নক্ষত্রের বিস্ফোরিত হওয়ার সময়ে অবস্থাকে নবতারা বলা হয়। প্রাচীন যুগের মানুষ আকাশের কোনো প্রান্তে নক্ষত্রের এই বিস্ফোরণের সময়, নক্ষত্রটিকে উজ্জ্বভাবে জ্বলে উঠার দশায় দেখতো। সেকালের মানুষ এই দৃশ্য দেখে ভাবতো যে, নতুন তারার জন্ম হলো। এই থেকে নবতারার ধারণা সৃষ্টি হয়েছে। এক দিক থেকে নবতারার সৃষ্টির বিষয়টি সত্য। কারণ বিস্ফোরিত নক্ষত্রটি বিস্ফোরণের ফলে, নবরূপ লাভ করে। তবে বিস্ফোরণের সময়ে ওই নক্ষতটিকে নবতারা বলা যায় কিনা তা নিয়ে বিতর্ক হতেই পারে।
একথা ভাবার কোনো কারণ নেই যে, বিস্ফোরিত নক্ষত্রের আলো অতি উজ্জ্বলভাবে দেখা গেলেই যে নবতারা বলা হবে। কারণ, মহাকাশে বহু নক্ষত্র বিস্ফোরিত হয় এবং সেগুলোর তেমন উজ্জ্বল আলো চমকিতও করে না। সকল ধরনের নবতারার প্রকৃতি বিচার করে আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানী, এগুলোকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করেছেন। ভাগগুলো হলো―
১. প্রথম ধারার নবতারা:
কোনো কোনো লাল দানব তারা (red giant star) অন্তিম দশায় শ্বেত বামন তারায় পরিণত হয়। যদি কোনো নক্ষত্রের মোট ভর সূর্যের ১.৪৪ গুণের সমান বা তার চেয়ে কম হয়, তাহলে ওই নক্ষত্র শ্বেত বামন (white dwarf) তারায় পরিণতি হয়। এই অবস্থায় নক্ষত্রটি সঙ্কুচিত হতে থাকে। কিন্তু নক্ষত্রটি যদি কোনো জোড়াতারা একটি হয়, তা হলে, অপর তারার আকর্ষণে স্ফীত হতে পারে। এবং শেষ পর্যন্ত নাক্ষত্রিক সংঘর্ষে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে।
২. দ্বিতীয়
ধারার অতি নবতারা
যে
সকল নক্ষত্রের
ভর সৌরভরের ৮ গুণ বা তার বেশি হয়, তাদের কেন্দ্রের হাইড্রোজেন ফুরিয়ে
গেলে, একটি হিলিয়াম সমৃদ্ধ নক্ষত্রে পরিণত হয়। এই সময় এদের বাইরের স্তরে প্রচুর
হাইড্রোজেন জমা হয়। যথেষ্ঠ তাপ ও চাপের প্রভাবে হিলিয়াম প্রজ্জ্বলিত হওয়ার আগেই এদের বাইরের
স্তরের হাইড্রোজেন স্তর জ্বলে
উঠে, সে নক্ষত্রগুলো প্রাথমিক পর্যায়ে
লাল দানব তারা
(red giant star)
বলা হয়।
এক সময় এই জাতীয় নক্ষত্রের বাইরের প্রজ্জ্বলিত হাইড্রোজেন স্তরের
জ্বালানি ফুরিয়ে গেলে, লাল দানবতারার অভ্যন্তরে জমে উঠা হিলিয়াম স্তর মাধ্যাকর্ষণের
প্রভাবে সঙ্কুচিত হতে থাকবে। এর ফলে এর আভ্যন্তরীণ
তাপমাত্রা ১০৮
এবং ঘনত্বের পরিমাণ
১০৮
গ্রাম/বর্গ সেন্টিমিটার হবে, তখন নক্ষত্রের ভিতরে জমে থাকা হিলিয়ামের
দহন শুরু হবে। প্রথমাবস্থায় হিলিয়াম সংযোজিত হয়ে বেরিলিয়াম-৮ তৈরি করবে।
এরপর বেরিলিয়াম-৮ এর সাথে আরও একটি হিলিয়ামের সাথে যুক্ত
হয়ে তৈরি হয় কার্বন-১২ তৈরি করবে। এই অবস্থায়
হিলিয়াম
ঝলক (helium
flash)-
এর সৃষ্টি হয়।
