ভরত
হিন্দু পৌরাণিক কাহিনিতে এই নামে একাধিক নাম পাওয়া যায়। যেমন‒
১. রাজা
দশরথের পুত্র। এঁর মায়ের নাম ছিল কৈকেয়ী । দশরথের উত্তরাধিকার সূত্রে বড় ছেলে হিসাবে রাজ্য লাভের অধিকারী হন রাম। কৈকেয়ী নিজ পুত্র ভরতকে রাজপদে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য, দশরথের কাছে পূর্ব-প্রতিজ্ঞা স্মরণ করিয়ে, দশরথের দ্বারাই রামকে সিংহাসন চ্যুত করেন এবং ১২ বৎসরের জন্য বনবাসের ব্যবস্থা করেন। রাম পিতৃসত্য রক্ষার জন্য সীতাকে সাথে নিয়ে বনবাসে যান। পরে এঁদের অপর ভাই লক্ষ্মণও রামের অনুগামী হন। এই সময় ভরত তাঁর অপর ভাই শত্রুঘ্নের সাথে মামাবাড়ি ছিলেন। ইনি মামাবাড়ি থেকে ফিরে এসে মায়ের এরূপ অন্যায় আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে মাকে তিরস্কার করেন। রামের শোকে দশরথ মৃত্যুবরণ করলে, তিনি পিতার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া শেষ করে রামকে ফিরিয়ে আনার জন্য চিত্রকূট পর্বতে যান। কিন্তু শর্তানুসারে কালপূর্ণ হওয়ার আগে রাম ফিরবেন না এমন প্রতিজ্ঞা করলে, ভরত রামের জুতা সিংহাসনে রেখে রামের প্রতিনিধি হিসাবে রাজ্য পরিচালনা করতে থাকেন। রাম বনবাস শেষে অযোধ্যায় ফিরে এলে ইনি রামের হাতে রাজ্য সমর্পণ করেন।
ইনি রাজা কুশধ্বজের কন্যা মাণ্ডবীকে বিবাহ করেন। মাণ্ডবীর গর্ভে এঁর দুটি পুত্র জন্মে। এঁদের নাম ছিল তক্ষ ও পুলষ্ক। ইনি তাঁর পুত্রদের নিয়ে গন্ধর্বদেশ জয় করেন। পরে এই দেশ দুটি ভাগে ভাগ করে, তাঁর দুই পুত্রকে দান করেন। তক্ষ যে রাজ্য শাসন করতেন পরে তা তক্ষশীলা নামে পরিচিত হয়। অপর দিকে পুষ্কলের শাসিত রাজ্যের নাম হয় পুষ্কলবতী। ভরত রামের মতই সরযূ নদীতে যোগবলে মৃত্যুবরণ করেন।
পরবর্তী সময়ে ইনি ভরত নামে খ্যাত হন। ইনি সকল রাজাদের পরাজিত করে সার্বভৌমত্ব অর্জন করেন। ইনি মোট ৮০০টি অশ্বমেধ যজ্ঞ করেন। এর মধ্যে যমুনাতীরে ১০০টি, সরস্বতী তীরে ৩০০টি ও গঙ্গাতীরে ৪০০টি যজ্ঞ করেন। এরপরে ইনি ১০০০ হাজার অশ্বমেধ ১০০টি রাজসূয়ো যজ্ঞ করেন। এছাড়া ইনি অগ্নিষ্টোম, অতিরাত্র, উক্থ্য, বিশ্বজিৎও সহস্র বাজপেয় যজ্ঞ করেন। ইনি বাহুবলে সমস্ত ভারতবর্ষ একত্রিত করেছিলেন। তাই তাঁর নামানুসারেই তাঁর অধীনস্থ অঞ্চলের নামকরণ করা হয়েছিল- ভারতবর্ষ। ইনি বিদর্ভরাজের তিন কন্যাকে বিবাহ করেন। এর ভিতর সুনন্দা নামক স্ত্রীর গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন ভূমন্যু।
৩.
ঋষভদেবের পুত্র। ইনি রাজ্য লাভের পর বিশ্বরূপের কন্যা পঞ্চজনাকে বিবাহ করেন। এই স্ত্রীর গর্ভে পাঁচটি পুত্র জন্মে। ইনি পুত্রদের মধ্যে রাজ্য বিতরণ করে সংসার মায়া ত্যাগ করে বনবাসে আসেন। এই সময় একদিন একটি গর্ভবতী হরিণী জলপান করতে এসে সিংহের গর্জন শুনতে পান। উক্ত গর্জন শুনে হরিণীর গর্ভপাত হয় এবং হরিণী মৃত্যুবরণ করে। ভরত এই অসহায় হরিণশাবককে প্রতিপালন করেন। পরে এই হরিণের চিন্তা করতে করতে ইনি মৃত্যুবরণ করেন। এর পরের জন্মে ইনি হরিণরূপে জন্মগ্রহণ করেন। মৃগ জন্মশেষে ইনি ব্রাহ্মণকুমার রূপে আবার জন্মগ্রহণ করেন। লোকসঙ্গ ত্যাগ করে ইনি জড় পদার্থের মত বাস করতেন বলে এঁর অপর নাম ছিল জড়ভরত।
৪. প্রখ্যাত ঋষি বিশেষ। ইনি ছিলেন ভারতের প্রাচীন নাট্যশাস্ত্রের প্রণেতা। ধারণা করা হয়, খ্রিষ্টীয়
দ্বিতীয় শতাব্দীর মানুষ ছিলেন।
ভরতের জীবনবৃত্তান্ত সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানা যায় না। শিল্পকলার জগতে তিনি
'নাট্যশাস্ত্র' গ্রন্থের জন্য সুখ্যাতি লাভ করেছেন। ভরতের পরবর্তী সময়ে নানা
গবেষণামূলক গ্রন্থে নাট্যশাস্ত্রে বর্ণিত বিষয় নানাভাবে উল্লেখ করা হয়ে থাকে। এছাড়া
এই গ্রন্থের অনুসরণে সঙ্গীত, রস,নাট্যকলা, নৃত্য ইত্যাদি বিষয়ে বহু গ্রন্থ রচিত
হয়েছে।