ইব্রাহিম আঃ
ইহুদি, খ্রিষ্টান ও ইসলাম
ধর্মাবলম্বীদের কাছে সম্মানিত নবি। তিনি ইসলাম ধর্মের একজন গুরুত্বপূর্ণ নবি ( সৃষ্টিকর্তার সাথে তাদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যোগাযোগ বা বার্তা বিনিময় হয়েছে) ও রাসূল
(আল্লাহ্'র প্রেরিত বার্তাবাহী ব্যক্তিত্ব, যিনি আল্লাহ্র কাছ থেকে পুস্তক প্রাপ্ত হয়েছেন)। ইসলাম ধর্মে এই নবির সম্মানার্থে-
বলা হয়- হযরত ইব্রাহিম আলাইহি সালাম। এর সংক্ষিপ্ত লিখিত রূপ হযরত ইব্রাহিম আঃ।
ইহুদি ধর্মের অনুসরণীয় গ্রন্থ তোরাহের (Tanakha)
-এর
Genesis,
(আদিপুস্তক)-
১১: ২৬ থেকে ২৫: ১১ পর্যন্ত আব্রাম
(Abram)
নামে এই নবির বিবরণ লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। খ্রিষ্টধর্মের অনুসরণীয় গ্রন্থ বাইবেলের
আদিপুস্তকে
তোরাহের কাহিনিটিই গৃহীত হয়েছে। ইসলামধর্মের অনুসরণীয় গ্রন্থ আল্ কোরআনে এই নবীর
কাহিনি বিভিন্ন সুরায় প্রসঙ্গক্রমে এসেছে। এই প্রসঙ্গ অনুসরণ করে এই নবির পূর্ণ
জীবনী পাওয়া যায় না।
- [Genesis,
11:26-25:11. Hebrew-English
Tanakha, The Jewish Bible. Varda Books. 2009, page 19-45]
- আদি পুস্তক। ১১:২৬-
২৫-১১। পবিত্র বাইবেল। পুরাতন ও নূতন নিয়ম। বাংলাদেশ বাইবেল সোসাইটী ঢাকা।
পৃষ্ঠা: ১৪-৩৪]
- পবিত্র কোরআনুল
করীম। অনুবাদ মাওলানা মুহিউদ্দীন খান। খাদেমুল- হারানাগিন বাদশা ফাহদ কোররআন
মুদ্রণ প্রকল্প।
উল্লেখিত তিনটি
ধর্মগ্রন্থ অনুসারে ইব্রাহিম (আঃ) সম্পর্কে যা জানা যায়, তা হলো-
- বংশানুক্রমিক তালিকায়- আদি পিতা আদম (আঃ) -এর উত্তরপুরুষ ছিলেন নুহ (আঃ)। নুহ
(আঃ)-এর সংঘটিত হয়েছিল মহাপ্লাবন। তাঁর পুত্ররা ছিলেন শেম. হাম, ও যাফেত। এঁদের
সন্তানদের জন্ম হয়েছিল মহাপ্লাবনের পরে। এঁদের প্রত্যেকের সন্তানদের তালিকা
পাওয়া যায়
তোরাহ এবং বাইবেলের পুরাতন নিয়মে। সব মিলিয়ে এঁরা একটি জনগোষ্ঠীতে পরিণত হয়েছিল।
তখন এঁরা একই ভাষায় কথা
বলতেন। একদিন এঁরা শীনার দেশের সমভূমিতে এসে ইট তৈরি করে, তাই আগুনে পুড়িয়ে একটি
শহর তৈরির পরিকল্পনা গ্রহণ করলো। ধীরে ধীরে এঁরা ধাপে ধাপে বিশাল অট্টালিকা তৈরি
করলো। সদাপ্রভু (Lord)
মানুষের এই কর্মকাণ্ড দেখে ভাবলেন- এরা যদি
একত্রিত হয়ে কোনো কিছু করতে চায়, তাহলে এদের অসাধ্য কিছুই থাকবে না। তাই তিনি
ঐক্যের বন্ধন ভাষাকে গোত্রে গোত্রে ভাগ করে দিলেন। এর ফলে বিভি্ন্ন ভাষাভিত্তিক
গোত্রগুলো ভাষাভেদের জন্য ঐক্য হারিয়ে ফেললো। এবং তাদের একতা বিনষ্ট হওয়ার পর
এই অট্টালিকা তৈরিও বন্ধ হয়ে গেলো। শেষ পর্যান্ত ভাষাভিত্তিক গোষ্ঠীগুলো নানা
দেশে ছড়িয়ে পড়লো। ভাষাভেদ সৃষ্টির কারণে এই স্থানের নাম রাখা হয়েছিল
বাবেল। এই নগরীতে নুহ (আঃ)-এর পুত্র শেম থেকে গিয়েছিলেন। এই শেমের বংশে
জন্মগ্রহণ করেছিলেন ইব্রাহিম (আঃ)-এর পিতা তোরাহ (আঃ)।
- তোরাহ (আঃ)-এর তিন পুত্র ছিলেন আব্রাহাম, নাহোর ও হারান।
