পুষ্যমিত্র
শুঙ্গরাজ বংশের প্রতিষ্ঠাতা।
খ্রিষ্টপূর্ব ১৮৫ অব্দে মৌর্যবংশের শেষ রাজা বৃহদ্রথকে হত্যাকরে
পুষ্যমিত্র রাজা হন। এই সূত্রে
মৌর্য সাম্রাজ্য বিলুপ্ত হয়ে যায়। এরপর শুরু হয়
শুঙ্গ-রাজবংশের শাসন। হর্ষচরিত
মতে, সেনা পরিদর্শনকালে নীচকুলোদ্ভব সেনাপতি পুষ্যমিত্র সম্রাট বৃহদ্রথকে হত্যা করে
সিংহাসন অধিকার করেন। তাঁর পুরু নাম পুষ্যমিত্র শুঙ্গ। এই কারণে তাঁর এবং তাঁর
উত্তরাধিকারদের রাজত্বকালকে শুঙ্গ রাজত্বকাল বলা হয়।
খ্রিষ্টপূর্ব ১৮৫ অব্দে পুষ্যমিত্র সিংহাসন অধিকার করেন। তিনি দক্ষিণের নর্মদা নদী
পর্যন্ত তাঁর রাজত্ব গড়ে তুলেছিলেন। এর সাথে পাটালিপুত্র, অযোধ্যা ও বিদিশাকেও তিনি
অধিকারে রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন। তারানাথের বিবরণ অনুযায়ী তিনি পাঞ্জাবের জলন্ধর ও
শিয়ালকোর্ট তাঁর রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল।
পুষ্যমিত্র সিংহাসন অধিকারের পর, বিদর্ভরাজ্যের রাজা যজ্ঞসেন নিজেকে রাজা ঘোষণা করে। এই সময় পুষ্যমিত্রের পুত্র অগ্নিমিত্র বিদিশার শাসনকর্তা ছিলেন। যজ্ঞসেনের মাধবসেন নামক এক আত্মীয় অগ্নিমিত্রের সাহায্য পাওয়ার আশায় বিদিশার পথে যাত্রা করেন। পথে যজ্ঞসেনের চরদের হাতে ধরা পড়েন। এরপর অগ্নিমিত্র তাঁর মুক্তির জন্য যজ্ঞসেনের কাছে বার্তা পাঠান। যজ্ঞসেন এতে অসম্মত হলে অগ্নিমিত্র বিদর্ভ আক্রমণ করেন। যুদ্ধে যজ্ঞসেন পরাজিত হলে, অগ্নিমিত্র যজ্ঞসেনের রাজ্য তাঁর দুই আত্মীয়ের ভিতর বণ্টন করে দেন।
খ্রিষ্টপূর্ব ১৮০ অব্দের দিকে গ্রিকো-ব্যাকট্রীয় রাজা ডিমেট্রিয়াস প্রথম (Demetrius I ) তাঁর রাজ্য আক্রমণ করে, কিছু জায়গা দখল করেন এবং একটি ইন্দো-গ্রিক রাজ্য স্থাপন করতে সক্ষম হন। খ্রিষ্টপূর্ব ১৬৫ অব্দ পর্যন্ত বর্তমান পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলকে তিনি তাঁর এই রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করেন। পরবর্তী দুই শতাব্দী ধরে একাদিক্রমে ৩০ জনেরও বেশি গ্রিক রাজারা এই অঞ্চল শাসন করেন। খ্রিষ্টপূর্ব ১৫০ অব্দে এই রাজ্যের মিনান্দর। শুঙ্গরাজ্যের অনেকাংশ দখল করে নেয়। এই সময় এর অযোধ্যা এবং চিতরের নিকটবর্তী মধ্যমিকা পর্যন্ত অগ্রসর হয়। পরে যুবরাজ অগ্নিমিত্র গ্রিকবাহিনীকে পরাজিত করে, রাজ্য রক্ষা করেছিলেন।
বৌদ্ধগ্রন্থ দিব্যবদন ও তারানাথের গ্রন্থে পুষ্যমিত্রকে বৌদ্ধবিদ্বেষী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তাঁর ব্রাহ্মণ-মন্ত্রীর পরামর্শে তিন পাটালিপুত্রের বৌদ্ধ বিহার 'কুকুতরমা' বৌদ্ধ বিহার ধ্বংস করে দেন। আবার অনেক ঐতিহসিক মনে করেন, তিনি বৌদ্ধবিদ্বেষী ছিলেন না। তাঁর আমলে কিছু বৌদ্ধ বিহার নির্মিত হয়েছিল এমন প্রমাণ পাওয়া যায়। তবে শুঙ্গবংশীয় রাজারা গোঁড়া হিন্দু ধর্মাবলম্বী ছিলেন এমন প্রমাণ পাওয়া যায়। তবে শুঙ্গ শাসনামলে বৌদ্ধরা খুব স্বাচ্ছন্দ্যে ছিলেন তা বলা যায় না। বলা হয়ে থাকে, গ্রিকদের আক্রমণের সময় বৌদ্ধরা গ্রিকদের গোপনে সাহায্য করেছিলেন।
খ্রিষ্টপূর্ব ১৪৯ অব্দে পুষ্যমিত্র মৃত্যুবরণ
করেন। এরপর রাজা হন তাঁর পুত্র
অগ্নিমিত্র।
সূত্র :
বাংলাদেশের
ইতিহাস (আদিপর্ব)/রমেশচন্দ্র মজুমদার।
ভারতের ইতিহাস । অতুলচন্দ্র রায়, প্রণবকুমার চট্টোপাধ্যায়।