উর

প্রাচীন মেসোপটেমিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের প্রাচীন নগরী। এটি এক সময় পারস্য উপসাগরে ইউফ্রেটিস ও টাইগ্রিস নদীদ্বয়ের আদি মোহনার কাছে অবস্থিত। ইউফ্রেটিস নদী সরে যাওয়ার কারণে, নগরীটি ইউফ্রেটিসের দক্ষিণ স্থান পেয়েছে। বর্তমানে ইরাকের নাসিরিয়া নগরী থেকে থেকে ১৬ কিমি (১০ মাইল) দূরে অবস্থিত।

উর ছিল মূলত নগর রাষ্ট্র। প্রাচীন ধ্বংসাবশেষ হিসেবে দীর্ঘদিন অবহেলিত এবং অবস্থায় ছিল এই শহরটি। ইতিমধ্যে লুণ্ঠনকারীরা এবং চোরের দল এ নগরীর অনকে কিছুই নিয়ে গিয়েছিল। উল্লেখ করার মতো ছিল- জগ্গুরাত -সহ ধর্মমন্দির এবং উর-এর রাজকীয় সমাধিস্থল। মূলত উর-এর এই রাজকীয় কবরস্থানই প্রাচীন
মেসোপটেমিয়া সম্পর্কে জানার পথ সুগম করে দেয়।

উর-এর এই রাজকীয় কবরস্থান
যদিও একে রাজকীয় কবরস্থান বলা হয়ে থাকে। কিন্তু বাস্তবে রাজ-পরিবারের সদস্য ছাড়াও অনেকের কবর এখানে ছিল।
১৯২২ খ্রিষ্টাব্দে উর নগরীর সম্পর্কে জানার জন্য পরীক্ষামূলক খাল খনন করা হয়েছিল। প্রত্নতাত্ত্বিক লিওনার্ড উললি ব্রিটিশ মিউজিয়াম এবং ইউনিভার্সিটি অফ পেনসিলভানিয়া মিউজিয়াম অফ আর্কিওলজি অ্যান্ড অ্যানথ্রোপলজির পক্ষে এই খনন কাজ পরিচালনা করেছিলেন। এরপর ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে উরেতে ক্রমাগত খননের ফলে এই রাজকীয় কবরের একটি পূর্ণচিত্র বেড়িয়ে আসে।

উললি প্রাথমিকভাবে ১৮৫০টি কবর আবিষ্কার করেন।  পরে আরো ২৬০টি কবর শনাক্ত করতে সক্ষম হন। এর ভিতরে ষোলটি কবর ছিল- সম্পদ, তাদের সমাধিস্থলের কাঠামো এবং আচার-অনুষ্ঠানের দিক থেকে বাকিদের থেকে আলাদা ছিল। যে সকল পাথরের তৈরি কবরে এবং মূলবান ধন-সম্পদ পাওয়া গিয়েছিল, সেগুলো ছিল রাজবংশের সদস্যদের কবর। পরকালের প্রয়োজন মেটানোর জন্য প্রচুর পরিমাণে সম্পদ সহ তাদের কবরস্থ করা হয়েছিল। অন্যদিকে অধঃস্তন কবরে জিনিসপত্রের কিছুই পাওয়া যায় না। রাজবংশের সদস্যদের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া লাশ দাফন করার পর, তার সেবকদের ওই ব্যক্তির সম্মানে বলি দেওয়া হতো।

রাজকীয় কবরের কেন্দ্র থাকতো প্রধান ব্যক্তির মৃদদেহ। এরপর তাকে ঘিরে ছোটো ছোটো কক্ষের মতো করে অন্যান্য মৃদদেহ রাখা হতো।এই বিশেষরীতিতে রাজবংশের সদস্যকে নল-খাগড়ার মাদুরের উপর শোয়ানো হতো। প্রধান দেহটি ঘিরে পরিচারকরা মৃতদেহ রাখা হতো গর্তের মেঝে এবং দেয়ালেও সারিবদ্ধ ভাবে। ধারণা করা হয়, সমাধিকক্ষে নামার আগে পরিচারকাদের বলিদান করা হতো। রাজাকীয় কবরের ছয় থেকে সত্তর থেকে আশি জন পরিচারিকা সমাধিস্থ করা হয়েছে। কিছু সমাধিতে পুরুষ কঙ্কালের সাথে হেলমেট এবং বর্শা পাওয়া গেছে। এরা প্রবেশদ্বারের সামনে প্রহরী হিসাবে রাখা হয়েছিল। মহিলা পরিচারিকাদের কবর দেওয়া হতো ভিতরের দিকে। এছাড়া প্রধান ব্যক্তির সাথে অন্যন্যা প্রহরী, পরিচারক, সঙ্গীতশিল্পী এবং গরু বা গাধার মতো প্রাণীদের কবর দেওয়া হতো।

