কুন্দলাল সায়গল
১৯০৪-১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দ

বিংশ শতাব্দীর প্রখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী ও অভিনেতা। সংক্ষেপিত নাম কে.এল সায়গল। সাধারণভাবে তিনি সায়গল নামেই পরিচিত ছিলেন। তিনি হিন্দি, বাংলা, পাঞ্জাবি-সহ ভারতীয় অন্যান্য ভাষা গান গেছেন।

১৯০৪ খ্রিষ্টাব্দের ১১ই এপ্রিল জন্মুতে জন্মগ্রহণ করেন।  শৈশব থেকেই তিনি সঙ্গীতের পাঠ নিয়েছিলেন তাঁর মায়ের কাছে। মাত্র দশ বৎসর বয়সে তিনি জম্মুতে স্থানীয় পালাগান 'রামলীলা'য় সীতার চরিত্রে অভিনয় ও গান গেয়ে সুনাম অর্জন করেন। এরপর তিনি স্থানীয় শিক্ষকদের কাছে ভারতীয় রাগসঙ্গীত, ভজন, কীর্তন, ঠুমরি ইত্যাদি শেখেন।

ভারতীয় রেলে টাইপিস্ট হিসেবে তাঁর কর্মজীবনের শুরু। এরপর তিনি রেমিংটন কোম্পানির সেলস্‌ম্যান ও মেকানিক ছিলেন। কর্মসূত্রে তিনি কলকাতায় আসেন। কলকাতায় তাঁর গান শুনে মুগ্ধ হয়ে, প্রখ্যাত সঙ্গীত পরিচালক হরিশচন্দ্র বালি তাঁর সাথে রাইচাঁদ বড়ালের পরিচয় করিয়ে দেন। এবং এই সূত্রে তিনি নিউ থিয়েটারের সাথে যুক্ত হন। এখানে তাঁর সাথে পরিচয় ঘটে পঙ্কজকুমার মল্লিক, কৃষ্ণচন্দ্র দে, পাহাড়ি সন্ন্যাল প্রমুখের সাথে।

১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি হিন্দি সিনেমা 'মহাব্বত কে আসু', 'সুবাহ কা সিতারা' ও 'জিন্দা লাশ' ছবিতে নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করেন। ১৯৩৩ খ্রিষ্টাব্দ তাঁর 'ইহুদি কা লড়কি' মুক্তি পায়। এই বছরেই তিনি 'পুরাণ ভগত'। ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দে মুক্তি পায় তাঁর অভিনীত বিখ্যাত ছবি 'চণ্ডীদাস'।

তাঁকে কলকাতায় ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দের দিকে হিন্দুস্থান রেকর্ড-এর তার প্রথম দুটি গানের রেকর্ড করে। এই গান দুটি ছিল 'বালম আয়ো বসো মের মন মে' ও 'দুখ কী অবদিন বিতত নহি'। উল্লেখ্য, এই গান দুটি ছিল নিউ থিয়েটার্স-এর 'দেবদাস' ছবির জন্য। এই ছবিটির পরিচালক ছিলেন প্রমথেশ বড়ুয়া।  এই ছবির বাংলা সংস্করণে নায়ক ছিলেন প্রমথেশ বড়ুয়া আর হিন্দি সংস্করণের নায়ক ছিলেন সায়গল। উভয় সংস্করণে নায়িকা ছিলেন যমুনা বড়ুয়া। এরপর থেকে সায়গল ভারতের অন্যতম গায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠা পান। হিন্দুস্থান রেকর্ড তাঁর কণ্ঠে রবীন্দ্রসঙ্গীত রেকর্ড করেছিল বিভিন্ন চলচ্চিত্রের জন্য।  ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দে মুক্তিপ্রাপ্ত 'জীবন-মরণ' ছবিতে দুটি গান গেয়েছিলেন। গান  দুটি হলো।

১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দে মুক্তিপ্রাপ্ত 'পরিচয়' ছবির জন্য দুটি রেকর্ডে ৪টি গান গেয়েছিলেন। গান চারটি হলো।

 ১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দে মুক্তিপ্রাপ্ত পরিচয় ছবিতে সায়গল ও কাননদেবী

তিনি সাতটি বাংলা ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। এসব ছবিতে তিনি প্রায় ৩০টি গান গেয়েছিলেন। ১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি রঞ্জিত মুভিটোনে যোগদান করেন এবং কলকাতা ছেড়ে বোম্বে চলে যান।

তাঁর পনের বৎসরের শিল্পী জীবনে ৩৬টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন। এর ভিতরে ২৮টি হিন্দি, ৭টি বাংলা এবং ১টি তামিল ছবি। এছাড়া স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবি 'দুলারি বিবি'তে অভিনয় করেছিলেন তিনি। চলচ্চিত্রে তিনি মোটা ১৪৩টি। এর ভিতরে ১১০টি হিন্দি, ৩০টি বাংলা ও ২টি তামিল গান ছিল। আর চলচ্চিত্রের বাইরে রেকর্ড গান গেয়েছিলেন হিন্দি, বাংলা ও পাঞ্জাবি ভাষায় গান গেয়েছিলেন ৪৩টি।

১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ই জানুয়ারি জলন্ধরে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।