সৌরজগৎ
ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা
{সংশ্রয়িক
পদ্ধতি
|
দল
|
বিমূর্তন
|
বিমূর্ত-সত্তা
|
সত্তা
|}
ইংরেজি:
solar system।
এটি এক ধরনের মহাকাশীয় সাংশ্রয়িক পদ্ধতিগত নাম। এর কেন্দ্রে রয়েছে
সূর্য নামক
নক্ষত্র। এই
নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে
আবর্তিত গ্রহ,
গ্রহাণুপুঞ্জ,
ধূমকেতু
নিয়ে এই পদ্ধতির সৃষ্টি হয়েছে। সৌরজগত
ছায়াপথ নামক
গ্যালাক্সির অন্তর্গত। এর নিকটতম নক্ষত্র
প্রোক্সিমা
সেন্টাউরি।
বিগব্যাং -এর পরে, প্রায় ১৩,৬০ কোটি বৎসর পূর্বে জন্মলাভ করেছিল ছায়াপথ নামক এই গ্যালাক্সিটি। এই গ্যালাক্সি'র কেন্দ্র থেকে প্রায় ২৫০০০ আলোকবর্ষ দূরে অরিওন (Orion) নামক বাহুতে, প্রায় ৫০০ কোটি বৎসর আগে বিশাল আকারের একটি মহাকাশীয় মেঘ জমাট বেঁধেছিল। ৪৭০ কোটি বৎসর আগে, এই মেঘের কাছে বিস্ফোরিত হয় একটি অতি নবতারা। সে বিস্ফোরণের ধাক্কায় ওই মেঘ সঙ্কুচিত হয়ে নাক্ষিত্রিক কেন্দ্রের সৃষ্টি করে। এই কেন্দ্র ঘূর্ণায়মান দশায় নাক্ষত্রিক ভ্রূণের সৃষ্টি করে। সেই নাক্ষত্রিক ভ্রূণ থেকে প্রায় ৪৬০ কোটি বৎসর আগে জন্মগ্রহণ করেছিল সূর্য। নাসার মতে এই সময়কেই সৌরজগত সৃষ্টিকাল ধরা হয়।
৪৬০ কোটি বৎসর আগে
নবীন
সূর্য
থেকে নিস্ক্রান্ত বস্তুপুঞ্জ, সূর্যকে ঘিরে ফেলেছিল। এর ফলে
সূর্য
একটি মহাকাশীয় বলয়ে আবদ্ধ হয়ে পড়েছিল। কালক্রমে এই বলয়ের বস্তুপুঞ্জ ছিটকে পড়ে এবং ছোটো
ছোটো মহাকাশীয় গোলকে পরিণত হয়। এগুলো সূর্যের আকর্ষণ উপেক্ষা করে দূর-আকাশে চলে না
গিয়ে, সূর্যকে প্রদক্ষিণ করা শুরু করে। এই ধারাবাহিক ঘটনাসূত্রে তৈরি হয়েছিল সৌরজগতের গ্রহ-উপগ্রহ। ধারণা করা হয়, পৃথিবী ও
অন্যান্য গ্রহগুলো প্রাথমিক পর্যায়ে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করার জন্য সুস্থির কোনো
কক্ষপথ লাভ করে নি। প্রথম দিকের গ্রহগুলো ছিল উত্তপ্ত গ্যাসীয় গোলকের মতো। পরস্পরের
ভিতর ধাক্কাধাক্কি করে কয়েকটি গোলক টিকে গিয়েছিল। এই গোলকগুলো সূর্যকে প্রদক্ষিণের
একটি সুনির্দিষ্ট কক্ষপথও লাভ করেছিল। মূলত পৃথিবী গ্রহ হিসেব সুস্থির হয়েছিল প্রায়
৪৫০ কোটি বৎসর আগে।
সৌরজগতের উপকরণসমূহের বর্ণানুক্রমিক তালিকা |
সৌরজগতের সদস্যসমূহ
বিজ্ঞানীরা মনে করেন সৌরজগতের মোট ভরের প্রায় ৯৯% ভাগ নিয়ে সূর্য তৈরি হয়েছে।
বাকি ১% ভাগ নিয়ে সৌরজগতের অন্যান্য সদস্য তৈরি হয়েছে। এদের বেশিরভাগই
সূর্যকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়। সাধারণভাবে এই সকল সদস্যদের তালিকায় রয়েছে- ছোটো
বড় নানা মাপের গ্রহ, উপগ্রহ, গ্রহাণু, ধূমকেতু।
সৌরজগতের গ্রহসমূহ
সৌরজগতের ব্যাপ্তী
সৌরজগতের ব্যাপ্তী বলতে বুঝায়,
সূর্যের কেন্দ্র থেকে কতদূর পর্যন্ত সূর্যের আকর্ষণী ক্ষমতা রয়েছে। সূর্যের এই
আকর্ষণী এলাকার ভিতরে যে সকল সদস্য রয়েছে, তাদের গঠন প্রকৃতি অনুসারে সৌরজগতের
ব্যাপ্তী এলাকাকে ভাগ করা হয়েছে। এই ভাগগুলো হলো–
পৃথিবী সম্পর্কিত গবেষণার ইতিহাস:
প্রাগৈতিহাসিক যুগে গ্রিক পৃথিবীকে অন্যান্য সকল মহাকাশীয় বস্তুর কেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করা হতো।
খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতকে এ্যারিস্টার্কাস (Aristarchus of Samos) প্রথম সূর্যকে কেন্দ্র হিসেবে ধরে সৌরজগতের একটি প্রাথমিক ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেন। তবে তাঁর সেই ধারণাকে সে সময়ে কেউ গ্রহণ করেন নি।
খ্রিষ্টীয় ষোড়শ শতকে নিকোলাস কোপার্নিকাস সূর্যকে কেন্দ্র করে পৃথিবী আবর্তিত হচ্ছে, এই তথ্য প্রমাণাদিসহ উপস্থাপন করেন। এই তথ্যই গ্যালিলিও উপস্থাপন করার জন্য নিগৃহীত হন।
খ্রিষ্টীয় ষোড়শ শতকে সৌরজগতের সৌরকেন্দ্রিক তত্ত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। সেই সময় সূর্যের গ্রহতালিকায় স্থান পায়– বুধ, শুক্র, পৃথিবী, মঙ্গল, বৃহস্পতি ও শনি।
১৭৮১ খ্রিষ্টাব্দে গ্রহ-তালিকায় স্থান পায় ইউরেনাস
১৮০১ খ্রিষ্টাব্দে সিরেজ (Ceres) নামক গ্রহাণু আবিষ্কৃত হয় মঙ্গল ও বৃহস্পতি গ্রহের মধ্যবর্তী স্থানে। প্রথমাবস্থায় এটিকে গ্রহের তালিকায় স্থান দেওয়া হয়েছিল। এই সময় আরও অনেক গ্রহাণুর সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল।
১৮৪৬ খ্রিষ্টাব্দে নেপচুন আবিষ্কৃত হয় এবং সৌরজগতের গ্রহ-তালিকায় স্থান পায়।
১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দে প্লুটো আবিষ্কৃত হয়। প্লুটো বুধের চেয়ে ছোটো, এমন কি অনেক উপগ্রহের চেয়েও ছোট। প্লুটো পৃথিবী-সদৃশ গ্রহ বা গ্যাসীয় দানবাকারের গ্রহগুলোর মতো নয়। এর চ্যারন নামে একটি উপগ্রহের সন্ধানও পাওয়া।
১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দে মহাকাশচারী কেনেথ এজওয়ার্থ (Kenneth Edgeworth) একটি প্রস্তাবনায় জানান যে, জানা গ্রহগুলোর পিছনে ধূমকেতু এবং কিছু বড় মহাকাশীয় বস্তু রয়েছে।
১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দে জান ওর্ট (Jan Oort) একটি তত্ত্বে জানান যে, সৌরজগতের শেষ প্রান্তে বিশালাকারের মেঘ রয়েছে, আর সেখান থেকে জন্ম নেয় ধূমকেতু
১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে সৌরজগতের নানা ধরনের মহাকাশীয় বস্তু আবিষ্কারের সূত্রে প্লুটো হয়ে যায় বামন গ্রহ।
১৯৫১ খ্রিষ্টাব্দে জেরার্ড কুইপার অনুমান করেন যে, নেপচুনের কক্ষপথের বাইরে দূর-মহাকাশের দিকে বরফ-সমৃদ্ধ বস্তু আছে।
১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দে ডেভিড জেউইট (David Jewitt) এবং জান লু (Jane Luu) প্রথম আবিষ্কার করেন KBO, 1992QB1 নামক মহাকাশীয় বস্তু।
২০০২ খ্রিষ্টাব্দে ৪৮ ইঞ্চি পালোমার মহাকাশ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ওসচিন টেলিস্কোপ (Oschin telescope) এর সাহায্যে কুইপার বলয়ের ১০০ কিলোমিটার ব্যাসের একটি বামন গ্রহ।
২০০৩ খ্রিষ্টাব্দে নেপচুনের কক্ষপথের পরে, কুইপার বলয়ে আবিষ্কৃত হয় এরিস নামক বামনগ্রহ।
২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে কুইপার বলয়ে আবিষ্কৃত হয় হাউমেইয়া নামক বামনগ্রহ।
সূত্র:
https://solarsystem.nasa.gov/planets/profile.cfm?Object=SolarSys