কৃষ্ণগহ্বর
ইংরেজি :
black hole।
কৃষ্ণগহ্বর হলো নক্ষত্রের শেষ দশা।
বিজ্ঞানী
চন্দ্রশেখর-এর
উদ্ভাবিত চন্দ্রশেখর সীমা অনুসারে, যদি কোনো
নক্ষত্রের মোট ভর সূর্যের ১.৪৪ গুণের সমান বা তার চেয়ে
কম হয়, তাহলে ওই নক্ষত্র
শ্বেত বামন (white
dwarf)
তারায় পরিণতি হয়। কিন্তু যে সকল
নক্ষত্রের ভর চন্দ্রশেখর সীমা চেয়ে বড় হয়, অর্থাৎ সূর্যের ভরের চেয়ে ১.৪ বা ৩.২ গুণ
বেশি হয়, সেগুলো নিউট্রন তারা বা কোয়ার্ক তারায় পরিণত হয়। আর
সূর্যের চেয়ে ১০ থেকে ২৫ গুণ ভারি নক্ষত্র কৃষ্ণগহ্বরে পরিণত হয়।
কৃষ্ণগহ্বরের রয়েছে প্রচণ্ড মাধ্যাকর্ষণ শক্তি। এর আকর্ষণকে মহাকাশের কোনো বস্তুই অগ্রাহ্য করতে পারে না। এমন কি আলো পর্যন্ত পালিয়ে যেতে পারে না। ফলে মহাকাশে একে একটি কালো গর্তের মতো মনে হয়। এই কারণের এর নামকরণ করা হয়েছে কৃষ্ণ-গহ্বর।
কৃষ্ণগহ্বর গবেষণা কালানুক্রমিক ধারা
১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দে জন হুইলার নামক একজন মার্কিন বিজ্ঞানী প্রথম
black hole
শব্দটি সৃষ্টি করেন। তিনি এই শব্দটি মহাকাশের একটি চিত্রময় নকশা তৈরির জন্য ব্যবহার করেছিলেন। সে সময়ে
আলো সম্পর্কে দুটি ধারণা প্রতিষ্ঠিত ছিল। এর একটি ছিল নিউটনীয় তত্ত্ব। এই
তত্ত্বে বলা হয়েছে-
আলো একটি তরঙ্গমাত্র।
আলো সম্পর্কে দ্বিতীয় তত্ত্বটি হলো- কোয়ান্টাম
বলবিদ্যার কণা তত্ত্ব। এই তত্ত্বে বলা হয়,
আলো অতিক্ষুদ্র কণা দিয়ে গঠিত। প্রথম
তত্ত্ব অনুসারে
আলোর গতি অসীম বলে ধরা হয়। এই ধারণা অনেকদিন ধরে প্রতিষ্ঠিত ছিল।
বিজ্ঞানী রোমার
আলোর গতিবেগ নির্ধারণ করেন- প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৩,০০,০০০
কিলোমিটার।
১৮৮৩ খ্রিষ্টাব্দে জন মাইকেল (John Michell) তাঁর একটি গবেষণা পত্রে জানান যে, বেশি ভর ও ঘনত্ব আছে এমন নক্ষত্র থেকে কোনো আলো নির্গত হতে পারে না। যেহেতু ওই জাতীয় নক্ষত্র থেকে আলো বেরিয়ে আসতে পারবে না, তাই ওই নক্ষত্রগুলো দেখা যাবে না। ফলে নক্ষত্রটিকে একটি কালো গহ্বর মনে হবে।
অতিভরবিশিষ্ট তারকার অস্তিত্ব নিয়ে একটি সংশয় দীর্ঘদিন ছিল। ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দ চন্দ্রশেখর সুব্রহ্মণ্যন তাঁর শ্বেত বামন তারা বিষয়ক একটি তত্ত্ব তৈরি করেন। এই তত্ত্ব অনুসারে, কোনো তারার ভর আমাদের সূর্যের চাইতে দেড় গুণ বেশি ভর সম্পন্ন হলে, তা 'নিউট্রন তারা বা কৃষ্ণবিবরে পরিণত হবে। আর এর চাইতে কম ভরবিশিষ্ট তারা শ্বেত বামন তারা-য় পরিণত হবে। বর্তমানে এই ১.৪৪ সৌরভর-কে (এর মান ১.৪৪ (২.৮৬৪ ×১০৩০ কেজি) আদর্শ হিসাবে ধরা হয়। যে সকল নক্ষত্রের ভর 'নিউট্রন তারা -র চেয়ে বেশি, তারই কৃষ্ণগহ্বরের পরিণত হবে।
