হেরাক্লেজের অতিরিক্ত দুটি অভিযান
দেখুন : হেরাক্লেজ

  হেরাক্লেজেরে অতিরিক্ত প্রথম অভিযান (তিনটি সোনার আপেল সংগ্রহ)
হেরাক্লেজের অতিরিক্ত দ্বিতীয় অভিযান (নরকের কুকুর সার্বেরাস আনয়ন)

হেরাক্লেজেরে অতিরিক্ত প্রথম অভিযান (তিনটি সোনার আপেল সংগ্রহ)
হেরাক্লিজের অতিরিক্ত প্রথম অভিযানের বিষয় ছিল- হেসপেরিডিজ বাগান থেকে তিনটি সোনার আপেল সংগ্রহ করে আনা।

  হেসপেরিডেজ বাগান
  এ্যাটলাস পর্বতের ঢালে এ্যাটলাস-এর একটি নিজস্ব বাগান। সূর্য তার পৃথিবী পরিভ্রমণ শেষ করে, এই বাগানে তাঁর রথ থামাতেন এবং রথের ঘোড়াগুলোকে বিশ্রাম দিতেন। এখানে এ্যাটলাস-এর এক হাজার ভেড়া এবং এক হাজার অন্যান্য গবাদি পশু চড়ে বেড়াতো। এ্যাটলাস-এর কন্যারা (হেসপেরিডেজ) এই বাগান দেখা শোনা করতেন। এই কারণে এই বাগানকে, হেসপেরিডেজ বাগান বলা হতো।

এই সোনার আপেল বাগানটি জিউস হেরা'র বিবাহোৎসবে উপহার দিয়েছিলেন গেইয়া হেরা এ্যাটলাস-এর কন্যাদের সহায়তায় এই গাছটি রোপণ করেছিলেন এই বাগানে। এই গাছটির জন্য এ্যাটলাস অত্যন্ত অহঙ্কারও ছিল। এই বাগান সম্পর্কে থেমিস একবার এক ভবিষ্যৎ বাণীতে বলেছিল যে, জিউস-এর এক সন্তান এই বাগানকে তছনছ করবে এবং স্বর্ণ আপেল তুলে নেবে। সে সময় এ্যাটলাস পৃথিবী কাঁধে ধারণ করে থাকবে, সেই কারণে ওই জিয়াসপুত্রকে বাধা দিতে পারবে না। এই বাণী শোনার পর এ্যাটলাস বাগানের চারপাশে কঠিন দেওয়াল স্থাপন করে এবং পাহারা দেবার জন্য নিযুক্ত করে ল্যাডোন নামক এক শতমুখী ড্রাগন। এরপর এই বাগানে অতিথি প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে প্রজ্ঞাপন দেয়। এই ঘটনার পর লোকজন এই বাগানে যাওয়ার পথের ঠিকানাই ভুলে যায়। উল্লেখ্য থেমিসের ভবিষ্যৎ বাণী অনুসারে জিউসের পুত্র হেরাক্লেজ এই বাগান থেকে আপেল তুলে নিয়ে গিয়েছিল।

হেসপেরিডেজের বাগান কোথায় হেরাক্লেজ প্রথমে তা জানতো না। এই বাগানটির সন্ধান জানার জন্য তিনি দূর-দূরান্ত ঘুরে বেড়াতে লাগলেন। এর ফলে অযাচিতভাবে তাঁকে অনেক দৈত্য-দানবের সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে হলো। অবশ্য প্রতিক্ষেত্রেই হেরাক্লিজে জয়ী হলেন। এক পর্যায়ে যুদ্ধ দেবতা এ্যারিজ-এর সাথে ইনি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিলেন। পরে জিউস বজ্র দ্বারা উভয়কে বিচ্ছিন্ন করে যুদ্ধ বন্ধ করে দেন।

হেরাক্লিজের এই অদম্য প্রচেষ্টা দেখে এরিডেনাসের পরীরা হেরাক্লেজকে পরামর্শ দিলেন যে, সমুদ্রবাসী
নিরিয়াস -এর কাছে যেতে বলেন। পরীদের কথামত তিনি নিরিয়াস-এর কাছে যান। কিন্তু সেখানে গিয়ে হেরাক্লেজ দেখলেন যে, নিরিয়াস আগাছা মুড়ি দিয়ে ঘুমাচ্ছেন। হেরাক্লেজ তাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে হেসপেরিডিজ বাগান-এর  কথা জিজ্ঞাসা করলে নিরিয়াস জানান যে, সমুদ্রের পশ্চিম উপকূলে একটি বিশাল দ্বীপ রয়েছে। এই পুরো দ্বীপটিই হলো- হেসপেরিডিজের বাগান। আর এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানেন প্রোমিথেয়ুস

