টলেমি
গ্রিক Κλαύδιος
Πτολεμαῖος, (Klaudios Ptolemaios)ল্যাটিন
Latin: Claudius Ptolemaeus>ইংরেজি
Claudius Ptolemy
বাংলা : ক্লাউডিয়াস টলেমি। সংক্ষেপে টলেমি।
প্রাচীন গণিতজ্ঞ, জ্যোতির্বিজ্ঞানী, জ্যোতিষী, ভূগোল-বিশারদ। গ্রিক-রোমান শাসিত
মিশরের অধিবাসী। লেখার ভাষা ছিল গ্রিক।
এক সময় টলেমিকে মিশরের টলেমি রাজবংশের মানুষ মনে করা হতো। কিন্তু
যতটুকু জানা যায়, মিশরের রানি ক্লিওপেট্রা ছিলেন টলেমি রাজবংশের সর্বশেষ সদস্য। ক্লিওপেট্রা মৃত্যুবরণ করেছিলেন খ্রিষ্টপূর্ব ৩০ অব্দে
(টলেমির জন্মের প্রায় ৪৫-৬০ বৎসর আগে)।
টলেমির
জন্মতারিখ নিয়ে মতভেদ আছে। মতভেদ
অনুসারে ৭৫ থেকে
৯০ খ্রিষ্টাব্দের ভিতরে তিনি থেবাইড (Thebaid)
-এর টলেমাইস হেরমিওস (Ptolemais
Hermiou) জন্মগ্রহণ করেন। আর মৃত্যুবরণ
করেছিল ১৬৫ থেকে ১৮০
খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে।
তিনি গণিত শিখেছিলেন থিওন (Theon)
-এর কাছে। তাঁর প্রারম্ভিক গণিতবিষয়ক গবেষণায় থেওনের বিশেষ প্রভাব লক্ষ্য করা যায়।
সাইরাস (Syrus)
নামক আরও একজন গবেষককে তিনি বিশেষভাবে সম্মানিত করেছেন। তাঁর প্রথমদিককার রচনাগুলো
সাইরাসের নামে উৎসর্গ করেছেন। সম্ভবত আলেকজান্দ্রয়ার অধিবাসী সাইরাস তাঁর শিক্ষক
ছিলেন। দুর্ভাগ্যজনক হলেও, সাইরাস সম্পর্কে বিশেষ কোন তথ্য পাওয়া যায় না।
খ্রিষ্টপূর্ব ৪৮ অব্দে জুলিয়াস সিজার
এবং মিশরের রাজা টলেমি ত্রয়োদশ (Ptolemy
XIII)
-এর মধ্যে যুদ্ধের সময়, সিজারের সৈন্যরা জাহাজে আগুন লাগিয়ে দেয়। এই সময় জাহাজ সংলগ্ন
আলেকজান্দ্রিয়ার গ্রন্থাগার
আগুন ধরে যায়। এই গ্রন্থাগারটি পুড়ে যাবার পর, বিশেষজ্ঞরা মূল গ্রন্থাগারের
উপগ্রন্থাগার হিসাবে একটি ছোটো গ্রন্থাগার ব্যবহার করতেন। মূলত এই ছোটো
গ্রন্থাগারটি ছিল অন্য শহরে। এর নাম ছিল
Serapeum।
ধারণ করা হয় এই ছোটো গ্রন্থাগারটি টলেমি ব্যবহার করার সুযোগ পেয়েছিলেন। এবং
সেই সূত্রে তিনি তাঁর শিক্ষকদের চেয়ে বেশি শিখেছিলেন
এই গ্রন্থাগারের বইপত্র থেকে।
তিনি তাঁর রচনায় বহু মূল্যবান গ্রন্থের সূত্র উল্লেখ
করেছেন, কিন্তু পরে সেই বইগুলোর সন্ধান পাওয়া যায় নাই।
তাঁর গবেষণার কার্যকালকে ১২৭ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৪১ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত।
তিনি অনেক গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। এর ভিতরে তিনটি গ্রন্থ পরবর্তী মধ্য-প্রাচ্যের
মুসলিম এবং ইউরোপীয় বিজ্ঞানীরা বিশেষভাবে অনুসরণ করতেন। এই গ্রন্থ তিনটি হলো- গাইড
টু জিওগ্রাফি, এ্যালমাগেস্ট (Almagest)
এবং অপটিকস্ (optics)
বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়ে থাকে। তাঁর ভূগোল বিষয়ক গ্রন্থটি ছিল
এ্যারিস্টোটল-উত্তরকালের
একটি উল্লেখযোগ্য। আধুনিক বিজ্ঞান টলেমির ধারণাকে শিকার করে না, কিন্তু সেকালে এই
গ্রন্থটি বিশেষ আলোড়ন তুলেছিল।
টলেমির মহাবিশ্বের নমুনা |
টলেমি এ্যারিস্টোটল-এর মতই, মহাবিশ্বের কেন্দ্র হিসাবে পৃথিবীকে বিবেচনা করেছিলেন। পৃথিবীকে ঘিরে ছিল মোট ৮টি গোলক। এই গোলকগুলোর ভিতরে পৃথিবীর নিকটতম গোলকটি ছিল 'চন্দ্রগোলক'। আর দূরের গোলক ছিল স্থির নক্ষত্রসমূহের গোলক। মাঝের গোলকগুলো ছিল সৌর্য এবং অন্যান্য গ্রহের জন্য নির্ধারিত। নিচে এই গোলকগুলোর পরিচয় তুলে ধরা হলো।
০= পৃথিবী |
||
১= চন্দ্রগোলক |
|
৫=মঙ্গলের গোলক |
টলেমি চাঁদের সাথে পৃথিবীর সম্পর্ককে বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছিলেন।
তিনি ঈশ্বর বিশ্বাসী ছিলেন। তাঁর মডেল অনুসারে পুরোহিতরা মেন করেছিলেন যে, স্বরগ
নরক রয়েছে বাইরের গোলকের ঊর্ধ্বে। সেই কারণে ধর্মের সাথে তিনি সংঘাত এড়াতে সক্ষম
হয়েছিলেন।
টলেমির এই ধারণার সাথে তৎকালীন কোনো ধর্মের সংঘাত হয় নি। আবার পরবর্তী সময়ে যে সকল বিজ্ঞানীরা মনে করতেন টলেমির এই ধারণা ঠিক নয়, তাঁরা পুরোহিতদের বিরুদ্ধে দাঁড়াবার সাহস পান নি। এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ হলো বিজ্ঞানী কোপার্নিকাস। সূর্যকে কেন্দ্র করে পৃথিবী ঘুরছে এই সত্যকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, কিন্তু তার জন্য গ্যালিলিওকে নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছিল।
সূত্র :
http://en.wikipedia.org/
http://www-history.mcs.st-andrews.ac.uk/Biographies/Ptolemy.html