সাইমন ড্রিং
(১৯৪৫ ? খ্রিষ্টাব্দ)
 টেলিভিশন উপস্থাপক ও সাংবাদিক ।

১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দের ১১ই জানুয়ারি ইংল্যাণ্ডের নরফোকের ফাকেনহামে জন্মগ্রহণ করেন।

প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন স্থান বোর্ডিং স্কুলে। সেখানকার আওজ নদীতে উলঙ্গ অবস্থায় সাঁতার কাটার অভিযোগে তাঁকে স্কুল থেকে বহিষ্কার করা হয়। এরপর তিনি কিংস লিন টেকনিক্যাল কলেজে অধ্যয়ন করেন। এরপর তিন লেখাপড়া বাদ দিয়ে বিশ্বভ্রমণের জন্য গৃহত্যাগ করেন। এই সূত্রে তিনি ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দে ভারতে আসেন।

১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দে থাইল্যান্ডের ব্যাংকক ওয়ার্ল্ড সংবাদপত্রে প্রুফ রিডার ও সম্পাদনা সহকারী হিসেবে কাজ কর্মজীবন শুরু করেন।

১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দে নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত 'নিউইয়র্ক টাইমসের স্ট্রিংগার' হিসেবে লাওস যান। একই বছর  বার্তা সংস্থা রয়টার্সের যুদ্ধবিষয়ক সংবাদ প্রতিনিধি হিসেব তিনি ভিয়েতনাম যান। মূলত এই সময় থেকে তিনি রয়টার্সের সাংবাদিক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় তিনি আহত হন। তবে এই যুদ্ধের প্রতিবেদনের জন্য তিনি বিশ্বব্যাপী খ্যাতি অর্জন করেন।

১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে ডেইলী টেলিগ্রাফ সংবাদপত্র এবং বিবিসি টেলিভিশন নিউজের বৈদেশিক সংবাদদাতা কাজ করেন। এই সময়ে তিনি ভারত, পাকিস্তান, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য, ল্যাটিন আমেরিকা এবং ইউরোপের অস্থিতিশীল ঘটনাবলির উপর নিয়মিত প্রতিবেদন তৈরি করতেন।

১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ৬ই মার্চ তিনি প্রথম ঢাকায় আসেন ডেইলি টেলিগ্রাফের প্রতিবেদক হিসেবে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানের রাজধানী ঢাকাতে ২৫শে মার্চ দিবাগত রাত্র ১২টার পর থেকে বাঙালি নিধনে '
অপারেশন সার্চ লাইট' যখন শুরু করে, তখন সাইমন ড্রিং ঢাকাস্থ হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে (পরবর্তীতে - হোটেল শেরাটন, বর্তমানে - হোটেল রূপসী বাংলা) অবরুদ্ধ অবস্থায় ছিলেন। ২৬শে মার্চ পর্যন্ত তিনি জীবন বিপন্ন করে ঢাকার সংবাদ সংগ্রহ করেন এবং ২৭শে মার্চ তিনি ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকায় প্রতিবেদন আকারে প্রেরণ করেন। এই প্রতিবেদনটি  ট্যাংকস ক্র্যাশ রিভোল্ট ইন পাকিস্তান  শিরোনামে ৩০শে মার্চ প্রকাশিত হয়। এই প্রতিবেদন বিশ্বব্যাপী ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। এই কারণে পাকিস্তান সরকার তাঁকে বহিষ্কার করেন। এরপর তিনি ইংল্যান্ডে ফিরে যান। এরপর তিনি সাংবাদিক হিসেবে নভেম্বর মাসে কলকাতা আসেন এবং এখান থেকে তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের যাবতীয় খবরাখবর প্রেরণ করতে থাকেন। ১৬ই ডিসেম্বর বিজয়ী মিত্রবাহিনীর সাথে তিনি ঢাকা এসেছিলেন।
         [
সাইমন ড্রিং-এর প্রতিবেদন]

১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি স্পোর্ট এইড নামক দাতব্য তহবিলের ধারণা উপস্থাপন। এই তহবিল সৃষ্টিতে তাঁকে সর্বোতভাবে সহযোগিতা করেন বব গেল্ডোফ। আফ্রিকা মহাদেশের দুর্ভিক্ষপীড়িত অঞ্চলের জনগণকে সহায়তার জন্য তিনি ৩.৭ কোটি ডলার সংগ্রহ করতে সংক্ষম হয়েছিলেন। এই বছরেই তিনি দ্য রেস এসেইন্ট টাইম শিরোনামে অন্য আরেকটি দাতব্য তহবিল গড়েন।

১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দের বৈদেশিক ভ্রমণের উপর একটি প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করেছিলেন বিবিসি রেডিও ফোরের জন্য। এর নাম ছিল 'অন দ্য রোড এগেইন'। পরে ওই ভ্রমণকাহিনী ভিত্তিক ৮ পর্বের একটি প্রামাণ্য চিত্র করেছিলেন। এই চিত্র প্রচারিত হয়েছিল বিবিসি এবং ডিসকভারি চ্যানেলে।

১৯৯৫ সালে অন দ্য রোড এগেইন: থার্টি ইয়ার্স অন দ্য ট্র্যাভেলার্স ট্রেইল টু ইন্ডিয়া নামে একটি ভ্রমণ কাহিনি রচনা করেন।
এছাড়া বিবিসি রেডিও ফোরের জন্য নির্মাণ করেছিলেন ৪০ মিনিটের রিটার্ন দ্য রোলিং থান্ডার । এটি ছিল তাঁর ২০ বছর পর ভিয়েতনামে ফিরে যাওয়ার স্মৃতিচারণামূলক চিত্র।

বাংলাদেশের প্রথম বেসরকারি টেলিভশন চ্যানেল 'একুশে টেলিভিশন'-এর সাথে যুক্ত হন। তাঁর পরিকল্পনা এবং ব্যবস্থাপনায় এই চ্যানেলটি চালু হতে পেরেছিল। এই কারণে তাঁকে বাংলাদেশের বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের পথিকৃৎ বলা হয়।

 ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি এই চ্যানেলের ব্যবস্থপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন।

২০০২ সালে একুশে টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ সম্প্রচার আইন লঙ্ঘনজনিত কারণে, সরকার একুশে টেলিভিশনের সম্প্রচার কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। সে সময়ে বাংলাদেশ সরকার সাইমন ড্রিং-সহ ও তাঁর সহযোগী তিনজন নির্বাহী পরিচালকের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগে আনেন। এরপর, ২০০২ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবর মাসে সরকার সায়মন ড্রিংয়ের ভিসা এবং ওয়ার্ক পারমিট বাতিল করে এবং তাঁকে অবিলম্বে বাংলাদেশ ত্যাগের আদেশ দেয়। ফলে তিনি ১লা অক্টোবর বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হন।

বর্তমানে তিনি অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেনে তিনি এবং তাঁর পত্নী ফাইওনা ম্যাকফেরসন সাথে বসবাস করছেন। উল্লেখ্য তাঁর স্ত্রী আইনজীবী এবং রোমানিয়াভিত্তিক ব্রিটিশ চিলড্রেনস্‌ চ্যারিটি'র নির্বাহী পরিচালক।

২০১০ খ্রিষ্টাব্দের ২৩শে ডিসেম্বর, তিনি যমজ কন্যা সন্তানের পিতা হন। এই কন্যাদের নাম আভা রোজ এবং ইন্ডিয়া রোজ । উল্লেখ্য ড্রিংয়ের পূর্বেকার সংসারে তানিয়া নামক আরেকটি কন্যা রয়েছে।