এরপর বেরিলিয়ামের সাথে হিলিয়ামের সংযোজনে তৈরি হবে কার্বন। এই প্রক্রিয়ায় ক্রমে ক্রমে লাল দানব তারার অভ্যন্তরে কার্বনের বিশাল ভাণ্ডার গড়ে উঠে।
একটা সময় কার্বন সমৃদ্ধ লাল দানব তারাটিই
কার্বন তারায়
(Carbon
Star)
পরিণত হয়। এদের উপরিতলের
তাপমাত্রা থাকে ২০০০-৩০০০ কেলভিন। এই নক্ষত্রের বাইরের স্তরের জমে থাকা
কার্বন নক্ষত্রে লাল আলোকে শোষণ করে।
এরপর আরো ভারি নক্ষত্রের ক্ষেত্রে পর্যায়ক্রমে
কার্বন দহন প্রক্রিয়া,
নিওন
দহন প্রক্রিয়া,
অক্সিজেন
দহন প্রক্রিয়া,
সিলিকন দহন প্রক্রিয়া অতিক্রম করে এবং নক্ষত্রটি একটি লৌহ সমৃদ্ধ
নক্ষত্রে পরিণত হয়। মূলত এই অবস্থায় নক্ষত্রের অভ্যন্তরে লৌহ-নিকেলের
একটি ভারি কেন্দ্র তৈরি হয়। মূলত স্বল্পসময়ের জন্য কিছু বিক্রিয়ায় লৌহ
নক্ষত্রের অভ্যন্তরে চললেও―
শেষপর্যন্ত নক্ষত্রটি এক সময় লৌহ-দহনের সকল ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। এর ফলে
নক্ষত্রটি সঙ্কোচনের চরম পর্যায়ে পৌঁছে যায়। এই সময় নক্ষত্রটির
অভ্যন্তরে ১০০০০ কোটি কেলভিনের বেশি তাপ উৎপন্ন হবে এবং এর লৌহ
পরমাণুগুলো পারস্পরিক সংঘর্ষে ধ্বংস হয়ে যাবে। এই সংঘর্ষের কারণের
উৎপন্ন শক্তিকে নক্ষত্রের মাধ্যকর্ষণ শক্তি পরাভূত করে। এর ফলে
নক্ষত্রের কেন্দ্র সঙ্কুচিত হলেও কুণ্ডলিত হয়ে পড়ে। এই কুণ্ডলিত শক্তি
নক্ষত্রকে আবদ্ধ করে ফেলে এবং প্রবলভাবে ধাক্কা দেয়। এর প্রবল
ঘাত-তরঙ্গের (shock
wave)
সৃষ্টি করে এবং নক্ষত্রের বাইরের স্তরকে উত্তপ্ত করে তোলে। এই অবস্থায়
নক্ষত্রের বাইরের স্তরে নতুন মৌলিক পদার্থ এবং তেজস্ক্রিয় সমস্থানিক
পরমাণু তৈরি করে। এই অবস্থায় এই সকল পদার্থ নক্ষত্র থেকে প্রচণ্ড গতিতে
বাইরে ছিটকে পড়ে। এই অবস্থায় নক্ষত্রটি তীব্র আলো প্রদান করে এবং দূর
থেকে নক্ষত্রটিকে বিস্ফোরিত অবস্থায় দেখা যায়। নক্ষত্রের এই দশাকেই
অতিনবতারা বলা হয়।
নক্ষত্রের বিস্ফোরণের পর মূল নক্ষত্রটি বেশ ছোটো হয়ে যায় এবং অভ্যন্তরে বিপুল পরিমাণ নিউট্রন কণা জমা হয়। নিউট্রন কণা সঙ্কুচিত হয়ে ভারি নক্ষত্রের জন্ম দেয়। এই নক্ষত্রকে তখন বলা হয় নিউট্রন তারা।
সূত্র :
তারা পরিচিত। মোহাম্মদ আব্দুল
জব্বার। বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল এসোসিয়েশান। ফেব্রুয়ারি ১৯৯৪
বাংলা একাডেমী বিজ্ঞান বিশ্বকোষ। ১-৫ খণ্ড।
http://en.wikipedia.org/wiki/
contemporary Astronomy/ Jay M. Pasachoff।
2nd edition
A
Brief history of time /
Stephen Hawking
Essays about Univesre/Boris A. Vorontrov-Vel'Yaminov/Mir
Pulishers Moscow/1985
http://imagine.gsfc.nasa.gov/docs/science/know_l1/supernovae.html