রাজ্যপাল
পাল রাজবংশের সপ্তম রাজা

৯০৮ খ্রিষ্টাব্দে
পাল রাজবংশের
ষষ্ঠ রাজা নারায়ণ পাল (৮৫৪-৯০৮ খ্রিষ্টাব্দ)-এর মৃত্যুর পর রাজ্যপাল সিংহাসন লাভ করেন। গয়াজিলার (বিহার) কুর্কিহারাতে রাজ্যপালের ২৮তম, ৩১তম এবং ৩২তম প্রশাসনিক বছরে ব্রোঞ্জের মূর্তির গাত্রে ক্ষুদিত লিপিতে জানা যায় যে, রাজ্যপাল ৩২ বছর রাজত্ব করেছিলেন। এছাড়া রাজশাহী জেলা শহর থেকে ২০ মাইল দূরে ভাতুরিয়া গ্রামে আবিষ্কৃত একটি শিলালিপি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। শিবমন্দিরের জন্য রাজ্যপাল কর্তৃক একটি গ্রামদান উপলক্ষে এই লিপি তৈরি হয়েছিল। মষুদা নামক তাঁর জনৈক মন্ত্রী এই লিপিতে রাজ্যপাল সম্বন্ধে বলেছেন বহু শত্রু জয় করেছিলেন এবং ম্লেচ্ছ ও অঙ্গ, বঙ্গ, কলিঙ্গ, ওড্র, পাণ্ডা, কর্ণাট, লাট, সূহ্ম, গুর্জর, কৃত (কিরাত) এবং চীন দেশীয়গণ তাঁর আজ্ঞা শিরোধার্য করত। এই পরাক্রান্ত রাজ্যপাল যে নারায়ণ পালের পুত্র রাজ্যপাল এটিই সাধারণ মত।

রাজ্যপালের পুত্র দ্বিতীয় গোপালের জাজিলপাড়া তাম্রশাসনে বলা হয়েছে যে, তাঁর সেনা-গজেন্দ্রগণ পূর্বাঞ্চলে, মলয়োপত্যকার চন্দন বনে, মরুদেশে এবং হিমালয়ের কটক দেশে ভ্রমণ করেছিল। এই শ্লোকটি পরবর্তীকালে মহীপালের বানগড় লিপিতে দ্বিতীয় গোপালের পুত্র দ্বিতীয় বিগ্রহপাল সম্বন্ধে ব্যক্ত হয়েছে। প্রথম মহীপালের সম্বন্ধে বেলার তাম্রশাসনে ও তাঁর পুত্র তৃতীয় বিগ্রহপালের আমগাছি তাম্রশাসনেও এই রাজার সম্বন্ধে ঐ শ্লোকটি উক্ত হয়েছে। এই চারজন রাজাই রাজ্যভ্রষ্ট হয়ে সারা ভারতবর্ষ সসৈন্যে ঘুরে বেড়ালেন এবং একই শ্লোক দ্বারা সভাকবি তিনজনের অনুরূপ লাঞ্ছনা, অপমান ও দুরবস্থা চিরস্মরণীয় করার প্রয়াস পাবেন- এই ধারণা খুব সঙ্গত বলে মনে হয় না।

অন্যপক্ষে ভাতুরিয়া লিপিতে রাজ্যপালের দিগ্বিজয় বর্ণনার সঙ্গে এই উক্তির সামঞ্জস্য করার জন্য রমেশচন্দ্র মজুমদার মনে করেছেন যে, রাজ্যপালের পুত্র দ্বিতীয় গোপাল পিতার দিগ্বিজয় উপলক্ষে তাঁর সঙ্গে ভারতের চতুর্দিকে ভ্রমণ করেছিলেন কবি এটিই ইঙ্গিত করেছেন এবং পরবর্তীকালে কোনো পালরাজা নিজের বাহুবলের পরিবর্তে অন্যের সহায়ক বা সহচররূপে নানাস্থানে ভ্রমণ করলে তাঁর সম্বন্ধেও ঐ শ্লোক প্রয়োগ করা হয়েছে।

পালরাজা রাজ্যপাল রাষ্ট্রকূট রাজন্যাকে বিবাহ করে ঐ রাজ্যের সঙ্গে মিত্রতা স্থাপন করেছিলেন এবং সম্ভবত প্রতীহার ও অন্যান্য শত্রুর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রকূটরাজের অভিযানে সাহায্য করেছিলেন। একারণেই রাজ্যপাল সম্ভবত নিরুদ্বেগে রাজত্ব করতে পেরেছিলেন। কারণ, তাঁর রাজত্বের প্রারম্ভেই চিরশত্রু প্রতীহাররাজ রাষ্ট্রকূটরাজ ইন্দ্র কর্তৃক পরাজিত হয়েছিলেন। ইন্দ্র প্রতীহার-রাজধানী কান্যকুব্জ অধিকার করে লুণ্ঠন করেছিলেন এবং প্রতীহাররাজ মহীপাল পালিয়ে কোনোমতে প্রাণরক্ষা করেছিলেন। এই নিদারুণ বিপর্যয়ের ফলে প্রতীহাররাজ্য ধ্বংসের পথে অগ্রসর হয়েছিল। ফলে পালরাজ্য অনেকটা নিরাপদে ছিল।

৯৪০ খ্রিষ্টাব্দে রাজ্যপালের মৃত্যু হয়। এরপর সিংহাসনে বসেন তাঁর গোপাল। ইতিহাসে একে দ্বিতীয় গোপাল (৯৪০-৯৬০ খ্রিষ্টাব্দ) বলা হয়।


সূত্র :
বাংলাদেশের ইতিহাস (আদিপর্ব)/রমেশচন্দ্র মজুমদার।
ভারতের ইতিহাস । অতুলচন্দ্র রায়, প্রণবকুমার চট্টোপাধ্যায়।