অতিভর বিশিষ্ট নক্ষত্রের পাশ দিয়ে আলো যাওয়ার সময় গতিপথ পরিবর্তিত হয়। এই বিষয়ে ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দে জার্মান বিজ্ঞানী ওপেনহেইমার ব্যাখ্যা করেন। ওপেনহেইমার-এর তত্ত্বানুসারেও দেখা যায়, ভারি নক্ষত্রের বাইরের থেকে আগত আলো বাঁকা হয়ে নক্ষত্রের অভ্যন্তরে ঢুকে যাবে এবং তা নক্ষত্রের কেন্দ্রে হারিয়ে যাবে। একই কারণে ওই নক্ষত্র থেকে উৎপন্ন আলো নির্গত হওয়ার পর, তা বেঁকে গিয়ে ওই নক্ষত্রের কেন্দ্রে ফিরে যাবে।
১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দে ওয়ার্নার ইজরায়েল জানান, কৃষ্ণগহ্বর ঘূর্ণায়মান নয়। এদের আয়তন নির্ভর করে এদের ভরের উপর। আর ভরের উপর নির্ভর করে এদের মাধ্যাকর্ষণ শক্তির। এদের আকার হবে নিখুঁত গোলীয়। কারণ একমাত্র ঘূর্ণনের ফলেই নক্ষত্রের বিষুব অঞ্চল স্ফিত হয় এবং এর ফলে নক্ষত্র নিখুঁত গোল হয় না।
কৃষ্ণগহ্বরের বাইরের দিকে রয়েছে একটি প্রান্তীয় দিগন্ত বলয়। একে বলা হয়
The Event Horizon।
এই অঞ্চলের প্রান্তে রয়েছে
ফোটন বলয়
Photon Sphere। এই ফলে
ফোটনকণাগুলো কৃষ্ণগহ্বরে কেন্দ্রকে ঘিরে আবর্তিত হয়।
কৃষ্ণগহ্বরের ভিতরে তৈরি হয় ব্স্তু ও প্রতিবস্তু। এদের ভিতরে ঘটতে থাকে সংঘর্ষ। এই
প্রক্রিয়াটি হকিং বিকীর্ণ নামে অভিহিত করা হয়। স্টিফেন হকিং-এর মতে ব্স্তু ও
প্রতিবস্তুর ঘটনাটি যখন ব্ল্যাকহোলের
প্রান্তে ঘটে, তখন কণাগুলোর এক অংশ কৃষ্ণগহ্বর শোষণ করে নেয় এবং অপর অংশ সেখান হতে
মুক্ত হয়ে বাস্তব কণায় পরিণত হয়। এভাবে কৃষ্ণগহ্বর ক্রমশ ভর হারাতে থাকে এবং এক
পর্যায়ে মহাশূন্যে বিলীন হয়ে যায়।
সূত্র :
তারা পরিচিত। মোহাম্মদ আব্দুল
জব্বার। বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল এসোসিয়েশান। ফেব্রুয়ারি ১৯৯৪
বাংলা একাডেমী বিজ্ঞান বিশ্বকোষ। ১-৫ খণ্ড।
http://en.wikipedia.org/wiki/
contemporary Astronomy/ Jay M. Pasachoff।
2nd edition
A
Brief history of time /
Stephen Hawking
Essays about Univesre/Boris A. Vorontrov-Vel'Yaminov/Mir
Pulishers Moscow/1985