করেন এরপর থেবেস-এ ফিরে আসেন।
হেরক্লেজ কর্তৃক ইফিটাস বধ
এবার তিনি তাঁর অস্ত্রগুরু ইউরিটাসের কন্যা আইয়োলেকে
(Iole) বিবাহ করতে ইচ্ছা করলেন।
উল্লেখ্য ইউরিটাস প্রতীজ্ঞা করেছিলেন, যে ব্যক্তি তাঁকে ও
তাঁর চারপুত্রকে (Didaeon,
Clytius, Toxeus এবং
Iphitus) ধনুর্বিদ্যায় হারাতে পারবে, তাঁর সাথে কন্যা
আইওলকে বিবাহ দেবেন।
এই প্রতিযোগিতায় হেরাক্লেজ জয়ী হলেও ইউরিটাস হেরাক্লেজের হাতে কন্যা সমর্পণ করলেন
না। কারণ, হেরাক্লেজ উন্মাদ রোগে ইতিপূর্বে তাঁর প্রথমা স্ত্রী মেগারা এবং তাঁর
সন্তানদের হত্যা করেছিলেন। হেরাক্লেজ এ বিষয়ে কিছু প্রতিবাদ না করে ফিরে চলে গেলেন।
ইউরিটাসের তিনপুত্রের মধ্যে বড় ছেলে ইফিটাস হেরাক্লেজকে সমর্থন করলেন। এরপর
ইউরিটাসের গোয়ালঘর থেকে অটোলাইকাস চুরি করে হেরাক্লেজের কাছে বিক্রয় করেছিল।
ইউরিটাস এই পশু চুরির পিছনে হেরাক্লেজের হাত আছে
বলে দাবী করে। ইফিটাস এর প্রতিবাদ করে বলে, হেরাক্লেজের মত লোক পশু চুরি করতে
পারে না। কিন্তু ইফিটাস পশুর পায়ের চিহ্ন অনুসরণ করে হারানো পশুর সন্ধান পায়
হেরাক্লেজের আস্তানায়। হেরাক্লেজ কাছে জানায় যে এই পশুগুলো অটোলাইকাসের কাছ থেকে
কিনেছিল, তারপরেও ইফিটাস হেরাক্লেজকে দোষ দিতে থাকে। এবং এক সময় হেরাক্লেজ ক্ষিপ্ত
হয়ে ইফিটাসকে হত্যা করে।
এই হত্যার জন্য অনুতপ্ত হয়ে পরিশুদ্ধের রাজা পাইলাসের কাছে হেরাক্লেজ যান, কিন্তু
পাইলাস পরিশুদ্ধকরণে অস্বীকার করেন। এরপর নেষ্টার তাঁকে পরিশুদ্ধ করলেও, তিনি
রাত্রে দুঃস্বপ্ন দেখতে থাকেন। এজন্য তিনি ডেলফির মন্দিরে যান। কিন্তু নরঘাতক
হিসাবে মন্দিরের পুরোহিত জেনোক্লেয়া (Xenoclea)
কোনো দৈববাণী দিতে অস্বীকার করে। এরপর
বাকবিতণ্ডার মধ্য দিয়ে হেরাক্লেজ সরাসরি এ্যাপোলো;র সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন।
অবশেষে জিউসেস হস্তক্ষেপে এই বিরোধের মীমাংশা হয়। এরপর হেরাক্লেজ এ্যাপোলো
মন্দিরের পুরোহিতের কাছ থেকে জানতে পারেন যে, যদি হেরাক্লেজ তিন বৎসর নিজেকে কারো
কাছে দাস হিসাবে বিক্রয় করে এবং এই দাসত্ব থেকে যে অর্থ পাবে তা ইফিটাসের সন্তানদের
প্রদান করে, তবে তাঁর পাপস্খলন হবে। এরপর পুরোহিত লিডিয়ার রানী ওম্ফালের কাছে
নিজেকে বিক্রয় করার জন্য হেরাক্লেজকে
নির্দেশ দেয়।
হেরাক্লেজের কাঁধে সের্কোপেস ভ্রাতৃদ্বয় |
হেরাক্লেজ ও ওম্ফালে
এরপর হেরাক্লেজ প্রায়শ্চিত্ত করার জন্য লিডিয়ার রানী' ওম্ফালের (Omphale) কাছে নিজেকে তিন
ট্যালেন্টের (মুদ্রা) বিনিময়ে নিজেকে বিক্রয় করলেন। সারাদিন দাস হিসাবে কাজ করার পর
রাত্রে ঘুমিয়ে পড়লে সের্কোপেস (প্যাসালুস এবং এ্যাক্মোন নামক দুই ভাই) হেরাক্লেজের
ব্যবহারিক সামগ্রী চুরি করতো। থেইয়া এই দুই ভাই সম্পর্কে হেরাক্লেজকে সতর্ক করে
দিয়েছিল। একরাত্রে হেরাক্লেজ এদেরকে ধরে ফেলে। এবং একটি দণ্ডে পা হেরাক্লেজ বেঁধে
উল্টো করে ঝুলিয়ে রাখে। এই অবস্থায় এরা হাসতে থাকে। এরপর হেরাক্লেজ বিস্মিত হয়ে
