রাও
ফরমান আলী খান
১৯২৩ – ২১ জানুয়ারি ২০০৪)
(উর্দু: راؤ فرمان علی; )
পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল, ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের বাংলাদেশের
স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় অনুষ্ঠিত গণহত্যা ও বুদ্ধিজীবী হত্যার পরিকল্পনাকারী।
১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দের ১লা জানুয়ারি, ব্রিটিশ ভারতের পূর্ব পাঞ্জাবের রোহতাক-এ
জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর শৈশব এবং শিক্ষা জীবন সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানা যায় না।
১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ব্রিটিশ ভারতীয় বাহিনীর আর্টিলারী রেজিমেন্টে কমিশন
প্রাপ্ত হন।
১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ বাহিনীর পক্ষে যুদ্ধ করেন।
১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে স্বাধীন পাকিস্তানের সেনাবাহিনীতে মিলিটারি পুলিশ বিভাগে যোগদান
করেন। এরপর তিনি বিভিন্ন সময়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিভিন্ন বিভাগে দায়িত্ব পালন
করেছেন।
১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দের পাক-ভারত যুদ্ধে তিনি অংশগ্রহণ করেছিলেন কিনা জানা যায় না।
১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ১৪শ ব্যাটেলিয়ানের কমান্ডিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ পান।
১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে পূর্ব
পাকিস্তানে নিয়োগ দেন।
১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে মেজর জেনারেল হন।
১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়, সামরিক পুলিশ এবং
শীর্ষ সামরিক উপদেষ্টা হিসেবে তিনি পূর্ব পাকিস্তানে ছিলেন। এই সময় তার বিরুদ্ধে
প্রধান অভিযোগ ছিল বুদ্ধিজীবী হত্যার নীলনকশা প্রণয়নকারী। এছাড়া পূর্ব পাকিস্তানে
ব্যাপক গণহত্যার অন্যতম উপদেষ্টা তিনি সক্রিয় ছিলেন।
১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে পূর্ব-পাকিস্তানকে হত্যা ও ধ্বংসের মধ্য দিয়ে দমন করার জন্য,
অপারেশন সার্চ লাইট
-নামক সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা করা হয়,
তা
কার্যকর করার ক্ষেত্রে ফরমান আলী বিশেষ ভূমিক রাখেন। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের
১৮ই মার্চ সকালে, ঢাকা সেনানিবাসের
জিওসি কার্যালয়ে বসে জেনারেল রাজা এবং মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলি এই অভিযানের
পরিকল্পনা লিপিবদ্ধ করেন। পরিকল্পনাটি জেনারেল ফরমান নিজ হাতে হালকা নীল রঙের একটি
অফিস প্যাডের ৫ পাতা জুড়ে (১৬টি প্যারাগ্রাফে) লিড পেন্সিল দিয়ে লিখে নেন।
অপারেশন সার্চ লাইট
শেষ হওয়ার পর, তিনি নির্বিচারে বাঙালি নিধনের সকল পরিকল্পনার অন্যতম ব্যক্তি হিসেবে
কাজ করেছেন। বিশেষ করে ১৪ই ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী হত্যার অন্যতম পরিকল্পনাকারী ছিলেন
ফরমান আলী।
১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে যখন মিত্র বাহিনীর কাছে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আত্ম সমর্পণের
বিষয় চূড়ান্ত হয়ে যায়, তখন ভীত সন্ত্রস্ত্র অবস্থায় তিনি ঢাকার নিরাপত্তা জোন
তৎকালীন 'ইন্টার কন্টিনেন্টার হোটেলে আশ্রয় নেন। তখন অসহায়ের মতো জনতার সামনে বলেন,
'আমরা আর যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই'।
রাও ফরমান আলি তার নিজের
বিরুদ্ধে আরোপিত অভিযোগসমূহ প্রত্যাখ্যান করলেও, হামুদুর রহমান কমিশন পাকিস্তান
সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের অনৈতিক কর্মকাণ্ড ও হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকার প্রমাণ
পায়। যুদ্ধের পর তাকে সামরিক বাহিনী থেকে বহিষ্কার করা হয় এবং তার সকল ব্যাজ
ফিরিয়ে নেয়া হয়।
১৯৭৯ খ্রিষ্টাব্দে
জুলফিকার আলী
ভুট্টোর মৃত্যুর পর, জেনারেল মুহাম্মদ জিয়াউল হক তাকে তার উপদেষ্টা নিয়োগ
দেন। এসময় সংঘটিত গণতন্ত্র পুনপ্রতিষ্ঠা আন্দোলন দমনে নির্যাতন ও হত্যায় তাকে
দায়ী হিসেবে ধরা হয়। জিয়াউল হকের মৃত্যুর পর তিনি আত্মগোপনে চলে যান।
২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে রাওয়ালপিন্ডিতে মৃত্যুবরণ করেন।