আণবিক মেঘ
ইংরেজি: Molecular cloud

গ্যাসীয় পদার্থ এবং মহাকাশীয় ধূলিকণা নিয়ে গঠিত মহাকাশীয় মেঘকে আণবিক মেঘ বলা হয়।  বিগব্যাং-এর ১৫ কোটি বছর পরে (১৩৬৫ কোটি খ্রিষ্ট-পূর্বাব্দ) পদার্থের আয়োনিত দশা থেকে স্থায়ী  হাইড্রোজেন, হিলিয়াম লিথিয়াম নিয়ে আদি আণবিক মেঘ সৃষ্টি হয়েছিল। তবে এর সাথে ছিল আয়োনিত দশার হাইড্রোজেন হিলিয়ামের পরমাণু।

এরই মধ্যে মহাকাশে ব্যাপকভাবে আণবিক মেঘ (molecular cloud) ছড়িয়ে পড়েছিল। এ সকল মেঘে ফোটন কণাও ছিল। তবে এই সময় কোন নক্ষত্রের জন্ম না হওয়ার কারণে মহাকাশ অন্ধকারের ডুবে ছিল। এই কারণে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এর নামকরণ করেছেন অন্ধকার আমল (Dark Age)। এই আমলকে পুন সংযোজন আমলের শেষার্ধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই আমলের শুরুতে মহাবিশ্বের তাপমাত্রা ৪০০০ কেলভিন। আণবিক মেঘ সৃষ্টির পর থেকে এর তাপমাত্রা হ্রাস পেতে থাকে। আর অন্ধকার যুগের শেষে এসে মহাবিশ্বের তাপমাত্রা নেমে এসেছিল ৬০ কেলভিনে।

বিগব্যাং-এর পর বিস্ফোরণের ধাক্কায় এই আণবিক মেঘমালা বিশাল অঞ্চল জুড়ে মহাকাশের কেন্দ্র থেকে দূরে সরে যাচ্ছিল। এর কোনো কোনোটির ব্যাসার্ধ ছিল ৩০০-৬০০আলোকবর্ষেরও বেশি। বিজ্ঞানীরা এই জাতীয় বৃহৎ আণবিক মেঘকে দানবীয় আণবিক মেঘ (
giant molecular cloud (GMC)) নামে অভিহিত করেছেন। জ্যোতির্বিজ্ঞানের ভাষায় এই জাতীয় বিশাল মেঘের উপাদানসমূহের ঘনত্ব ছিল প্রায় ১০ লক্ষ অণু/ঘন সেন্টিমিটার বা তার চেয়ে বেশি। এর চেয়ে ছোটো মাপের আণবিক মেঘগুলোর ভর ছিল সূর্যের ভরের ১০০ গুণ। এদেরকে বলা হয় ছোটো আণবিক মেঘ (Small molecular clouds)। আর সূর্যের সমান বা সূর্যের চেয়ে ৫০গুণ ভরযুক্ত মেঘগুলোকে বলা হয় বক গ্লোবুল ( Bok globule)

চলমান দশায় এই মেঘগুলোর কোথাও কোথাও ছিল হাল্কা স্তর, কোথাও কোথাও সৃষ্টি হয়েছিল ঘনস্তর। ঘন গ্যাসীয় অঞ্চলগুলোর কোথাও কোথাও আবার সৃষ্টি হয়েছিল আবর্ত। এই আবর্তনের ফলে সৃষ্টি হয়েছিল তীব্র আকর্ষণী কেন্দ্র। ফলে কেন্দ্র ক্রমান্বয়েহাইড্রোজেনের ঘূর্ণায়মান গোলকের উদ্ভব হয়েছিল। এই গোলকের ভরের আকর্ষণে এবং ঘুর্ণনগতিজনীত টানে আশাপাশের রাশি রাশি হাইড্রোজেন সঞ্চিত হয়েছিল।  এর মধ্য দিয়ে আদি নক্ষত্র তৈরির ক্ষেত্রে প্রস্তুত হয়েছিল। কিন্তু আদি কালের আণবিক মেঘের সেই সব সকল গোলকের ভাণ্ডারে সমপরিমাণ হাইড্রোজেন জমা পড়ে নি। ফলে ভরের বিচারে নানা ধরনের গোলক তৈরি হয়েছিল।

আদিকালের আণবিক মেঘের উপদান ছিল হাইড্রোজেন, হিলিয়াম লিথিয়ামের অণু। এছাড়াও সেকালের আণবিক মেঘে আয়োনিত কণাও অল্পবিস্তর ছিল।

বর্তমানে আণিবিকগুলোকে দেখা যায় গ্যালাক্সি প্রতিবেশী হিসেবে। এই সব আণবিক মেঘে হাইড্রোজেন হিলিয়াম  ছাড়াও রয়েছে-  কার্বন-ডাই-অক্সাইড, কার্বন মনো-অক্সাইড, মহাজাগতিক ধূলিকণা (কার্বন,
সিলিকন, অক্সিজেন-এর ছোটো কঠিন কণা) ইত্যাদি। কিন্তু  এদের ঘন এলাকা থেকে শত থেকে সহস্র সংখ্যক সূর্যের মতো নক্ষত্রের জন্ম হওয়া সম্ভব। তবে নক্ষত্র সৃষ্টির আগে আণবিক মেঘের এসব ঘন অঞ্চলের তাপমাত্রা থাকে ১০ থেকে ২০ কেলভিন।

এই সব আণবিক মেঘের কোনো কোনোটি থেকে পরবর্তী সময়ে নক্ষত্র জন্ম গ্রহণ করেছিল। সাধারণত যে সব আণবিক মেঘ থেকে নক্ষত্র সৃষ্টির পরিবেশ সৃষ্টি হয়, তাদেরকে বলা হয় আন্তঃনাক্ষত্রিক মেঘমালা (interstellar cloud)
এই আণবিক মেঘ থেকেই সৃষ্টি হয়েছিল নানাধরণের নক্ষত্র, নীহারিকা, গ্যালাক্সি ইত্যাদি। এই আমলের শেষের দিকে কিছু নক্ষত্র তৈরি হয়েছিল। যেমন-