এদেরকে মাটিতে নামিয়ে রাখে। এরা পরে ধীরে
ধীরে পরিণত হয়ে যায়। অন্যমতে এরা জিউসের অভিশাপে এরা লম্বা হলুদ লোম বিশিষ্ট
এপ-এ
পরিণত হয়।
এই সময় সাইলেয়াস (Syleus)
নামক একজন ব্যক্তি একটি আঙুরক্ষেত্রের মালিক হয়েছিল। এই সময় পথিকদের জোর করে ধরে
তার ক্ষেতে কাজ করাতো। সাইলেয়াস একই কাজ হেরাক্লেজকে দিয়ে করানোর চেষ্টা করলে,
হেরাক্লেজ তাকে হত্যা করে পুরো বাগান পুড়িয়ে দেয়। এরপর সে ঔ ব্যক্তির কন্যা জেনোডোস
( Xenodoce
বা
Xenodice)-কেও
হত্যা করে। এই সময় চেলায়েনায়ে-তে লিটায়েরেস নামক একজন কৃষক ছিল যে। কোনো অতিথি তাঁর
কাছে গেলে, সে প্রথমে তাকে যথেষ্ঠ আদর-আপ্যায়ন করতো। পরে তাকে ফসল বপনের
প্রতিযোগিতায় আন্তরিকভাবে আহ্বান করতে। সে নিজে এই বিষয়ে যথেষ্ঠ পারদর্শী ছিল, সেই
কারণে প্রতিটি প্রতিযোগিতায় অতিথিকে পরাজিত করতো। এরপর পরাজিত অতিথিদের সে চাবুক
দ্বারা আঘাত করে আনন্দলাভ করতো। হেরাক্লেজ এই ব্যক্তিকে প্রতিযোগিতায় পরাজিত করেন
এবং তাকে হত্যা করে নদীতে নিক্ষেপ করেন।
হেরাক্লেজ রানী ওম্ফালের ক্রীতদাস হয়ে থাকার সময় এই
জাতীয় একাধিক কাজ করেন এবং
হেরাক্লেজের প্রেমে পড়েন। ওম্ফালে প্রেমের ফাঁদে ফেলে আটকে রাখলেন। এই সময় ইনি
কখনো মেয়েদের পোষাক পড়ে, কখনো রানীর প্রেমের সঙ্গী হিসাবে তিন বৎসর সময় কাটিয়ে দিলেন।
এই সময় ওম্ফালের সাথে মিলিত হয়ে তিনি
দুটি সন্তানের পিতা হন।
এই সন্তান দুটির নাম ছিল- অগেলাউয়ুস (Agelaus)
ও টাইর্সেনাস (Tyrsenus)।
দাসত্বের মেয়াদ শেষে
এরপর হেরাক্লেজ আবার পথে বের হলেন।
হেরাক্লেজের ট্রয় বিজয়
ওম্ফালের দাসত্ব থেকে মুক্ত হয়ে টিরাইনে চলে আসেন। এরপর ইনি ট্রয় জয়ের উদ্যোগ নেন।
এর পিছনে একটি কারণ ছিল। হেরাক্লজ তাঁর নবম অভিযান শেষে
লাওমেডানের কন্যাকে
হেসিয়োনে (Hesione)-কে
উদ্ধার করেছিলেন। উল্লেখ্য রাজা এক ঘোষণায় জানিয়েছিলেন যে, যে ব্যক্তি তাঁর
কন্যাকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করতে পারবেন, তাঁর হাতে এই কন্যাকে সমর্পণ করবেন।
হেরাক্লেজ উক্ত দানবকে আক্রমণ করে হত্যা করে কন্যাটিকে উদ্ধার করলেন। কিন্তু
প্রতিশ্রুতি অনুসারে রাজা
লাওমেডান তাঁর কন্যাকে হেরাক্লেজের হাতে সমর্পণ করলেন না।
এরপর হেরাক্লেজ দশ বৎসর পরে এসে এর প্রতিশোধ নেবেন বলে উক্ত স্থান ত্যাগ করেছিলেন।
তাই এবারে
লাওমেডানকে শাস্তি দেওয়ার জন্য, হেরাক্লেজ ট্রয় অভিযানের সিদ্ধান্ত নেন।
কারণ, এই সময় ট্রয়ের রাজা ছিলেন লাওমেডান।
হেরাক্লেজের নবম অভিযান (রানী হিপ্পোলাইটে-র কটিবন্ধনী করায়াত্তকরণ)
দেবরাজ জিউসের বিরুদ্ধাচরণের জন্য
জিউস―
এ্যাপোলো
ও
পোসেইডোনকে
শাস্তি স্বরূপ ট্রয়ের রাজা
লাওমেডান-এর দাস হিসাবে নিযুক্ত করেন।
লাওমেডান
এই দুই দেবতাকে দিয়ে ট্রয় নগরীর বাইরে একটি দুর্ভেদ্য প্রাচীর তৈরি করিয়েছিলেন। এর একটি অংশ তৈরি করেছিল ঈয়াকাস (Aeacus)।
