কল্পনা দত্ত
ব্রিটিশ বিরোধী বিশিষ্ট বিপ্লবী।
চট্টগ্রাম জেলার শ্রীপুর গ্রামে ১৯১৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৭শে জুলাই জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম বাবা বিনোদবিহারী দত্ত ও মা শোভনা বালা দত্ত। ১৯২৯ সালে কৃতিত্বের সঙ্গে ম্যাট্রিক পাশ করেন কল্পনা। এরপর কলকাতায় এসে বেথুন কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। শহীদ ক্ষুদিরাম এবং বিপ্লবী কানাই লাল দত্তের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি বেথুন কলেজ-এ গড়ে ওঠা ছাত্রী সংঘ-এ যোগদান করেন। ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দে চট্টগ্রামে ফিরে আসেন। এই সময় পুর্ণেন্দু দস্তিদারের মাধ্যমে তিনি মাষ্টার দা সূর্যসেনের সাথে পরিচিত হন এবং পরে সূর্যসেনের কার্যক্রমের সাথে জড়িয়ে পড়েন। সে সময় মেয়েদের বিপ্লবী দলে নেওয়া যাবে না এমন নীতি ছিল। সূর্যসেন সে নীতিকে সংশোধন করেন এবং কল্পনা দত্ত ও প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারকে দলে গ্রহণ করেন।
কলকাতা থাকার সময় তিনি দেশীয় পদ্ধতিতে বিস্ফোরক তৈরির বিষয়ে আগ্রহী হয়ে উঠেন। পরে দলের জন্য ডিনামাইট-সহ অন্যান্য বিস্ফোরক তৈরিতে কৃতিত্ব দেখান।
১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল মাসে এক বিশেষ
আদালতে রাজদ্রোহ মামলায় অভিযুক্ত ৩২ জন বন্দির বিচার আরম্ভ হয় । সূর্যসেন মাইন
ব্যবহার করে জেলের প্রাচীর উড়িয়ে দিয়ে বন্দীদের মুক্ত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন।
একই সাথে তিনি আদালত ভবন ধ্বংস করারও উদ্যোগ নেন। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন কল্পনা দত্ত। হামলার দিন ধার্য করা হয়েছিল ৩রা জুন।
শেষ মুহূর্তে সর্বশেষ মাইনটি বসানোর সময় পুলিশের নজরে পড়ে যাওয়ায় গোটা পরিকল্পনা
ব্যর্থ হয়ে যায়।
১৩৩২ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ই জুন পটিয়ার ধলঘাটে সাবিত্রী দেবীর বাড়িতে গোপন বৈঠকের জন্য
সূর্যসেন, নির্মল সেন,
প্রীতিলতা ও অপূর্ব সেন মিলিত হন। সেখানে
হঠাৎ গুর্খা সৈন্য নিয়ে হানা দেয় ক্যাপ্টেন ক্যামেরন। এখানকার যুদ্ধে
ক্যাপ্টেন ক্যামেরন নিহত হয়। বিপ্লবীদের পক্ষে শহিদ হয়েছিলেন নির্মল সেন। পরে
পালিয়ে যাওয়ার সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে শহিদ হন অপূর্ব সেন
(ভোলা)। এই সময় সূর্যসেন,
বিশেষভাবে তাঁকে এবং প্রীতিলতাকে
আত্মগোপনের নির্দেশ দেন।
১৯৩৩ খ্রিষ্টাব্দের ১৯মে ভোরে গহিরা গ্রামে গোপন বৈঠকে তিনি অংশগ্রহণ
করেন। এই সময় ওই স্থান পুলিশ ঘেরাও করে। বিপ্লবীদের সাথে পুলিশের মুখোমুখি সংঘর্ষে
মনোরঞ্জন দাস, পূর্ণ তালুকদার এবং নিশি তালুকদার মৃত্যু বরণ করেন। পরে কল্পনা
দত্তকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বিচারে রাজদ্রোহ, ষড়যন্ত্র, বিষ্ফোরক ও অস্ত্র আইনের
অভিযোগে তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দণ্ডে দণ্ডিত করা হয়।
প্রায় ছয় বছর কারাবাসের পর ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দের মে মাসে তিনি মুক্তি পান। স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দে। এরর পর তিনি ভারতের কমুনিষ্ট পার্টিতে যোগদান করেন। ১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দে সিপিআই নেতা পিসি যোশীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
এরপর তিনি চট্টগ্রামে ফিরে
যান এবং দলের মহিলা ও কৃষক সংগঠনকে চাঙ্গা করেন। ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দে সিপিআই প্রার্থী
হয়ে তিনি চট্টগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্র থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
কিন্তু জয়ী হতে পারেন নি। ভারত-পাকিস্তান বিভাজনের পর তিনি ভারতে চলে আসেন। ১৯৯৫
খ্রিষ্টাব্দের ৮ই ফেব্রুয়ারি নয়া দিল্লীতে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
সূত্র :
আমি সুভাষ বলছি। প্রথম খণ্ড । শৈলেশ দে। বিশ্ববাণী প্রকাশনী। কলকাতা-৯। অগ্রহায়ণ, ১৩৭৫।