রাজিয়া সুলতানা
ভারতবর্ষে আদি তুর্কি শাসনের চতুর্থ শাসকএবং সুলতান ইলতুৎমিস -এর কন্যা।

ইলতুৎমিসের সুযোগ্য পুত্র নাসিরুদ্দিন ১২২৯ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাতে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর অন্যান্য পুত্ররা ছিল অপরিণত বয়স্ক। ইলতুৎমিস মৃত্যুর আগে তাঁর কন্যা রাজিয়াকে রাজ্যের উত্তরাধিকার করে যান। ইলতুৎমিস মৃত্যুর আগের এই ইচ্ছার বিরুদ্ধাচারণ করেন তখনকার রক্ষণশীল ও ঈর্ষাকাতর মুসলিম আমির-ওমরাহগণ। তাঁর নারীর শাসনকে ইসলামে অবৈধ বলে রায় দেন। ফলে শেষ মুহুর্তে ইলতুৎমিস এর অপর পুত্র রুকন উদ্দিন ফিরোজকেই সুলতান হিসেবে ঘোষণা দেন। তাই ১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দে ইলতুৎমিস মৃত্যুর পর রোকন উদ্দিন ফিরোজকে আমিররা তৃতীয় সুলতান হিসেবে বরণ করেন। রুকন উদ্দিন ফিরোজ ছিলেন বিলাসী এবং অত্যাচারী। ফলে তাঁর রাজত্বের সাত মাসের মাথায়, লাহোর, হ্যান্সি ও বদাউনের শাসনকর্তারা বিদ্রোহ ঘোষণা করেন এবং রুকন উদ্দিনকে অপসারিত করার জন্য দিল্লী অভিমুখে রওনা দেন। এই সময় রাজিয়া দিল্লীর আমিরদের পক্ষে এনে দিল্লীর সিংহাসন অধিকার করেন।

সিংহাসন লাভের পর তিনি পুরুষের পোশাক পড়ে প্রকাশে রাজদরবারে উপস্থিত হতে থাকেন। ফলে গোঁড়া মুসলমানরা এর আপত্তি তোলেন। এছাড়া তিনি ইয়াকৎ নামক একজন হাবসি অনুচরের প্রতি বিশেষ বেশি অনুগ্রহ দেখাতেন বলেও তুর্কি আমিররা তাঁর প্রতি বিরক্ত ছিলেন। এই সময় তুর্কি অভিজাত শ্রেণির লোকেরা দরবারে তাঁদের অনুগ্রহভাজন লোকদের নিয়োগ দেওয়া শুরু করেন। কিন্তু রাজিয়া এদের প্রতিহত করার জন্য অ-তুর্কিদের নিয়োগ দিয়ে একটি প্রতিপক্ষ দল তৈরির উদ্যোগ নেন। ফলে অভিজাত তুর্কিরা তাঁর বিপক্ষে চলে যান। এই অবস্থায় রাজিয়ার শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রথম বিদ্রোহ ঘোষণা করেন পাঞ্জাবের শাসনকর্তা কবির খাঁ। ১২৪০ খ্রিষ্টাব্দে সসৈন্যে পাঞ্জাবে অভিযান চালান এবং এই বিদ্রোহ দমন করেন। এর কিছুদিন পর দিল্লীর তুর্কি আমিরদের নেতা আইতেগীনের পরামর্শে ভাতিণ্ডার শাসনকর্তা আল্‌তুনিয়া বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। এই বিদ্রোহ দমনে রাজিয়া ভাতিণ্ডা আক্রমণ করলে, রাজিয়ার বিশ্বস্ত অনুচর ইয়াকৎ নিহত হন এবং রাজিয়া বন্দী হন।  এই সময় ইলতুৎমিস-এর পুত্র মইজুদ্দিন বাহরামকে সিংহাসনে বসানো হয়। নতুন ব্যবস্থা অনুসারে বাহরামকে নামে মাত্র সুলতান পদে রেখে আইতেগিন রাজ্যের শাসন হাতে নেন। এদিকে আল্‌তুনিয়া উপযুক্ত পুরস্কার না পেয়ে রাজিয়াকে ছেড়ে দেন এবং তাঁকে বিবাহ করেন। এরপর ১২৪০ খ্রিষ্টাব্দে রাজিয়াকে দিল্লীর সিংহাসনে পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য দিল্লী আক্রমণ করেন। দিল্লীর সাথে যুদ্ধে আলতুনিয়া পরাজিত ও নিহত হন। পরে রাজিয়াকে বন্দি ও হত্যা করা হয়। তাঁর মৃত্যুর পর ইলতুৎমিসের পুত্র বাহরাম দিল্লীর সিংহাসনে বসানো হয়।


সূত্র :
বাংলাদেশের ইতিহাস/রমেশচন্দ্র মজুমদার।
ভারতের ইতিহাস । অতুলচন্দ্র রায়, প্রণবকুমার চট্টোপাধ্যায়।