আণবিক মেঘ
ইংরেজি:
Molecular cloud
গ্যাসীয় পদার্থ এবং মহাকাশীয় ধূলিকণা নিয়ে গঠিত মহাকাশীয় মেঘকে আণবিক মেঘ বলা হয়।
এই মেঘের প্রধান উপকরণ হাইড্রোজেন। এর সাথে থাকে কার্বন মনোক্সাইড,
অ্যামোনিয়া ইত্যাদি
বিগব্যাং-এর ১৫ কোটি বছর পরে (১৩৬৫ কোটি খ্রিষ্ট-পূর্বাব্দ) পদার্থের আয়োনিত দশা থেকে স্থায়ী হাইড্রোজেন,
হিলিয়াম ও
লিথিয়াম নিয়ে আদি আণবিক মেঘ সৃষ্টি হয়েছিল। তবে এর সাথে ছিল আয়োনিত দশার
হাইড্রোজেন ও
হিলিয়ামের পরমাণু।
মূলত
ফোটন অন্তঃযুগের
পরে তাপমাত্রা ৩০০০ কেলভিন (২৭২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস)
নেমে এসেছিল। এই পরিবেশে- প্রোটন
ও
নিউট্রন মিলিত হয়ে আয়োনিত
হাইড্রোজেন ও
হিলিয়াম পরমাণু তৈরি করেছিল।
বিগব্যং-এর ৩ মিনিটের মধ্যে তৈরি হয়েছিল
বিশুদ্ধ গ্যাস। এতে
ছিল ৭৫ ভাগ
হাইড্রোজেন
এবং ২৫ ভাগ
হিলিয়াম।
আণবিক মেঘ সৃষ্টির প্রথম পর্যায় ছিল উল্লিখিত দুটি গ্যাস ছাড়াও ছিল
লিথিয়ামের অণু। তবে এই গ্যাসে
কার্বন,
লৌহ ইত্যাদি
সামান্য পরিমাণ ছিল। এই
সামান্য পরিমাণকে অগ্রাহ্য করে ধাতু-মুক্ত গ্যাস বলা হয়। এরই মধ্যে এ সকল মেঘে ফোটন কণাও ছিল। তবে এই সময়
কোন নক্ষত্রের জন্ম না হওয়ার কারণে মহাকাশ অন্ধকারের ডুবে ছিল। এই কারণে
জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এর নামকরণ করেছেন অন্ধকার আমল
(Dark Age)। এই আমলকে পুন
সংযোজন আমলের শেষার্ধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই আমলের শুরুতে মহাবিশ্বের
তাপমাত্রা ৩০০০ কেলভিন। আণবিক মেঘ সৃষ্টির পর থেকে এর তাপমাত্রা হ্রাস পেতে
থাকে। আর অন্ধকার যুগের শেষে এসে মহাবিশ্বের তাপমাত্রা নেমে এসেছিল ৬০ কেলভিনে।
আণবিক মেঘের প্রথম দশায় ছিল- আদি
বিশুদ্ধ গ্যাস, ছোট অন্ধকার বস্তু
(dark matter halos),
এদের সৌর ভর ছিল~১০৫–১০৬ । অন্ধকার বস্তুর মহাকর্ষে
হাইড্রোজেন
এবং হিলিয়াম
একটি ক্ষুদ্র স্তরে জমা হয়। এই সময় তাপমাত্রা ১০০০ কেলভিন থেকে ২০০ কেলভিনে নেমে আসে।
ফলে হায়োনিত হাইড্রোজোন থেকে সৃষ্টি হয়- হাইড্রোজেন অণু।
বিগব্যাং-এর
৩৮০,০০০ বছর পর মহাকাশে ব্যাপকভাবে আণবিক মেঘ ছড়িয়ে পড়েছিল।
প্রথম
নক্ষত্র প্রজন্ম তৈরি হয়েছিল এই
বিশুদ্ধ গ্যাস থেকে।
বিগব্যাং-এর পর বিস্ফোরণের ধাক্কায় এই আণবিক মেঘমালা বিশাল অঞ্চল জুড়ে মহাকাশের কেন্দ্র থেকে দূরে সরে যাচ্ছিল।
এর কোনো কোনোটির ব্যাসার্ধ ছিল ৩০০-৬০০আলোকবর্ষেরও বেশি। বিজ্ঞানীরা এই জাতীয় বৃহৎ
আণবিক মেঘকে দানবীয় আণবিক মেঘ (giant molecular cloud (GMC))
নামে অভিহিত করেছেন।
জ্যোতির্বিজ্ঞানের ভাষায় এই জাতীয় বিশাল মেঘের উপাদানসমূহের ঘনত্ব ছিল প্রায় ১০ লক্ষ অণু/ঘন সেন্টিমিটার বা তার চেয়ে
বেশি। এর চেয়ে ছোটো মাপের আণবিক মেঘগুলোর ভর ছিল সূর্যের ভরের ১০০ গুণ। এদেরকে
বলা হয় ছোটো আণবিক মেঘ
(Small
molecular clouds)। আর
সূর্যের
সমান বা সূর্যের চেয়ে ৫০গুণ ভরযুক্ত মেঘগুলোকে বলা হয় বক গ্লোবুল
( Bok globule)।
চলমান দশায় এই মেঘগুলোর কোথাও কোথাও ছিল হাল্কা স্তর, কোথাও কোথাও সৃষ্টি হয়েছিল ঘনস্তর।
ঘন গ্যাসীয় অঞ্চলগুলোর কোথাও কোথাও আবার সৃষ্টি হয়েছিল আবর্ত।
এই আবর্তনের ফলে সৃষ্টি হয়েছিল তীব্র আকর্ষণী কেন্দ্র। ফলে কেন্দ্র ক্রমান্বয়ে হাইড্রোজেনের ঘূর্ণায়মান গোলকের উদ্ভব হয়েছিল।
এই গোলকের ভরের আকর্ষণে এবং ঘুর্ণনগতিজনীত টানে আশাপাশের রাশি রাশি
হাইড্রোজেন সঞ্চিত হয়েছিল।
এর মধ্য দিয়ে আদি
নক্ষত্র তৈরির ক্ষেত্রে প্রস্তুত হয়েছিল।