শুঙ্গ রাজবংশ

প্রাচীন ভারতের রাজবংশ বিশেষ। খ্রিষ্টপূর্ব ১৮৫ অব্দে মৌর্য রাজবংশের শেষ রাজা বৃহদ্রথকে হত্যাকরে পুষ্যমিত্র রাজা হন। এই সূত্রে মৌর্য সাম্রাজ্য বিলুপ্ত হয়ে যায়। এরপর শুরু হয় শুঙ্গ-রাজবংশের শাসন। হর্ষচরিত মতে, সেনা পরিদর্শনকালে নীচকুলোদ্ভব সেনাপতি পুষ্যমিত্র সম্রাট বৃহদ্রথকে হত্যা করে সিংহাসন অধিকার করেন। তাঁর পুরু নাম পুষ্যমিত্র শুঙ্গ। এই কারণে তাঁর এবং তাঁর উত্তরাধিকারদের রাজত্বকালকে শুঙ্গ রাজত্বকাল বলা হয়।

এই রাজবংশের রাজত্ব সম্পর্কে জানা যায়, পুরাণ, বাণভট্টের হর্ষচরিত এবং পতঞ্জলির মহাভাষ্য থেকে। এছাড়া দিব্যবদন ও অযোধ্যা-অনুশাসনলিপি থেকে শুঙ্গবংশের বিবরণ পাওয়া যায়। পাণিনির মতে শুঙ্গরা রাজা দিবোদাসের পুরোহিত ভরদ্বাজের বংশোদ্ভূত ছিলেন। দিব্যবদনে শুঙ্গদেরকে মৌর্যবংশের বলা হয়েছে।

শুঙ্গ রাজবংশের রাজত্বকাল ছিল খ্রিষ্টপূর্ব ১৮৫ অব্দ থেকে খ্রিষ্টপূর্ব ৭৩ অব্দ। শুঙ্গ রাজাদের আমলে বিদর্ভের সাথে একটি যুদ্ধ হয় এবং পুষ্যমিত্রের পুত্র অগ্নিমিত্র বিদর্ভকে পরাজিত করেছিলেন।

অপরটি ছিল গ্রিকদের আক্রমণ প্রতিহত করা।
খ্রিষ্টপূর্ব ১৮০ অব্দের দিকে গ্রিকো-ব্যাকট্রীয় রাজা  ডিমেট্রিয়াস প্রথম (Demetrius I ) তাঁর রাজ্য আক্রমণ করে, কিছু জায়গা দখল করেন এবং একটি ইন্দো-গ্রিক রাজ্য স্থাপন করতে সক্ষম হন। খ্রিষ্টপূর্ব ১৬৫ অব্দ পর্যন্ত বর্তমান পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলকে তিনি তাঁর এই রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করেন। পরবর্তী দুই শতাব্দী ধরে একাদিক্রমে ৩০ জনেরও বেশি গ্রিক রাজারা এই অঞ্চল শাসন করেন। খ্রিষ্টপূর্ব ১৫০ অব্দে এই রাজ্যের মিনান্দর। শুঙ্গরাজ্যের অনেকাংশ দখল করে নেয়। এই সময় এর অযোধ্যা এবং চিতরের নিকটবর্তী মধ্যমিকা পর্যন্ত অগ্রসর হয়। পরে যুবরাজ অগ্নিমিত্র গ্রিকবাহিনীকে পরাজিত করে, রাজ্য রক্ষা করেছিলেন।

শুঙ্গরাজ বংশের রাজাদের তালিকা

উল্লিখিত রাজাদের ভিতরে পুষ্যমিত্র এবং অগ্নিমিত্রের কথা প্রাচীন গ্রন্থাদি থেকে একটু বিস্তারিত জানা যায়। অন্যান্যরা শুঙ্গ রাজবংশের রাজত্ব চালিয়ে গেছেন এবং তাঁদের অক্ষমতা বিলাসিতার কারণে, এই রাজবংশ বিলুপ্ত হয়ে যায়।

এই রাজবংশের তৃতীয় সুজ্যেস্থ-এর মৃত্যর পর সুমিত্র রাজা হন। ইনি ছিলেন অত্যন্ত অলস। এছাড়া তিনি নৃত্যগীতে খুবই আসক্ত ছিলেন। মূলত তাঁর সময় থেকেই শুঙ্গরাজ্যের পতন শুরু হয়। ১২৩ খ্রিষ্টাব্দে এক গানের আসরে তিনি মুলাদেব নামক এক আততায়ীর হাতে নিহত হন। তাঁর রাজত্বকালে পাঞ্চাল, কৌশাম্বী ও মথুরা স্বাধীন হয়ে যায়। ফলে শুঙ্গ সাম্রাজ্য মগধ ও মধ্যভারতের ভিতর সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে। এই রাজবংশের শেষ রাজা দেবভূতি খ্রিষ্টপূর্ব ৮২ অব্দে রাজত্ব গ্রহণ করেন। দেবভূতি নারীদের প্রতি অত্যন্ত আসক্ত ছিলেন। তাঁর মন্ত্রী বাসুদেবের প্ররোচনায় এক পরিচারিকার হাতে নিহত হন। এই হত্যার ভিতর দিয়ে শুঙ্গদের ১১২ বছরের রাজত্বের অবসান হয়।

এরপর শুরু হয়
কান্ব রাজবংশ (খ্রিষ্টপূর্ব ৭৩-২৮ অব্দ) রাজত্ব।
 


সূত্র :
বাংলাদেশের ইতিহাস (আদিপর্ব)/রমেশচন্দ্র মজুমদার।
ভারতের ইতিহাস । অতুলচন্দ্র রায়, প্রণবকুমার চট্টোপাধ্যায়।