জর্জ গ্যামো
(১৯০৪-১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দ)
ইউক্রেনের পদার্থ বিজ্ঞানী ও বিগব্যাং-এর বিশ্লেষক। যদিও বেলজিয়ামের পদার্থ  বিজ্ঞানী জর্জ লেমিটরকে বিগ ব্যাং সূত্রের জনক বলা হয়। কিন্তু অনেক পরে হলেও- জর্ক গ্যামো এই বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক গবেষণা করেছিলেন। এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোকপাত করেছিলেন তাঁর বিভিন্ন রচনায়।

তাঁর প্রকৃত নাম জর্‌জি আন্তোনোভিচ গ্যামোভ
(Georgiy Antonovich Gamov)। ১৯০৪ খ্রিষ্টাব্দে তৎকালীন রুশ সাম্রাজ্যের, অন্তর্গত ইউক্রেনের ওডেসাতে জন্মগ্রহণ করেন। পারাবিরিক সূত্রে তিনি ছিলেন ইউক্রেনের অধিবাসী। তাঁর পিতা ছিলেন স্কুলের রুশ ভাষার শিক্ষক। আর ছিলেন স্থানীয় বালিকা বিদ্যালয়ের ভূগোলের শিক্ষক। গ্যামো তাঁর মায়ের কাছ থেকে ফরাসি এবং গৃহশিক্ষকের কাছে শেখেন জার্মান ভাষা। পরে তিনি কলেজ জীবনে ইংরেজি ভাষা শেখেন। সব মিলিয়ে তাঁর জীবনের প্রথমাংশ জুড়ে ছিল ভাষা-শিক্ষার স্তর। কিন্তু তিন ভাষাবিদ না হয়ে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে পদার্থ বিজ্ঞানের ছাত্র হয়ে উঠেছিলেন।

১৯২২-২৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ওডেসার
Institute of Physics and Mathematics -এ পদার্থ বিজ্ঞান ও গণিতের পাঠ নেন। এরপর ১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি লেলিনগ্রাড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। তবে এর মধ্যে তিনি কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের  Theoretical Physics Institute  -এর গবেষণার কাজ শুরু করেন ১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দ থেকেই। এই প্রতিষ্ঠানে তিনি ছিলেন ১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত। এই প্রতিষ্ঠানে থাকাকালীন ১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি নিউক্লিয়াসের আলাফ ক্ষরণ তত্ত্বের সমাধান দেন। এই বছরে তিনি সোভিয়েত রাশিয়ার এ্যাকডেমি অফ সায়েন্সের সদস্যপদ লাভ করেন।

১৯৩১-৩৩ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি লেনিনগ্রাদের রেডিয়াম ইন্সটিটিউটে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগে গবেষণা করেন।

১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি সস্ত্রীক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যান এবং সেখানকার ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন।

১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর প্রথম পুত্র ইগোর গ্যামোভের জন্ম হয়।

১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দে বিজ্ঞানী Edward Teller সাথে বিটা ক্ষরণ নিয়ে গবেষণার শেষ করেন এবং এই বিষয়ে 'Gamow–Teller selection rule' প্রকাশিত হয়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি যদিও তিনি পারামণবিক বোমা তৈরির প্রক্রিয়ার সাথে সরাসরি যুক্ত ছিলেন না। কিন্তু প্রযুক্তিগত সমাধানের জন্য মার্কিন নৌবাহিনীর সাথে যুক্ত ছিলেন।

১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দের পরে তিনি সৌরজগতের উৎপত্তি বিষয়ে আগ্রহী হয়ে উঠেন।

আলফার

বেথে

১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে Physical Review পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল 'The Origin of Chemical Elements" নামক একটি প্রবন্ধ। এই প্রবন্ধটি রচনা করেছিলেন গ্যামো এবং তাঁর ছাত্র আলফার। লেখক হিসেবে তিনি দেখলেন গ্রিক বর্ণমালা অনুসারে এই দুইজনের নাম থেকে আলফা এবং গামা গ্রহণ করা যায়, কিন্তু বিটা বর্ণটি নেই। তাই এই অভাব পূরণের জন্য, তাঁর বন্ধু হ্যান্স বেথে থেকে বিটা নিয়ে 'আলফা-বিটা-গামা' নামে প্রকাশ করেছিলেন। অবশ্য হ্যান্স বেথে বিষয়টা পরে জানতে পারেন এবং এই বিষয়ের উপর বিস্তারিত কাজও করেছিলেন। গ্যামোর এই রসিকার সূত্রে- এই প্রবন্ধটি 'আলফা-বিটা-গামা' নামেই সর্বাধিক পরিচিত।

১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি নক্ষত্র এবং গ্যালাক্সি নিয়ে গবেষণা করেন। একই সময়ে তিনি জর্জ লেমিটরর বিগব্যাং সূত্রকে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করে- একে গ্রহণযোগ্য তত্ত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন।

১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দে জীবদেহের ডিএনএ-এর গঠন সম্পর্কে আলোকপাত করেন মার্কিন বিজ্ঞানী জেডি ওয়াটসন, এমএইচএফ উইলকিন্স এবং ব্রিটিশ বিজ্ঞানী এফএইচসি ক্রিক।  তাঁরা বের করেন যে, ডিএনএতে চারটি উপাদান বিদ্যমান- এডিনিন, গুয়ানিন, থায়ামিন ও সাইটোসিন। কিন্তু তখনও তাঁরা এ সকল উপাদানে ক্রমনির্দেশ উপস্থাপন করতে সক্ষম হন নি। গ্যামো এই সমস্যা সমাধানের পথনির্দেশ দিয়েছিলেন।

১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলেন। এই বৎসরে তিনি ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটং প্রফেসর হিসেবে শিক্ষাদান শুরু করেন।

১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি কোলোরোডা বোলডার বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন। এই বছরে তাঁর সমর্থন ও সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠিত হয়
Physical Science Study Committee। এই বছরেই তাঁর প্রথম স্ত্রীর সাথে বিচ্ছেদ ঘটে। ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর পুস্তকের সম্পাদিকা বারবারা পার্কিন্স-এর সাথে বিবাহ হয়।

১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি কলোরোডা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানহাটন প্রকল্পে ফ্রাঙ্ক ওপেনহাইমারের সাথে কাজ করেন।
১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর রচিত গ্রন্থ
The Atom and its Nucleus প্রকাশিত হয়।
১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ আগষ্ট মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কলোরোডাতে মৃত্যুবরণ করেন।


সূত্র :
https://en.wikipedia.org/wiki/George_Gamow