সুরেশচন্দ্র চক্রবর্তী (১৮৯৫ -১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দ)
ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিল্পী ও বিশেষজ্ঞ

১৮৯৫ খ্রিষ্টাব্দের ৭ এপ্রিল (২২ চৈত্র ১৩০১ বঙ্গাব্দ), ময়নসিংহ জেলার ব্রহ্মপুত্র তীরবর্তী কানিহারী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা রাজচন্দ্র চক্রবর্তী ছিলেন ময়মনসিংহের জমিদার সূর্যকান্তের আইন উপদেষ্টা।

প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন স্থানীয় পাঠশালায়। কৈশোর অতিক্রান্ত হওয়ার আগেই তাঁর পিতার মৃত্যু হয়। এই সময় মায়ের দৃষ্টি এড়িয়ে তিনি বিপ্লবী স্বদেশী দলে যোগদান করেন। বিষয়টি জানার পর ছেলেকে এই পথ থেকে ফিরিয়ে আনার জন্য, তাঁর মা অল্প বয়সে স্থানীয় একটি সুন্দরী কন্যার সাথে বিবাহ দেন। কিন্তু সুরেশচন্দ্র কিছুদিন পর স্ত্রী-সংসার ছেড়ে নিরুদ্দেশ হয়ে যান। দীর্ঘদিন তাঁর পরিবার এবং পুলিশ বিভাগ তাঁর সন্ধান পান নি। গৃহত্যাগের অনেক দিন পর বিপ্লবী দলের সদস্য হিসেবে পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে এবং প্রায় চার বছরে কারাবাসে থাকেন। জেল থেকে মুক্তি লাভের পর তিনি এক বছর পুলিশের নজরদারিতে গ্রামে কাটান।

এরপর তিনি নতুন করে লেখাপড়া  শুরু করেন। এরপর তিনি স্থানীয় স্কুল কলেজের ধারাবাহিক শিক্ষাক্রম অনুসারে বিএ এবং বিএল পাশ করেন। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষালাভের সময় ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের প্রতি আগ্রহী হবয়ে ওঠেন। এই আগ্রহের সূত্রে তিনি গৌরীপুর জমিদার এবং শাস্ত্রীয় সঙ্গীত বিশেষজ্ঞ ব্রজেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরীর কাছে তাত্ত্বিক এবং ক্রিয়াত্মক সঙ্গীতের শিক্ষালাভ করেন। একই সাথে লোকগান ও তিনি সমকালীন আধুনিক গান, রবীন্দ্রসঙ্গীত এবং অন্যান্য গানের পাঠ নেন।

১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দের সঙ্গীতজ্ঞ হিসেবে আকাশবাণীর সাথে যুক্ত হন। এই সূত্রে তাঁর সাথে পরিচয় ঘটে কাজী নজরুল ইসলাম ও এবং জগৎ ঘটক- এর সাথে। উল্লেখ্য,  ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দে জগৎ ঘটক 'উদাসী ভৈরব' নামে একটি নাটিকের খসড়া তৈরি করেন। নজরুল এই নাটিকাটির পরিমার্জনা করেন এবং এর সাথে ৬টি গান জুড়ে দেন। তবে নজরুল এই গানগুলোর সুর করেছিলেন তাঁর সৃষ্ট রাগ অবলম্বনে। এই নাটকের সম্পর্কে জগৎ ঘটকের বর্ণনা থেকে জানা যায়-
সুরেশদা কবিকে ভৈরব রাগের প্রচলিত রূপ এড়িয়ে নতুন সুরের রূপ সৃষ্টি করতে অনুরোধ করেন। কবি সেই নিয়ে মেতে উঠলেন, এমনকি ঘুমের মধ্যেও রাগ-রাগিণীর স্বপ্ন দেখতে লাগলেন, নতুন ভৈরব রাগের উদ্ভাবন করলেন অরুণ ভৈরব, উদাসী ভৈরব, রুদ্র ভৈরব ইত্যাদি।'

এই সময় ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবর মাসে লুপ্ত রাগের পুনরুদ্ধার এবং তা প্রচারের জন্য 'হারামণি' নামক একটি নতুন ধরনের ধারাবহিক অনুষ্ঠান শুরু করেন। ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দের ৮ অক্টোবরের (রবিবার, ২১ আশ্বিন ১৩৪৬)এই অনুষ্ঠানটি প্রথম প্রচারিত হয়েছিল কলকাতা বেতার কেন্দ্ররের সান্ধ্য অনুষ্ঠানে।

১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দের ১০ই জানুয়ারি কলকাতা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত হয়েছিল- জগৎ ঘটক- এর প্রবাহ নামক গীতি-আলেখ্য। এই গীতি-আলেখ্যের পরিকলপনাকারী ছিলেন সুরেশচন্দ্র।

ভারত বিভাগের কিছু আগে তিনি চট্টগ্রামের আর্য সঙ্গীত সমিতির অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর কিছুদিন তিনি আকাশবাণীতে মিউজিক প্রডিউসারের দায়িত্ব পালন করেন। শেষ জীবনে তিনি দিল্লীতে মিউজিক ডেপুটি প্রডিওসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দের ৫ অক্টোবর (১৭ আশ্বিন ১৩৭২) তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

সুরেশচন্দ্রের রচিত গ্রন্থ


সূত্র: