বেতার জগৎ পত্রিকার ১০ম বর্ষ ২৪শ সংখ্যায় [পৃষ্ঠা ৯৪৯] মুদ্রিত ছবি

১৯১৩ খ্রিষ্টাব্দে নদীয়ার জেলার বীরনগরে জন্মগ্রহণ করেন। এঁর পৈতৃক নিবাস ছিল উত্তর ২৪ পরগণার গোবারডাঙায়। পিতার কর্মসূত্রে এঁদের পরিবার তখন নদীয়াতে থাকতেন। ধারাবাহিক জীবনবৃত্তান্ত পাওয়া যায় না। মূলত নজরুলের সঙ্গীত-রচনার প্রেক্ষাপটের সাথে তাঁর জীবনবৃত্তান্তটু্কুই পাওয়া যায়।

কর্মোপলক্ষে  জগৎ ঘটক কিছুদিন বহরমপুরের গোরাবাজার এলাকায় কাটিয়েছেন। এই সময় জগৎঘটকে মা এবং ভাইবোনদের নিয়ে নলিনাক্ষ সান্যালের বাড়ির কাছেই থাকতেন। ১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ই ডিসেম্বর (শনিবার ২৯ অগ্রহায়ণ ১৩৩০ বঙ্গাব্দ), নজরুল বহরমপুর জেল থেকে মুক্তিলাভ করেন। এই সময় নজরুল তৎকালীন ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম কর্মী নলিনাক্ষ সান্যালের গোরাবাজারের বাড়িতে উঠেছিলেন।

১৬ই ডিসেম্বর (রবিবার ৩০ অগ্রহায়ণ ১৩৩০ বঙ্গাব্দ), বহরমপুর সায়েন্স কলেজ হোস্টেলের ১ নম্বর ব্লকে কলেজের শিক্ষার্থী নজরুলকে সংবর্ধনা দেয়। এই সময় নজরুল-ভক্তদের অনেকেই এই বাড়িতে এসে নজরুলের সাথে দেখা করেছিলেন। এই ঘরোয়া অনুষ্ঠানে প্রথম জগৎ ঘটেকের সাথে নজরুলের পরিচয় ঘটে। পরে তাঁর ছোট ভাই নিতাই ঘটকের পরিবারের অন্যান্যদের সাথে নজরুলের সখ্য গড়ে উঠেছিল।

১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দে জগৎঘটক সপরিবারের উত্তর ২৪ পরগণার গোবরডাঙায় চলে যান। এখানে তাঁর পিসিমার সাথে প্রায়ই কীর্তনের আসরে যেতেন। এই সূত্রে কীর্তন গানের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছিলেন। তাঁর সঙ্গীতশিক্ষাও শুরু হয়েছিল কীর্তন গান দিয়ে। এই সময় তিনি খাটুরা হাইস্কুলে ভর্তি হন। এই স্কুলের শিক্ষক রাধিকারঞ্জন মজুমদারের কাছে সঙ্গীতের পাঠ নেওয়া শুরু করেন।

১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি খাটুরা হাইস্কুল থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন। এরপর তিনি কলকাতার সিটি কলেজে ভর্তি হন এবং এই স্কুল থেকে তিনি ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন। কলকাতার কর্নওয়ালিস স্ট্রিটে থাকার সময়, তিনি দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছে রবীন্দ্রসঙ্গীত এবং স্বরলিপি শেখেন।

১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দে গ্রামোফোন কোম্পানির মিউজিক ডিরেক্টর হিসেব যোগাদন করেন।

জগৎঘটক, তাঁর ভাই নিতাই ঘটক উভয়ই ছিলেন সঙ্গীতের প্রতি বিশেষ অনুরক্ত। এই সূত্রে উভয়ের সাথে নজরুলের গভীর সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। পরে  পরিবারের অন্যান্যদের সাথেও তাঁর প্রগাঢ় সম্পর্ক গড়ে ওঠে। নজরুলে জগৎঘটকের মাকে- '‌মা' সম্বোধন করতেন। জগৎঘটকের মা নজরুলকে ডাকতেম 'নুরু' নামে।

১৯৮৮ খ্রিষ্টাব্দের ৩১ ডিসেম্বর তিনি কলকাতায় মৃত্যবরণ করেন।