জুলফিকার আলী ভুট্টো
াকিস্তানের সাবেক প্রধান মন্ত্রী।

১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দের ৫ই জানুয়ারি, অবিভক্ত ভারতের সিন্ধু প্রদেশের লারকানা'র প্রসিদ্ধ ভুট্টো পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা স্যার শাহ্‌নওয়াজ ভুট্টো ছিলেন সিন্ধুর রাজপুত বংশোদ্ভূত। মায়ের নাম খুরশেদ বেগম। তিনি ভুট্টো বোম্বের (বর্তমান মুম্বাই) ক্যাথেড্রাল অ্যান্ড জন কনোন স্কুলে পড়াশোনা করেন। 

১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর মামাতো বোন শিরিন আমির বেগমকে বিবাহ করেন। সে সময় শিরিন আমিরের বয়স ছিল ২৩। পরে অবশ্য ভুট্টো শিরিনকে ত্যাগ করেন ও আবার বিয়ে করেন।
১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ইউনিভার্সিটি অব সদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ায় রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। পরে অক্সফোর্ড এবং বার্কলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া শেষ করে, তিনি লিঙ্কনস ইনে ব্যারিস্টারি বিভাগে শিক্ষকতা করেন।
১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে পাকিস্তানের ইস্কান্দার মির্জার শাসনামলে মন্ত্রী সভায় যোগ দেন। এই সূত্রে তিনি প্রত্যক্ষভাবে পাকিস্তানের রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন।
১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দে আইয়ুব খানের মন্ত্রীসভায় পররাষ্ট্র মন্ত্রীর দায়িত্ব পান।
১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দে কাশ্মীর নিয়ে পাক-ভারতের যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে ভারত অধ্যুষিত কাশ্মীরে অপারেশন 'জিব্রাল্টারের'-এর অন্যতম রূপকার ছিলেন তিনি।
১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে আইয়ুব খান মন্ত্রীসভা থেকে বাদ দেওয়া হয়।

১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে লাহোরে পাকিস্তানের সবগুলো রাজনৈতিক দলের একটা কনফারেন্স হয়। আর সেই সভাতে  শেখ মুজিবর রহমান তাঁর ঐতিহাসিক ৬ দফা দাবি ঘোষণা করলেন। এই কারণে এই দাবি উত্থাপক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের উপর নিপীড়ন চালান শুরু হয়। এই সময় শেখ মুজিবসহ আরও অনেককে গ্রেফতার করা হয় । পরে শেখ মুজিবর রহমান মুক্তিপেয়ে বাংলাদেশে এসে ১৮ই  মার্চ জনগণের উদ্দেশ্যে ৬ দফা দাবি পেশ করেন। এ সময় শেখ মুজিবর রহমানের  নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে পূর্ব পাকিস্তানে স্বায়ত্বশাসনের তীব্র দাবি উত্থাপিত হয়। ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি একটি আলাদা রাজনৈতিক দল গঠন করেন। এই দলের নামকরণ করা হয়
পাকিস্তান পিপ্‌লস পার্টি।

আয়ুব বিরোধী আন্দোলন ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দের ১০ মার্চ বিরোধী দলগুলোর সাথে রাজনৈতিক আলোচনার জন্য রাওয়ালপিণ্ডিতে আইয়ুব খান গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করেন। জুলফিকার আলী ভুট্টো এই বৈঠক বয়কট করেন। কিন্তু  বঙ্গবন্ধু গোলটেবিল বৈঠকে আওয়ামী লীগের ৬ দফা ও ছাত্র সমাজের ১১ দফা দাবি উপস্থাপন করেন। আয়ুব খান বঙ্গবন্ধুর দাবি অগ্রাহ্য করলে ১৩ মার্চ তিনি গোলটেবিল বৈঠক ত্যাগ করেন এবং ১৪ মার্চ ঢাকায় ফিরে আসেন।

১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে পাকিস্তানের সাধারণ পরিষদের নির্বাচনে তার দল পশ্চিম পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানের আওয়ামী লীগ সার্বিক সংখ্যা গরিষ্ঠতা অর্জন করা সত্ত্বেও তাদের উপর ক্ষমতা অর্পণে ভুট্টো আপত্তি তুলেন।
১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২৫শে মার্চ রাত্রি ১২টার পরে, পাকিস্তানি বাহিনী
অপারেশন সার্চ লাইট -এর মাধ্যমে বাঙালি নিধন অভিযান শুরুর সময়, তিনি ঢাকার ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে ছিলেন। পরে তাঁকে পাকিস্তানে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ২৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশের স্বাধীনতা স্বাধীনতা লাভের পর, তৎকালীন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের স্থলে তিনি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হন।
১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে দেশের সংবিধান পরিবর্তনের মাধ্যমে তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর পদ গ্রহণ করেন।
১৯৭৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি পুনরায় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। কিন্তু অল্পদিনের মধ্যেই জেনারেল জিয়াউল হক দ্বারা সংঘটিত এক সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যূত হন।

১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ই মার্চ এক ব্যক্তির হত্যার ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগে, তিনি আদালত থেকে খুনের মামলায় মৃত্যু পরোয়ানা পান। এ পরোয়ানার পর তিনি আদালতে আপিল কতে রাজি না হলেও তাঁর পক্ষ থেকে পরিবারের সদস্যরা আপিল করেন। ২৪শে মার্চ সুপ্রিম কোর্ট এ আবেদন নাকচ করে দেয়।
১৯৭৯ খ্রিষ্টাব্দের ৪ঠা এপ্রিল সামরিক আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয় এবং রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে তাঁকে ফাঁসী দেওয়া হয়।

তাঁর কন্যা বেনজির ভুট্টো পাকিস্তানের প্রধান মন্ত্রী হয়েছিলেন।