এরপর হেরাক্লেজ
নিরিয়াস-এর কাছ থেকে প্রোমিথেয়ুস-র ঠিকানা জেনে নিয়ে চলে এলেন ককেশাস পর্বতে। সেখানে ইনি একটি পাহাড়ের সাথে শৃঙ্খলিত প্রোমিথেয়ুসকে দেখতে পেলেন। ইনি তীর বিদ্ধ করে প্রোমিথেয়ুস-এর উপর নেমে আসা ঈগলকে হত্যা করেন এবং প্রোমিথেয়ুসকে তিরিশ বৎসর পর শৃঙ্খলমুক্ত করেন। প্রোমিথেয়ুস মুক্ত হয়ে হেরাক্লেজকে জানালেন যে, এ্যাটলাসকে খুঁজে বের করে তাঁকে দিয়ে তিনিটি আপেল সংগ্রহ করাতে হবে।

এরপর তিনি
এ্যাটলাস-এর সন্ধানে আফ্রিকায় চলে এলেন। ইনি প্রথমে মিশরে এলেন। সেখানকার রাজা বুসিরিসের আদেশে একটি নিয়মিত বলি সংঘটিত হতো। আর এই বলির শিকার হতেন বিদেশীরা। এই বলির পিছনে একটি কাহিনী ছিল। তা হলো- একবার সারা মিশরে দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে, সাইপ্রাসের এক জ্যোতিষী রাজাকে বলেন যে, যদি কোনো বিদেশীকে বলি দেওয়া যায় তবে দেশ দুর্ভিক্ষ থেকে রক্ষা পাবে। রাজা বিদেশী হিসাবে ওই বিদেশীকে প্রথম বলি দেন। এবং এরপর থেকে প্রতি বৎসর এই বিদেশীদের বলি দেওয়ার রেওয়াজ দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। হেরাক্লেজ মিশরে পৌঁছুলে রাজার লোকেরা তাঁকেও বলি দেওয়ার জন্য মাঠে নিয়ে গেলেন। হেরাক্লেজ প্রথমে কোনই বাধা দিলেন না। কিন্তু যে মুহূর্তের আয়োজন সম্পূর্ণ হলো- সেই মুহূর্তে ইনি তাঁর বাধন ছিঁড়ে ফেলে নিজেকে মুক্ত করলেন এবং রাজা বুসিরিসকে হত্যা করলেন। হেরাক্লিজের এই অমিত শক্তি দেখে এবং রাজার করুণ দশা দেখে তাঁকে আর কেউ ধরতে এলো না। এরপর হেরাক্লেজ মিশর পেরিয়ে আফ্রিকার ভিতরে প্রবেশ করলেন। কিছুদূর যাবার পর আন্তেয়ুস নামক এক দৈত্য তাঁকে মল্লযুদ্ধে আহ্বান করলো। এই দৈত্য পথচারী দেখলেই তাঁকে এরূপ যুদ্ধে আহ্বান করতো এবং তাকে হত্যা করতো। হেরাক্লেজকে এই দৈত্য যুদ্ধে আহবান করলে, ইনি এই দৈত্যকে শুন্যে তলে ধরে গলা টিপে হত্যা করে লিবিয়ায় এলেন। এখানে প্রতি বৎসর বিভিন্ন বন্য হিংস্র জীবজন্তুর আক্রমণে বহুলোক প্রাণ হারাতো। হেরাক্লেজ একে একে সে সকল প্রাণী হত্যা করে উক্ত জনপদকে বাসযোগ্য করে তুললেন। এরপর ইনি আবার এ্যাটলাসের খোঁজে বেড়িয়ে পড়লেন। অবশেষে ইনি এ্যাটলাসের দেখা পেলেন। দেখলেন- এ্যাটলাস সম্পূর্ণ পৃথিবীকে মাথায় ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। হেরাক্লেজ তখন এ্যাটলাসকে বললেন যদি,তুমি হেসপেরিডিজের বাগান থেকে তিনটি সোনার আপেল এনে দিতে পার তবে আমি কিছুক্ষণ তোমার ভার বইব। শুনে এ্যাটলাস সানন্দে রাজি হয়ে গেলো।

আপেল নিয়ে ফিরে আসার পর
এ্যাটলাস পৃথিবীকে মাথায় নিতে গড়িমসি শুরু করলেন। সে কারণে, হেরাক্লেজ ছলনার আশ্রয় নিলেন। হেরাক্লেজ এ্যাটলাসকে বললেন যে, পৃথিবী মাথায় নেয়াটা এমন কোন কষ্টের কাজ না, তবে তাঁর মাথায় বিড়া জাতীয় কিছু না থাকায় ব্যথা অনুভব করছে। এ্যাটলাস যদি, পৃথিবীটাকে একটু ধরে তবে সে একটা বিড়া বানিয়ে নিয়ে আবার পৃথিবী মাথায় নিতে পারবে। এ্যাটলাস  হেরাক্লিজের কথা সত্যি ভেবে এ্যাটলাস পৃথিবীটাকে যেই মাথায় নিলেন, অমনি হেরাক্লেজ আপেল তিনটি নিয়ে সেখান থেকে পালালেন।