হারান তাঁর দুই কন্যার জন্ম দেওয়ার
উর
নগরীতে মৃত্যবরণ করেন। এই দুই কন্যার নাম ছিল মিল্কা এবং ইস্কা। তাঁর অপর
পুত্রের নাম ছিল লোট। নাহোর তাঁর ভাইয়ের মেয়ে মিল্কাকে বিবাহ করেছিলেন। অন্যদিকে ইব্রাহিম (আঃ) বিবাহ করলেন সারাহ নামক এক কন্যাকে।
উল্লেখ্য এই সময় ইব্রাহিম (আঃ)-এর কোনো সন্তান জন্মগ্রহণ করেন নি। একদিন তোরাহ (আঃ) হারান-এর
পুত্র লোট এবং ইব্রাহিম (আঃ) এবং তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে উর নগরী ত্যাগ করে- কনান
দেশে আসেন এবং সেখান থেকে
হারান নগরীতে
এসে বসবাস শুরু করেন। এখানে তোরাহ (আঃ)-এর
মৃত্যু হয়।
উল্লেখ্য
খ্রিষ্টপূর্ব ৫০০০-৪১০০ অব্দের দিকে
উর
ছিল
একটি ছোট্ট গ্রাম। খ্রিষ্টপূর্ব ৩৮০০ অব্দের দিকে এই গ্রামটি শহরে পরিণত হয়েছিল।
খ্রিষ্টপূর্ব ২৬০০ অব্দের প্রথম দিকে এই নগরটি নগররাষ্ট্রে পরিণত হয়েছিল। তখন
এই রাষ্ট্রের রাজধানী ছিল উর নগরী। নানা ঘটনার সূত্রে এই নগরীটি পরিত্যক্ত
হয়েছিল।
- একদিন সদাপ্রভু ইব্রাহিম (আঃ)-কে
এই দেশ ত্যাগ করার আদেশ দিলেন। এবং বললেন যে, তিনি তাঁকে এমন একটি দেশ প্রদান
করবেন, যেখানে ইব্রাহিম (আঃ)-এর থেকে মহান জাতির উদ্ভব হবে। এই আদেশের পরে লোট
ও সারাহ এবং তার সহকারীদের সাথে নিয়ে ইব্রাহিম (আঃ)
হারান ত্যাগ করে কনান
দেশে চলে আসেন। তিনি এই দেশের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয়ে সিখেমের পূন্যস্থান হিসেবে
পরিচিত ওক গাছের কাছে আসেন। এই স্থানটি কেন পবিত্র ছিল- তোরাহ বা বাইবেলে
উল্লেখ নেই।
- এখানে এসে সদাপ্রভু
তাঁকে দেখা দিয়ে বললেন যে, এই দেশ তাঁকে প্রদান করা হবে। ইব্রাহিম (আঃ)
সদাপ্রভুর দেখা দেওয়ার স্থানে একটা বেদী তৈরি করলেন। এরপর তিনি বেথেলে (জেরুজালেমের
১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত স্থান, এর অর্থ হলো- ঈশ্বরের আবাস) পূর্বদিকের
পার্বত্য অঞ্চলে তাবু স্থাপন করলেন। এখানেই তিনি সদাপ্রভুর স্মরণে একটি
বেদী তৈরি করলেন। তারপর নানা স্থান ঘুরে তিনি নেগের অঞ্চলের দিকে এগিয়ে গেলেন।
এই সময় এই অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে তিনি মিশরে পথে যাত্রা করেন।
- মিশরে প্রবেশের মুখে ইব্রাহিম (আঃ), তাঁর সুন্দরী স্ত্রী সারাকে
পাওয়ার জন্য তাঁকে হত্যা করতে পারে। তাই স্ত্রীর সাথে পরমার্শ করে- ইব্রাহিম
(আঃ) সারাকে বোন হিসেবে পরিচয় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। মিশরে ঢোকার পর, মিশরীয়রা
সারার রূপে মুগ্ধ হয়ে রাজা ফারাও-এর কাছে তাঁকে পাঠান। আর সারার ভাই হিসেব ইব্রাহিম
(আঃ)-কে প্রচুর উপহার দেন। এই ঘটনার পর সদাপ্রভু ফারাও- এবং তার পরিবারের উপর
নানা দুর্যোগ ঘটাতে থাকলেন। শেষ পর্যন্ত ফারাও বিষয়টি বুঝতে পেরে ইব্রাহিম
(আঃ)-এর কাছে সারাকে ফিরিয়ের দেন এবং মিশর থেকে বের করে দেন। ইব্রাহিম
(আঃ) মিশরে প্রাপ্ত সকল সম্প্দ নিয়ে নেগেব ফিরে আসেন।