রামরাম বসু
আনুমানিক ১৭৫৭-১৮১৩ খ্রিষ্টাব্দ
ঊনবিংশ শতাব্দীর অন্যতম বাংলা গদ্য-সাহিত্যের আদি লেখক।
আনুমানিক ১৭৫৭ খ্রিষ্টাব্দে (১১৬৪ বঙ্গাব্দ) হুগলির চুঁচুড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। অনুমান কারা তাঁর প্রথম জীবনের কথা বিশেষ জানা যায় না। কর্মজীবনে তিনি
একাধিক ইংরেজের মুন্সি হিসেবে কাজ করেছেন। এ থেকে অনুমান করা যায় যে, তিনি ইংরেজি এবং ফারসি ভাষা শিখেছিলেন।
তাঁর ইংরেজ মালিক উইলিয়াম চেম্বার্সের সুপারিশে, ১৭৮৭ খ্রিষ্টাব্দের ৮ই মার্চ (শুক্রবার
২৭ ফাল্গুন ১১৯৩ বঙ্গাব্দ) তাঁকে ব্যাপটিস্ট ধর্মপ্রচারক জন টমাস মুন্সি হিসেবে নিয়োগ দেন।
১৭৯১ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে (মাঘ-ফাল্গুন ১১৯৭) টমাস ইংল্যান্ডে ফেরার আগ পর্যন্ত রামরাম বসু জন টমাসের মুন্সি হিসেবে কাজ করেন।
১৭৯৩ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বর মাসে (কার্তিক-অগ্রহায়ণ ১২০০
বঙ্গাব্দ) জন টমাস বঙ্গদেশে আসেন। এবার তাঁর সাথে এসেছিলেন সপরিবারের
উইলিয়াম কেরি। প্রথমে টমাস
তাঁর এক বন্ধুর নীলকুঠিতে
উইলিয়াম কেরির ম্যানেজারের চাকরির ব্যবস্থা দিয়েছিলেন। এর কিছু পরে টমাসের পরমার্শে রামরাম বসুকে
কেরির মুন্সি হিসেবে নিয়োগ দেন।
১৭৯৬ খ্রিষ্টাব্দ (১২০৩ বঙ্গাব্দ) পর্যন্ত রামরাম বসু
কেরির অধীনে কাজ
করেন। এই সময় এক বিধবার সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক রাখার অভিযোগে কেরি তাঁকে চাকরি থেকে
বরখাস্ত করেন। কেরির রামারাম বসুর কাছে বাংলা ভাষা শেখেন।
তাঁর সামান্য বাংলা-জ্ঞান দিয়ে বাইবেলের বাংলা অনুবাদ করা শুরু করেন।
এই সময় রামরাম বসুর কর্মজীবন সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা যায় না।
১৭৯৯ খ্রিষ্টাব্দের (১২০৬ বঙ্গাব্দ) শেষের দিকে
ইষ্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি তাঁদের বাণিজ্যের প্রতিবন্ধক হিসেবে খ্রিষ্টান মিশনারিদের দায়ী করতে থাকে।
এই সময় মার্শম্যান এবং ওয়ার্ড কোম্পানিকে ফাঁকি দিয়ে একটি মার্কিন জাহাজে বঙ্গদেশে আসেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তাঁদের আসল উদ্দেশ্যের খবর পেয়ে
তাঁদের গ্রেপ্তার করতে গেলে এঁরা কলকাতার অদূরে ডেনিশ মিশন শ্রীরামপুরে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন।
১৮০০ খ্রিষ্টাব্দের ১০ই জানুয়ারি (সোমবার ২৩ পৌষ ১২০৬)
কেরি এসে তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন। পরে এঁদের প্রচেষ্টায় শ্রীরামপুরে একটি মিশন গড়ে উঠে।
ধর্মপ্রচার ও শিক্ষা প্রসারের তাঁরা একটি ছাপাখানা স্থাপন করেন। এই প্রেস থেকে
কেরির অনূদিত বাইবেলের ছাপা শুরু হয়। এই সময়
কেরি
খ্রিষ্টধর্ম সংক্রান্ত সাহিত্য রচনা এবং অনুবাদের কাজের জন্য রামরাম বসুকে
পুনারায় নিয়োগ দেন।
১৮০১ খ্রিষ্টাব্দে (১২০৮ বঙ্গাব্দ) ডেভিড ব্রুনস্ডন এবং টমাস মৃত্যুবরণ করেন। এই
বছরে কোম্পানির গভর্নর-জেনারেল ওয়েলেসলি ইংল্যান্ড থেকে আগত কোম্পানির তরুণ
সিভিলিয়ানদের দেশীয় ভাষা, ইতিহাস, সংস্কৃতি, ভূগোল ইত্যাদি শেখানোর উদ্দেশে
কলকাতায় ফোর্ট উইলিয়ম কলেজ স্থাপন করেন। কিন্তু তখন কলকাতায় বাংলা ভাষার একমাত্র
সাহেব-পণ্ডিত-হেনরি পিটস ফরস্টার তাঁকে তিনি ব্যক্তিগতভাবে অপছন্দ করতেন বলে বাংলা বিভাগ খুলতে পারেন নি।
কেরিকে বাংলা বিভাগের উপযুক্ত শিক্ষক বিবেচনা করে ১৮০১ খ্রিষ্টাব্দের মে মাসে (বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ ১২০৮) ফোর্ট উইলিয়ম কলেজ বাংলা বিভাগ চালু হয়। এই সময় রামরাম বসু
কেরিকে সহকারী মুন্সি হিসেবে নিযুক্ত হন।
১৮১৩ খ্রিষ্টাব্দের ৭ আগষ্ট মৃত্যুবরণ করেন। উল্লেখ্য মৃত্যর আগ পর্যন্ত তিনি
কেরির সহকারী
মুন্সি হিসেবে ছিলেন।
রামরাম বসুর সাহিত্য কর্ম
- রাজা প্রতাপাদিত্য চরিত্র(১৮০১ খ্রিষ্টাব্দ)
- লিপিমালা (১৮০২ খ্রিষ্টাব্দ)
এছাড়া 'গসপেল মেসেঞ্জার' গ্রন্থটি 'হরকরা' নামে
কবিতায় অনুবাদ করেন। পরে এটি ওড়িয়া ও হিন্দিতেও অনূদিত হয়। এরপর ১৮০০
খ্রিষ্টাব্দে তিনি 'জ্ঞানোদয়' ও 'খৃষ্টবিবরণামৃতং' নামে কবিতায় খ্রিষ্ট-চরিত রচনা করেছিলেন। এছাড়া
কেরির বাংলা বাইবেলের পরিমার্জনা করেছিলেন তিনি।