কবরগুলোতে পাওয়া গেছে, সিলিন্ডার সিল, গয়না, ধাতুর দ্রব্যাদি, মৃৎপাত্র, বাদ্যযন্ত্র ইত্যাদি। অনেক সিলিন্ডারের সিলগুলিতে মৃতদের নাম লেখা ছিল। রানী পুয়াবির দেহাবশেষের কাছে এরূপ তিনটি সিলিন্ডারের সীল পাওয়া গেছে। এর একটিতে ছিল কিউনিফর্মে লেখা তথ্য। রাজকীয় মহিলা এবং তাদের পরিচারিকাদের কবরে পাওয়া গেছে সোনা, রৌপ্য, ল্যাপিস লাজুলি এবং কার্নেলিয়ান থেকে তৈরি গয়না। এসব গয়নার মধ্যে ছিল বিভিন্ন ধরণের গলার হার, কানের দুল, এবং আংটি রয়েছে। চুলের অলঙ্কারগুলির মধ্যে সোনা ও রৌপ্যের চুলের ফিতা, ল্যাপিস, শেল এবং গোলাপী চুনাপাথর দিয়ে তৈরি সামগ্রী। এছাড়া ছিল নানা ধরনের চিরুনি। কবরস্থানে সামগ্রীর মধ্যে কার্নেলিয়ান পুঁতি পাওয়া গেছে।

অন্যান্য মূল্যবান ধাতব দ্রব্যের মধ্যে ছিল শিরোস্ত্রাণ, ড্যাগার এবং তামা, রূপা এবং সোনার বিভিন্ন পাত্র। একটি সোনার শিরস্ত্রাণ, ছিল
মেসকলমদুগর। শিরস্ত্রাণটি একটি একক সোনার টুকরো দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল। এটি তৈরি করতা হয়েছিল পরচুলার মতো করে।

উর-এ প্রাপ্তদের দ্রব্যাদির ভিতরে ছিল বহু বাদ্যযন্ত্র। এর ভিতরে উল্লেখযোগ্য বাদ্য যন্ত্র ছিল বীণা। এই যন্ত্রগুলির বেশিরভাগই কাঠের তবে তাতে রূপালী আস্তরণ। নীল এবং সাদা মোজাইকযুক্ত বীণার সাউন্ড বক্স তৈরি করা হয়েছিল। এতে যুক্ত ছিল রূপার ঢালাইকৃত গরুর মাথা এবং রূপার তৈরি বাদন দণ্ড। আরেকটি বীণার আকার ছিল সমুদ্রগামী জাহাজের মতো । অন্যান্য উপকরণের কাঠ, খোল, ল্যাপিস লাজুলি, লাল পাথর, রৌপ্য এবং সোনা ইত্যাদি। উর-এ প্রাপ্ত বীণাগুলোতে শিংযুক্ত গরু ছাড়াও হরিণ, দাড়িওয়ালা ষাঁড় এবং বাছুরের মূর্তি যুক্ত ছিল। এর ভিতরে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়- ষাড়ের মাথাযুক্ত বীণা।

উর নগররাষ্ট্রে রাজবেংশের তালিকা
খ্রিষ্টপূর্ব ২৬০০ অব্দের প্রথম দিকে এই নগররাষ্ট্রের প্রথম রাজবংশের প্রথম রাজা ছিলেন এ-ইমদেগুদ। এর প্রথম রাজবংশের শাসকরা ছিলেন-

https://en-m-wikipedia-org.translate.goog/wiki/Royal_Cemetery_at_Ur?_x_tr_sl=en&_x_tr_tl=bn&_x_tr_hl=bn&_x_tr_pto=wa