রজনীকান্ত সেন
তাঁর পিতা গুরুপ্রসাদ সেন ১৮৭৫ খ্রিষ্টাব্দে বরিশালের সাব-জজ পদ থেকে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করেন। এরপর তাঁদের পুরো পরিবার তাঁর জ্যেঠার বড় ছেলে - বরদা গোবিন্দ এবং কালী কুমারের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। দূর্ভাগ্যবশত ১৮৭৮ খ্রিষ্টাব্দে তাঁরা উভয়েই আকস্মিকভাবে মৃত্যুবরণ করেন। ফলে, আকস্মিকভাবেই আর্থিকভাবে স্বচ্ছল পরিবারটি চরম আর্থিক সঙ্কটে নিপতিত হয়। এই কারণে শৈশবে রজানীকান্তকে আর্থিক কষ্টের ভিতর দিয়ে কাটাতে হয়েছে।
সঙ্গীতশিল্পী ও কবি পিতার কাছে
তাঁর সঙ্গীতে হাতেখড়ি হয়।
শৈশবে তিনি লেখাপড়ায় অত্যন্ত অমনোযোগী ছিলেন।
স্কুলের পরে তিনি বেশিরভাগ সময় প্রতিবেশীদের ঘরে
খেলা করে সময় কাটাতেন। এরই ভিতরে তিনি প্রতিবেশী রাজনাথ তারকরত্ন মহাশয়ের কাছ থেকে
সংস্কৃতের পাঠ নেন। লেখাপড়ার উন্নতির জন্য তাঁকে
বোয়ালীয়া জিলা স্কুলে (বর্তমান রাজশাহী
কলেজিয়েট স্কুল) ভর্তি করে দেওয়া হয়।
এই স্কুল থেকে
প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে তিনি কুচবিহার জেনকিন্স স্কুলে ভর্তি হন।
১৮৮৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি
এই জেনকিন্স স্কুল থেকে এন্ট্রান্স পাস করে আবার রাজশাহীতে ফিরে আসেন।
এই বৎসরে হিরন্ময়ী দেবীর সাথে তাঁর বিবাহ হয়।
১৮৮৪ খ্রিষ্টাব্দে ইনি রাজশাহী কলেজ
থেকে এফ.এ. দ্বিতীয় বিভাগে পাস করেন। এরপর কলকাতা সিটি কলেজে বি.এ.-তে ভর্তি হন।
এই কলেজ থেকে তিনি ১৮৮৯
খ্রিষ্টাব্দে বি.এ.
পাস করেন।
১৮৯১ খ্রিষ্টাব্দে বি.এল. পাস
করে রাজশাহী আদালতে আইন ব্যবসা শুরু করেন।
এই সময় ইনি কিছুদিন
নাটোর ও নওগাঁও-তে অস্থায়ী মুন্সেফ হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।
চাকুরী জীবনের অবসরে গান লিখতেন
এবং ক্রমে ক্রমে গীতিকার হিসাবে বিশেষ খ্যাতি লাভ করেন।
১৯০৫-১৯১১ খ্রিষ্টাব্দের
স্বদেশী আন্দোলন চলাকালে তাঁর রচিত 'মায়ের দেওয়া মোটা কাপড় মাথায় তুলে নেরে ভাই'
অভূতপূর্ব সাড়া
জাগিয়েছিল।
বাংলা সঙ্গীতের ক্ষেত্রে তাঁকে
পঞ্চদিক পালের একজন বিবেচনা করা হয়।
অপর চারজন হলেন-
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর,
নজরুল ইসলাম,
ডি.এল.রায় ও অতুলপ্রসাদ
সেন।
ইনি কান্তকবি নামে বিশেষ পরিচিত
ছিলেন।
১৯০৯ সালে রজনীকান্ত কণ্ঠনালীর প্রদাহজনিত রোগে
আক্রান্ত হন। এরপর তাঁকে কলকাতায় চিকিৎসার জন্য আনা হয়। এই সময় তাঁর
ল্যারিঙ্কস্ ক্যানসার রোগ ধরা পরে। এই রোগে
১৯১০ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ই
সেপ্টেম্বরে (১৩১৭ বঙ্গাব্দের ২৮শে ভাদ্র)
) মৃত্যুবরণ করেন।
তাঁর কাব্য ও সঙ্গীত নির্ভর গ্রন্থের সংখ্যা মোট আটটি। গ্রন্থগুলি হলো−
১. বাণী (আগষ্ট ১৯০২ খ্রিষ্টাব্দ)
২. কল্যাণী (আগষ্ট ১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দ)
৩. অমৃত (মে ১৯১০ খ্রিষ্টাব্দ)
৪. আনন্দময়ী (অক্টোবর ১৯১০ খ্রিষ্টাব্দ)
৫. বিশ্রাম (অক্টোবর ১৯১০)
৬. অভয়া (নভেম্বর ১৯১০)
৭. সদ্ভাব কুসুম (মে ১৯১৩)
৮. শেষদান (সেপ্টেম্বর ১৯২৭)
রজনীকান্ত সেনের পরিবার
স্ত্রী: হিরন্ময়ী দেবী
সন্তানাদি:
কন্যা : প্রথম কন্যা (অকালে মৃত্যুসবরণ করেন)
দ্বিতীয়
কন্যা−
শান্তিলতা দেবী ।
সূত্র:
কান্তকবি রজনীকান্ত। অশোককুমার রায় সম্পাদিত। পাতাবাহার পাবলিকেশান প্রাইভেট লিমিটেড, কলিকাতা। ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪।
রজনীকান্তের আত্মজীবনী। অশোককুমার রায় সম্পাদিত। পাতাবাহার পাবলিকেশান প্রাইভেট লিমিটেড, কলিকাতা। ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪।