তৃতীয় বিগ্রহপাল
পাল রাজবংশের দ্বাদশ রাজা১০৫৪ খ্রিষ্টাব্দে পাল রাজবংশের একাদশতম রাজা নয়পাল (১০৩৮-১০৬৪ খ্রিষ্টাব্দ)-এর মৃত্যুর পর, তাঁর পুত্র বিগ্রহপাল রাজত্ব লাভ করেন। ইতিহাসে তিনি তৃতীয় বিগ্রহপাল নামে অভিহিত হয়ে থাকেন। উল্লেখ্য প্রথম বিগ্রহ পাল (৮৫০-৮৫৪ খ্রিষ্টাব্দ) ছিলেন পাল রাজবংশের চতুর্থ রাজা। আর দ্বিতীয় বিগ্রহপাল (৯৬০-৯৮৮ খ্রিষ্টাব্দ) ছিলেন পালবংশের অষ্টম রাজা।

নয়পাল-এর রাজত্বকালে কলচুরিরাজ গাঙ্গেয়দেবের পুত্র কর্ণ বঙ্গদেশ আক্রমণ করেন। এই যুদ্ধে নয়পাল পরাজিত হন। যদিও অতীশ দীপঙ্কর-এর মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি ঘটেছিল। কিন্তু কর্ণ পুনরায় বঙ্গদেশ আক্রমণ করেন।এই যুদ্ধেও কর্ণ প্রথমে জয়লাভ করেন। বীরভূম জেলার অন্তর্গত পাইকোর নামক স্থানে একটি শিলাস্তম্ভের গাত্রে কর্ণো নামে একটি লিপি উৎকীর্ণ আছে। এ থেকে বুঝা যায় যে, তিনি পশ্চিমবঙ্গের কিছু অংশ অধিকার করেছিলেন। কিন্তু পরে তিনি বিগ্রহপালের কাছে পরাজিত হন। সন্ধ্যাকর নন্দীর রামচরিত থেকে জানা যায় যে, তৃতীয় বিগ্রহপালের সাথে কর্ণের কন্যা যৌবনশ্রীর বিবাহ হয়। সম্ভবত এই বৈবাহিক সম্বন্ধ দ্বারা উভয় পক্ষের মধ্যে সন্ধি স্থাপিত হয়। কেউ কেউ মনে করেন যে, পাইকোর স্তম্ভলিপি এই বৈবাহিক সম্বন্ধের স্মৃতিচিহ্নরূপেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এটি দ্বারা কর্ণের বঙ্গদেশের এই অংশ জয় করার সিদ্ধান্ত যুক্তিযুক্ত নয়। এরপর কর্ণ আর বঙ্গদেশের বিরুদ্ধে অভিযান করেন নি। কারণ, এর কিছুদিন পর  (১০৬০ হতে ১০৬৪ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে কোনো এক সময়ে) চন্দেল্লরাজ কীর্তিবর্মণ কর্ণকে যুদ্ধে পরাজিত করেন।

কলচুরদের সাথে নয়াপাল এবং তৃতীয় বিগ্রহপালের দীর্ঘকালীন যুদ্ধে, পালদের বিপুল পরিমাণ ক্ষতি হয় এবং সেনাবল কমে যায়। এই সুযোগে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অনেকগুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্বাধীন রাষ্ট্রের উদ্ভব হয়। এদের ভিতরে উল্লেখযোগ্য রাজ্যগুলো ছিল

এই সময়ে কর্ণাটকের চালুক্যরা বাংলাদেশ আক্রমণ করে গৌড়ের কিয়দংশ এবং কামরূপ অঞ্চল দখল করেন। প্রায় একই সময়ে উড়িষ্যার রাজা বাংলাদশের গৌড় এবং রাঢ় অঞ্চল দখল করে নেয়। এই অবস্থায় ১০৬৪ খ্রিষ্টাব্দে তৃতীয় বিগ্রহপালের মৃত্যু হয়। এরপর মহীপাল দ্বিতীয় পাল-সিংহাসনে বসেন।


সূত্র :
বাংলাদেশের ইতিহাস/রমেশচন্দ্র মজুমদার।
ভারতের ইতিহাস । অতুলচন্দ্র রায়, প্রণবকুমার চট্টোপাধ্যায়।