ঈয়াকাস নির্মিত এই অংশটিতে কিছু দুর্বলতা ছিল। এই প্রাচীরে দুর্বল অংশের বিষয়
জানতেন ঈয়াকাসের ছেলে টেলামোন (Telamon)।
তাই টেলামোনের সাথে করে সেনাবাহিনী গড়ে তুললেন। কিন্তু এই অভিযানের শুরুতে টেলামোন
পিছিয়ে গেলেন। কারণ, তাঁর স্ত্রী এরিবোয়েয়া (Eeriboea)
সন্তানসম্ভবা ছিলেন। হেরাক্লেজ তাঁর পিতা
জিউসের কাছে, এই সন্তান সাহসী বীর হওয়ার প্রার্থনা করলেন। জিউস এই প্রার্থনায় সাড়া
দিয়ে তাঁর ঈগল পাঠিয়ে টেলামোন পুত্রের জন্য আশীর্বাদ করলেন। টেলামোনের এই পুত্রের
নাম ছিল এ্যাজাক্স (Ajax।
অবশেষে ১৮টি যুদ্ধজাহাজ নিয়ে হেরাক্লেজ ও
টেলামোন ট্রয় অবরোধ করলেন। টেলামোন দ্রুত তাঁর পিতার তৈরি অংশ ভেঙে ফেললেন এবং
ট্রোজান বাহিনীর বিরুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া শুরু করলেন। এই কারণে হেরাক্লেজ ঈর্ষান্বিত
হয়ে পড়লেন। এই সময় হেরাক্লেজ টেলামোনের দুজন সেনাপতিকেও হত্যা করলেন। টেলামোন কোনো
প্রতিশোধ নেওয়ার পরিবর্তে পাথরের একটি বেদী তৈরি করলেন। হেরাক্লেজ যখন এই বেদী
তৈরির কারণ জিজ্ঞাসা করলেন, তখন টেলামোন বললেন এই বেদী হেরাক্লেজ-এর জন্য।
টেলামোনের এই কপট কথায় হেরাক্লেজ সন্তুষ্ট হয়ে, একত্রিত হয়ে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করলেন।
এই যুদ্ধে
লাওমেডান-এর কনিষ্ঠ পুত্র প্রাইয়াম
(Priam)
ছাড়া সকল পুত্রই নিহত হয়েছিল। পিতা ও তাঁর ভাইদের অবর্তমানে প্রাইয়াম রাজা হন।
হেরাক্লেজ পরের হেসিয়োনে-কে উপহার হিসাবে টেলামোনে-কে প্রদান করেন।
ট্রয় প্রত্যাবর্তনের পথে ইউরিফাইলাস বধ
ট্রয় থেকে ফেরার পথে হেরাক্লেজকে বিপদে ফেলার জন্য
হেরা
একটি ভঙ্কর ঝড় পাঠিয়ে দিলেন। এই কাজের জন্য জিউস হেরার কোমর বন্ধনী ধরে অলিম্পিয়াসে
অনেক উপরে ঝুলিয়ে রেখে শাস্তি দিয়েছিলেন। তবে ঝড়ের কারণে হেরাক্লেজের কোস (Cos)
নামক দ্বীপে চলে আসতে বাধ্য হন। এই সময় কোস-এর রাজা ইউরিফাইলাস (Eurypylus)
হেরাক্লেজকে জলদস্যু মনে করে আক্রমণ করে। এই যুদ্ধে ইউরিফাইলাস নিহত হয়। কোনো
কোনো মতে, হেরাক্লেজ ইউরিফাইলাস-এর জন্য ক্যালসিয়োপে (Chalciope)-কে
অপহরণ করার চেষ্টা করলে, হেরাক্লেজ ও ইউরিফাইলাস- এর মধ্যে যুদ্ধ হয় এবং ইউরিফাইলাস
নিহত হয়। হেরাক্লেজ ক্যালসিয়োপ-কে বিবাহ করে। এদের সন্তানের নাম ছিল থেস্স্যালাস (Thessalus)।
দানবদের সাথে হেরাক্লেজের যুদ্ধ
ইউরেনাসের অণ্ডকোষ থেকে ঝরে পরা রক্ত থেকে উৎপন্ন দানবদের সাথে অলিম্পিয়াসের
দেবতাদের ভয়ঙ্কর যুদ্ধ শুরু হয়। এর সাথে যুক্ত হয়েছিল টার্টারাস ও গেইয়ার দানব
সন্তানেরাও।
পোর্ফারিওন
নামক দানব হেরাকে ভোগ করার চেষ্টা করার সময়, জিউস এবং হেরাক্লেজ সম্মিলিতভাবে এই
দানবকে হত্যা করে।
ক্রমশ...
সূত্র :
http://www.paleothea.com/
greek myth/Robert Graves, cassel & comoany, fourth edition 1995
Mythology/Edith Hamilton/New American Library, 1969
http://www.pantheon.org/areas/mythology/europe/greek/