পরেশ ধর
(১৯১৮-২০০২ খ্রিষ্টাব্দ)
গীতিকার।
১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দের ৯ই আগস্ট
কলকাতার গরানহাটায় জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম
যামিনীকান্ত ধর ও মায়ের নাম তুলসীরানি দেবী। তাঁর ঠাকুরদা রজনীকান্ত ধরের
আদি নিবাস ছিল অবিভক্ত বাংলার ঢাকা জেলার বিক্রমপুরের অন্তর্গত কাননীসার
গ্রামে।
শৈশবের বাড়ীতে সঙ্গীতের পরিবেশ ছিল। পিতা ভাল তবলা বাজাতেন। তিনি ঢাকার
বিখ্যাত তবলাবাদক প্রসন্ন ওস্তাদের ছাত্র ছিলেন। কাকা ভাল সরোদ বাজাতেন।
তিনি ওস্তাদ আলাউদ্দীন খাঁ'র ছাত্র ছিলেন। তাঁর রাগ সঙ্গীত-শিক্ষার হাতে
খড়ি হয়েছিল কাকার কাছে। পরে রাগসঙ্গীতের তালিম নেন জোড়াবাগানের
রামকানাই ভট্টাচার্যের কাছে। কলেজে পড়ার সময় তিনি আকাশবাণী কলকাতায় বাঁশি
বাজানো শুরু করেন। তিনি উদয়শংকরের দলেও বংশীবাদক ছিলেন।
কলকাতার গরানহাটার ওরিয়েন্টাল সেমিনারি স্কুল পাশ করে স্কটিশচার্চ কলেজে
স্নাতকে শিক্ষালাভ করেন। এরপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে
স্নাতকোত্তর ডিগ্রি পান। তিনি কর্মজীবনে যাদবপুর বিদ্যাপীঠের ইংরেজির
শিক্ষক ছিলেন।
১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতার নিমতলার এক বনেদী পরিবারের কন্যার সাথে তাঁর
বিয়ে হয়।
১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দের শেষ দিকে, এক বন্ধুর সাথে
গণনাট্য সংঘ-এর একটি অনুষ্ঠানে
গিয়ে সলিল চৌধুরী ও অন্যান্যদের গান শুনে মুগ্ধ হন এবং পরে তিনি নিজেই গণনাট্য
সংঘে যোগ দেন।
ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর গণনাট্য সংঘের অন্যন্য সাংস্কৃতিক কর্মীদের সাথে
তিনি দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন। তাঁর গান সরকারের রোষানলেও পড়ে। সরকারি
আকাশবাণী বেতার কর্তৃপক্ষের আপত্তিতে, গ্রামোফোন কোম্পানি, “কারখানা কলে”
গানটির সব রেকর্ড নষ্ট করে ফেলে এবং গানটির বিক্রয় বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এর পরবর্তী সময়ে গণনাট্য সংঘের প্রচলিত গণসঙ্গীতের কথা, সুর ও উপস্থাপনার
পদ্ধতির সঙ্গে তিনি একমত হতে পারেন নি। মতাদর্শগত এই পার্থক্যের কারণে ১৯৫০
খ্রিষ্টাব্দে তিনি গণনাট্য সংঘ ছেড়ে বেরিয়ে আসেন। এরপর থেকে তিনি নিজের
ভাবনায় গান রচনা করতে থাকেন। এইচ.এম.ভি.-তে কিছুকাল
প্রশিক্ষক ছিলেন।
১৯৮০র দশকে তাঁর গান ও কবিতার গ্রন্থগুলো উত্তর ২৪ পরগণার,
দণ্ডীরহাটের (বসিরহাট), চিন্তাধারা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছে।
তাঁর রচিত গানের সংখ্যা প্রায় চারশত যেগুলোর মধ্যে গণসঙ্গীতের সংখ্যা প্রায়
দুই শত। তাঁর প্রকাশিত গানের সংকলন হচ্ছে ‘একগুচ্ছ গণসংগীত’ ৩ খণ্ডে এবং দুটি
কবিতাগ্রন্থ হচ্ছে ‘আমি যে রোজ দেখি আমার মাকে’ ও ‘অসংখ্য বাসুদেবের
পদধ্বনি’। তাঁর রচিত তিনটি গীতিনাট্য হচ্ছে ‘দুর্ভিক্ষের পাঁচালী’, ‘শান্তি
তরজা’ এবং ‘ভোট রঙ্গ’।
তাঁর রচিত গানে কণ্ঠ দিয়েছেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, বেচু দত্ত, বাণী ঘোষাল ও
সুপ্রীতি ঘোষ। এছাড়া ক্যালকাটা ইউথ কয়ার গেয়েছে ‘প্রাণে প্রাণ মিল করে দাও’
এবং গণবিষাণ গেয়েছে ‘এমন রাত্রি নেই যা প্রভাত হয় না’।
২০০২ খ্রিষ্টাব্দের ৬ই
এপ্রিল তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
তথ্যসূত্র:
১. সুধীর চক্রবর্তী সম্পাদিত, আধুনিক বাংলা গান; প্যাপিরাস, কলকাতা; ১
বৈশাখ, ১৩৯৪।
২. ‘সমাজতন্ত্র কোন সংকটে পড়েনি’, পরেশ ধরের সঙ্গে একটি সাক্ষাত্কারের
পুনর্মুদ্রণ, “সাংস্কৃতিক সময়” পত্রিকা, সম্পাদক অশোক চট্টোপাধ্যায়,
এপ্রিল ২০০২।
৩. শ্যামল গুহ, পরেশ ধরের সন্ধানে, ২০০২।