হেরাক্লেজের অতিরিক্ত দ্বিতীয় অভিযান (নরকের কুকুর সার্বেরাস আনয়ন)
এই অভিযানে তাঁকে দেওয়া হলো- পাতালপুরীতে অবস্থিত নরকে গিয়ে সার্বেরাস  নামক একটি কুকুর আনতে হবে। এই কুকুরটির তিনটি মাথা ছিল । এই অভিযানের জন্য হেরাক্লেজ বিশেষভাবে প্রস্তুতি নিলেন। প্রথমে ইনি নরক সম্পর্কিত জ্ঞানী এলুইমিসের কাছে গিয়ে জ্ঞান সঞ্চয় করলেন। এরপর ইনি তাঁর চতুর্থ অভিযানের সময় অন্যায়ভাবে সেন্টরদের হত্যা করার জন্য প্রায়শ্চিত্ত করলেন। এরপর ইনি গেলেন পেলোপনেসাসের দক্ষিণ প্রান্তে তেনাসাস নামক একটি জায়গার একটি অন্ধকার গুহামুখে দাঁড়ালেন। কিছুক্ষণ পর
হের্মেজ এসে নরকের দরজা খুলে দিলেন। হের্মেজ তাঁর হাত ধরে নরকে নিয়ে গেলেন। ইনি অসংখ্য অশরীরী আত্মা দর্শন করতে করতে এগিয়ে চললেন। এই সময় মেলিগার আত্মা এসে তাঁকে মেলিগার সুন্দরী বোন দিয়ানার কাছে গিয়ে ভালোবসার বার্তা পৌঁছানোর জন্য অনুরোধ করলেন।

একটি জায়গায় পার্সেয়ুস ও পেইরিথায়ুস নামক দুটি জীবিত মানুষকে শৃ্ঙ্খলিত অবস্থায় দেখলেন। হার্মেজর কাছ থেকে এদের এই অবস্থার কারণ জানলেন যে- পেইরিথায়ুস ল্যাপথিয়ারের রাজা ছিলেন। একবার সেন্টরদের যুদ্ধে হারানোর পর ইনি অত্যন্ত অহঙ্কারী হয়ে উঠেন। এবং ঔদ্ধত্য এতটা বেশি হয়ে পড়েছিল যে, সে তাঁর বন্ধু এথেন্সের রাজা পার্সেয়ুসকে সাথে নিয়ে নরকের রানী পার্সিফোনের কাছে প্রেম নিবেদনের জন্য অগ্রসর হয়। নরকের রাজা হেডিজ এই সংবাদ জানতে পেরে দুজনকে এই স্থানে বন্দী করে রাখে। হেরাক্লেজকে দেখে এরা সাহায্য চেয়ে কাতর নিবেদন করতে থাকলে, হেরাক্লেজ অত্যন্ত জোরের সাথে পার্সেয়াসে হাত ধরে টান দিলে, ইনি পার্সিয়াস বন্ধ ছিঁড়ে পৃথিবীর আলো বাতাসের মধ্যে গিয়ে পড়ে। কিন্তু পেইরিথাউসের বন্ধন গোটা পৃথিবীর সাথে গাঁথা ছিল বলে হেরাক্লেজ পেইরিথায়ুসের মুক্তির ব্যাপারে অগ্রসর হলেন না।

এরপর ইনি সার্বেরাসের খোঁজে দ্রুত অগ্রসর হলেন। এই সময় নরকের রাজা হেডিজ দুটো ষাঁড় তাঁর সামনে পড়ে গেলে, ইনি ষাঁড় দুটিকে হত্যা করে ষাঁড়ের রক্ত প্রেতাত্মাদের খেতে দিলেন। ষাঁড় হত্যার সময় এর পালক-রাখাল বাধা দিতে এলে ইনি তাঁর গদার আঘাতে রাখালের পাঁজর ভেঙে দিলেন। এরপর রাখালকে হত্যা করতে উদ্যত হলে, রানী পার্সিফোনের অনুরোধে তাকে ছেড়ে দিলেন। এরপর হেডিজ সিংহাসনের কাছে এসে হেরাক্লেজ একটি তীর দ্বারা তাঁর কাঁধ বিদ্ধ করলেন। হেডিজ অত্যন্ত ভীত হয়ে বললেন, কুকুরটিকে যদি তুমি বশ করে নিতে পার তবে নিয়ে যাও। হেরাক্লেজ তখন কুকুরটির গলা ধরে কাঁধের উপর বসিয়ে গ্রীসে নিয়ে এলেন। কুকুরটিকে দেখে রাজা ইউরিস্থেয়ুস ভয়ে বিস্ময়ে স্ত
হয়ে রইলো। হেরাক্লেজ যখন এই কুকুরটিকে রাজদরবারে কাঁধ থেকে নামিয়ে দিলেন তখন, রাজা তা অধিকারের চেষ্টাও করলেন না। বরং কুকুরটিকে ছেড়ে দিতে আদেশ করলেন। ফলে ছাড়া পেয়ে কুকুরটি আবার নরকে চলে গেল।


সূত্র :
http://www.paleothea.com/
greek myth
/Robert Graves, cassel & comoany, fourth edition 1995
Mythology/Edith Hamilton/New American Library, 1969
http://www.pantheon.org/areas/mythology/europe/greek/