পৃথ্বীরাজ চৌহান, রাজা
(১১৪৯-১১৯২ খ্রিষ্টাব্দ)
প্রাচীন ভারতবর্ষে চৌহান রাজবংশের রাজা। তিনি মূলত আজমির ও দিল্লীর শাসনকর্তা ছিলেন।

১১৬২ খ্রিষ্টাব্দে মাত্র ১৩ বৎসর বয়সে তিনি রাজত্বলাভ করেন। দিল্লীর শাসক তৃতীয় আর্কপাল বা আনাঙ্গপালের কোনো উত্তরাধিকার না থাকায়, তাঁর মৃত্যুর পর, তাঁর কন্যার পুত্র হিসেবে পৃথ্বীরাজ রাজত্ব লাভ করেন।

রাজত্বলাভের পর তিনি প্রথমে নাগার্জুনকে পরাজিত করে, নাগার্জুনের দখলিকৃত গুদাপুরা দুর্গ পুনরুদ্ধার করেন। এরপর চাণ্ডিলা বংসীয় রাজা পরমার্দিকেও পরাজিত করেছিলেন তিনি। চালুক্য বংশের সঙ্গেও পৃথ্বীরাজের পারিবারিক বিবাদ ছিল। চালুক্যরাজ দ্বিতীয় ভীমের সঙ্গে তাঁর শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চালুক্যরাই পৃথ্বীরাজের বাবা সোমেশ্বরকে হত্যা করেছিল। পৃথ্বীরাজ এর প্রতিশোধ নিয়েছিলেন।

এর কয়েক বছর পর তিনি কনৌজ ও কাশীর শাসক রাজা জয়চন্দ্রের কন্যাকে অপহরণ করে বিবাহ করেন। কথিত আছে, পৃথ্বীরাজের পাণ্ডিত্য এবং সাহসী বীর যোদ্ধা হিসেবে খ্যাতিতে সংযুক্তা পৃথ্বীরাজের প্রেমে পড়েন। জয়চন্দ্র এই সম্পর্ক মেনে না নিয়ে- তিনি একটি অশ্বমেধ যজ্ঞের আয়োজন করে, সংযুক্তার স্বয়ম্বর সভা ঘোষণা করেন। এই সভায় পৃথ্বীরাজ চৌহানকে ডাকা হয় নি। এবং তাঁকে অপমান করার জন্য, জয়চন্দ্র পৃথ্বীরাজের একটি লোহার মূর্তি তৈরি করে তার প্রাসাদের বাইরে দারোয়ানের জায়গায় স্থাপন করেন। সংযুক্তা স্বয়ম্বরের সময় এই লৌহ মূর্তিকে মালা দিয়েছিলেন। অন্যদিকে এদিকে পৃথ্বীরাজ চৌহান এই সময়ম্বর সভার কথা শুনতে পেয়ে সভাস্থলে আসেন এবং সংযুক্তাকে ঘোড়ায় তুলে নিয়ে নিজরাজ্যে প্রত্যাবর্তন করেন। ফলে উভয়ের ভিতরে ঘোরতর শত্রুতা শুরু হয়।

এই সময় গজনীর সুলতান ভারতবর্ষে  মোহম্মদ ঘোরীকে ভারতবর্ষে আক্রমণ শুরু করে। ঘোরী  প্রথমে মুলতানের উচ্ দুর্গ দখলের পর পৃথ্বীরাজের রাজ্য আক্রমণ করে। ১১৯১ খ্রিষ্টাব্দে তরাইনের প্রথম যুদ্ধে পৃথ্বীরাজ ভারতের অন্যান্য রাজপুত রাজাদের সাহায্য নিয়ে মোহম্মদ ঘোরীকে পরাস্ত করেন। ১১৯২ খ্রিষ্টাব্দে মোহম্মদ ঘোরী একটি বিশাল সৈন্যবাহিনী নিয়ে এসে তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। এই যুদ্ধে পৃথ্বীরাজকে পরাজিত ও নিহত হন।
সূত্র :
বাংলাদেশের ইতিহাস/রমেশচন্দ্র মজুমদার।
ভারতের ইতিহাস । অতুলচন্দ্র রায়, প্রণবকুমার চট্টোপাধ্যায়।