সত্যকিঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
(১৮৯৯-১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দ)
বিষ্ণুপুর ঘরানার অন্যতম সঙ্গীতজ্ঞ।

১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দের ১লা সেপ্টেম্বর বিষ্ণুপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার শ্রীপতিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন বিশিষ্ট সঙ্গীতজ্ঞ।  পিতামহ রামকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে শিক্ষা তাঁর শুরু হলেও- তিনি শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের পাঠ নিয়েছিলেন গোপেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায় কাছে। তাঁর কাছে শিখেছিলেন- ধ্রুপদ, ধামার, খেয়াল, টপ্পা, ঠুমরি এবং সেতার। পরে তিনি বাঁশি, সুরবাহার, বীণা, এস্রাজ, ব্যাঞ্জো, পাখোয়াজ, জলতরঙ্গসহ নানা যন্ত্রবাদনে তিনি সুদক্ষ হয়ে ওঠেন।

বিষ্ণুপুরে সঙ্গীতের পাঠ শেষে তিনি মুর্শিদাবাদের লালগোলা মহারাজ ও পুরুলিয়ার পঞ্চকোট তথা কাশীপুর রাজার দরবারে সভাগায়ক ছিলেন। এই সূত্রে তিনি কলকাতায় এসে সঙ্গীত সম্মেলনে শিক্ষকতা করার সুযোগ পান। মহারাজা বাহাদুর স্যার প্রদ্যোতকুমার ঠাকুর সত্যকিঙ্করকে সঙ্গীতজ্ঞ হিসাবে নিজের কাছে রাখেন।

১৯২১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি স্থায়ীভাবে কলকাতায় চলে আসেন।
১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দে বারাণসীতে নিখিল ভারত সংগীত সম্মেলনে যোগ দেন। অধিবেশনে তিনি সেতার বাদনে প্রথম ও ধ্রুপদ সংগীতে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন।
১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দে মার্চ মাস পর্যন্ত কলকাতা বেতারকেন্দ্রের শিল্পী হিসাবে নিয়মিতই ধ্রুপদ, খেয়াল, টপ্পা, সেতার ইত্যাদি পরিবেশন করেন। এই বছরের মার্চ মাসের এক বিকেলের অনুষ্ঠানে বাংলা ভাষায় মূলতান রাগে খেয়াল পরিবেশন নিয়ে আকাশবাণী বা অল ইন্ডিয়া রেডিও -র কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তাঁর চরম সংঘাত বাধে। মাতৃভাষায় খেয়াল পরিবেশনের দাবি নিয়ে তার সেই সংঘাত শেষ পর্যন্ত আদালত পর্যন্ত গড়ায়। কিন্তু মামলায় তিনি হেরে যান। কিন্তু তিনি আন্দোলন চালিয়ে যান। বাংলা ভাষাভাষীদের কাছে বাংলা ভাষায় খেয়াল গান জনপ্রিয় করার লক্ষ্যে তিনি বাংলায় শতাধিক খেয়াল রচনা করেন। তিনি তার আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ-

'সুরের পথে একটি জীবন'-এ লেখেন- বেশ কিছুদিন ধরেই আমি মনে করছিলাম শাস্ত্রীয় সংগীতের শ্রেণিগত গান নিজের মাতৃভাষায় গাওয়ার একান্ত প্রয়োজন আছে। এর দ্বারা সাধারণ শ্রোতাদের ভাষার ভাব বুঝতে পেরে এই সব গানে তাদের মনকে আকৃষ্ট করবে এবং ক্রমশ শোনার আগ্রহ ও অনুরাগ বাড়বে।

বাংলা খেয়াল ছাড়াও সত্যকিঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় অসংখ্য রাগে বহু উৎকৃষ্ট সঙ্গীত রচনা করেছেন। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর সম্পাদিত 'সংগীত প্রকাশিকা'য় তার অনেক স্বরলিপি প্রকাশিত হয়েছে। তার রচিত গানের সংকলন ও

তাঁর রচিত গ্রন্থাবলি

১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি অ্যাকাডেমি পুরস্কারে সম্মানিত হন।
১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ ডিসেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।