ওয়াজেদ আলী খান পন্নী
(১৮৭১-১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দ)
ব্রিটিশ-ভারতে জমিদার, সমাজকর্মী ও রাজনীতিবিদ।

১৮৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ এপ্রিল, টাঙ্গাইল জেলার করটিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর ডাক নাম ছিল  চাঁদ মিয়া। স্থানীয় জনগণের নিকট তিনি আটিয়ার চাঁদ নামে পরিচিত ছিলেন। পিতার নাম হাফেজ মাহমুদ আলী খান পন্নী। মায়ের নাম খোদেজা খাতুন।

গৃহশিক্ষকের নিকট শৈশবশিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন। পরে তিনি প্রচেষ্টায় আরবি, ফারসি, উর্দু ও ইংরেজি ভাষা শেখেন।

১৮৯২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি তাঁর পিতার পৃষ্ঠপোষকতায় কবি মুহম্মদ নঈমউদ্দীন কর্তৃক চার খণ্ডে ফতোয়ায়ে আলমগীরী-র অনুবাদ করেন।

তাঁর পিতা হাফেজ মাহমুদ আলী খান পন্নী টাঙ্গাইলের করটিয়ায় একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন করেছিলেন। ১৯০১ খ্রিষ্টাব্দে ওয়াজেদ আলী এই বিদ্যালয়টিকে উচ্চ ইংরেজি শিক্ষার বিদ্যালয়ে উন্নীত করেন। নতুন এই বিদ্যালয়টির নামকরণ করেছিলেন ‘হাফেজ মাহমুদ আলী ইনস্টিটিউশন’। এই সময় এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন মি. স্মিথকে।

১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দে, তাঁর উদ্যোগে সারা বাংলার মুসলিম শিক্ষা সম্মেলন হয় করোটিয়ায়। এই সভার সভাপতিত্ব করেছিলেন নওয়াব স্যার সলিমুল্লাহ। এই ধারাক্রমে ১৯১০ খ্রিষ্টাব্দে করটিয়ায় ইতিহাস খ্যাত মুসলিম এডুকেশন কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়।

১৯১৩ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর সার্বিক তত্ত্বাবধানে এবং নওয়াব স্যার সলিমুল্লাহর সভাপতিত্বেব করটিয়ায় ‘মুসলিম এডুকেশন কনফারেন্স’ অনুষ্ঠিত হয়।

১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি করটিয়ায় ‘হাফেজ মাহমুদ আলী খান হাই স্কুল’ স্থাপন করেন। তিনি স্ত্রীর নামানুসারে করোটিয়াতে ‘রোকেয়া আলিয়া মাদ্রাসা’ প্রতিষ্ঠা করেন।

১৯২০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে তিনি ময়মনসিংহ জেলা কংগ্রেস কমিটি ও জেলা খিলাফত কমিটির সভাপতি ও নিখিল ভারত কংগ্রেস কমিটির সদস্য ছিলেন।

১৯২১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি খিলাফত আন্দোলন এ যোগ দেন এবং আইন অমান্য করার অভিযোগে একই বছর ডিসেম্বর মাসে গ্রেফতার ও ময়মনসিংহ জেলে অন্তরীণ হন।

১৯২২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি জেল থেকে মুক্তি পান এবং সমাজসেবায় আত্মনিয়োগ করেন।

১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দে জুলাই মাসে তিনি নিজ গ্রাম করোটিয়ায় একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। এই কলেজটি সে সময়ে করোটিয়া সাদাত কলেজ নামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই কলেজের জন্য তিনি প্রায় ৩৭ একর জমি দান করেন। এক্ষেত্রে বিশেষভাবে তাঁকে সাহায্য করেছিলেন, কলেজের প্রথম প্রিন্সিপাল ইব্রাহিম খাঁ। তাঁর পিতামহ সা’দত আলী খান পন্নীর নামানুসারে এর নামকরণ করেন ‘সা’দত কলেজ’। এই বছরেই তিনি তাঁরে স্ত্রীর নামে রোকেয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন।

অত্যন্ত দানশীল হিসেবে তাঁর খ্যাতি ছিল। তিনি তাঁর জমিদারির বার্ষিক আয়ের শতকরা ২০ ভাগ শিক্ষাবিস্তার ও জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করতেন। তাঁর জমিদারিতে প্রজাপীড়ন প্রায় ছিলই না, বরং দুর্ভিক্ষ ও বন্যায় খাজনা মওকুফ করার ব্যবস্থা ছিল।

১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মৃত্যু বরণ করেন।