শূরপাল
বাংলার
পাল রাজবংশের চতুর্থ রাজা।
৮৫০ খ্রিষ্টাব্দে
পাল রাজবংশের তৃতীয় রাজা দেবপাল (৮১০-৮৫০ খ্রিষ্টাব্দ) -এর মৃত্যুবরণ করার পর, শূরপাল রাজ্যলাভ করেন। ইতিহাসে তিনি প্রথম শূরপাল নামে অভিহিত হয়ে থাকেন। এঁর মায়ের নাম রানী ভবদেবী রাজা দুর্লভরাজের কন্যা ছিলেন।

পালরাজগণের তাম্রশাসনে দেবপালের পরেই বিগ্রহপাল নামক রাজার ও তৎপুত্র নারায়ণপালের নামোল্লোখ করা হয়েছে। এই শাসন থেকে অনেকে বিগ্রহপাল ও শূরপালকে অভিন্ন বলে গ্রহণ করেছিলেন। নবাবিষ্কৃত মির্জাপুর তাম্রশাসন হতে স্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে, এই ধারণা ঠিক নয়। বিগ্রহপালের রানীর নাম ছিল লজ্জা দেবী। কিন্তু শূরপালের রানীর নাম মাহেষোভট্টারিকা দেবী। উত্তরপ্রদেশের মির্জাপুর জেলায় একটি গ্রামে প্রাপ্ত একটি নতুন তাম্রশাসনে উল্লেখ আছ
শ্রীশূরপাল নামে রাজা তাঁর পত্নী মহাদেবী মাহেষোভট্টারিকার অনুরোধে মুদগিরিতে অবস্থানকালে শ্রীনগরভুক্তির অন্তর্গত কয়েকটি গ্রাম বারাণসীর শৈবাচার্যগণকে দান করেন। এই তাম্রশাসনে আছে, শূরপাল গোপালের প্রপৌত্র, ধর্মপালের পৌত্র এবং দেবপালের পুত্র।

দেবপালের পুত্র হিদসেব শূরপাল রাজ্যের উত্তরাধিকারী ছিলেন। দেবপালের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র শূরপাল সিংহাসনে আরোহণ করেন। শূরপালের পঞ্চম রাজ্য সংবৎসরের একখানি লিপি পাওয়া গিয়েছে। শূরপাল যে রাজ্য জয় করেছিলেন নবাবিষ্কৃত তাম্রশাসনে তার উল্লেখ আছে। কিন্তু কোনো বিস্তৃত বিবরণ এখনও প্রকাশিত হয় নি। বাদাল প্রস্তরলিপিতেও তাঁর বিজয়যাত্রার উল্লেখ নেই।

বিগ্রহপাল শান্তিপ্রিয় ছিলেন। কিন্তু তাঁর পিতা জয়পাল শূরপালকে বিতাড়িত করে পুত্রের হস্তে রাজ্যভার দিয়ে বানপ্রস্থ অবলম্বন করেছিলেন। বাদাল-লিপিতে মন্ত্রীপ্রবর কেদার মিশ্র শূরপালের মন্ত্রী এবং কেদার মিশ্রের পুত্র গুরবমিশ্র নারায়ণপালের মন্ত্রী ছিলেন এইরূপ কথিত হয়েছে। কিন্তু বিগ্রহপালের কোনো উল্লেখ না থাকায় এই সিদ্ধান্তই সঙ্গত মনে হয়। বিগ্রহপাল রাজসিংহাসনে আরোহণ করলেও খুব অল্পকালই রাজত্ব করেছিলেন বলে মনে হয়। ধারণা করা হয়,  ৮৫৫ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত শূরপাল রাজত্ব করেন।


সূত্র :
বাংলাদেশের ইতিহাস (আদিপর্ব)/রমেশচন্দ্র মজুমদার।
ভারতের ইতিহাস । অতুলচন্দ্র রায়, প্রণবকুমার চট্টোপাধ্যায়।