সাহেবজাদা ইয়াকুব খান
(১৯২০-২০১৬ খ্রিষ্টাব্দ)
পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর, সেনাপতি, পদবী লেফট্যান্ট জেনারেল।
১৯২০ খ্রিষ্টাব্দের ২৩শে ডিসেম্বর ভারতের যুক্ত প্রদেশের (বর্তমান উত্তর প্রদেশ)
রামপুরে পশতুন পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা সাহেবজাদা স্যার আবদুস
সামাদ খান বাহাদুর ছিলেন, রামপুরের মুখ্যমন্ত্রী।
তিনি ব্রিটিশ ভারতী সেনাবাহিনীতে যোগদানের পর ভারতের দেরাদুনের 'প্রিন্স অব ওয়েলস
রয়্যাল ইন্ডিয়ান মিলিটারী' কলেজে লেখাপড়া করেন। ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দের ২২শে
ডিসেম্বর সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন। এই সময় তিনি ইন্ডিয়ান মটর ব্রিগেডের
অংশ ১৮তম কিং এডওয়ার্ড'স ওন ক্যাভালরিতে তিনি যোগ দেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীর সৈনিক হিসেবে উত্তর আফ্রিকায় দায়িত্বপালন করেছেন।
১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দের ৩রা এপ্রিল তিনি লেফটেন্যান্ট পদে উন্নীত হন। সেই বছরের ২৭ মে
তিনি জার্মান বাহিনীর হাতে বন্দী হন। অক্ষশক্তির যুদ্ধবন্দী শিবিরে পরবর্তী তিন বছর কাটানোর পর,
বিশ্বযুদ্ধের শেষে অন্যান্য সৈন্যদের সাথে মুক্তি পান।
১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে স্বাধীন পাকিস্তানে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন।
উল্লেখ্য, তার বড় ভাই সাহেবজাদা ইউনুস খান ভারতীয় সেনাবাহিনীতে থেকে গিয়েছিলেন।
১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে কাশ্মিরের রণাঙ্গনে তারা দুই ভাই পরস্পরের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন।
সেনাবাহিনীতে লেফটেন্যান্ট-জেনারেল হিসেব পদোন্নতি পাওয়ার পর তাঁকে
তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) নিয়োগ করা হয়।
১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৩শে আগস্ট তাঁকে পূর্ব পাকিস্তানের (জোন বি) সামরিক আইন
প্রশাসক করা হয়।
১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১লা মার্চ পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর হিসেবে নিয়োগ করা হয়।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রাক্কালে,
অপারেশন সার্চ লাইট-এর দ্বারা পূর্ব-পাকিস্তানে হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের পরিকল্পনা করা হয়, সাহেবজাদা তার
বিরোধিতা করেন। এই কারণে,
৭ই মার্চ ইয়াকুব খানকে তদানীন্তন
পূর্ব-পাকিস্তানের গভর্নর পদ থেকে অপসারিত করে,
টিক্কা
খানকে গভর্নর করা হয়।
এই সূত্রে তিনি ১০ই মার্চ ঢাকা ত্যাগ করেন।
সৈন্যবাহিনী থেকে অবসর গ্রহণের পর তাঁকে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ
দেওয়া হয়। ১৯৭২ থেকে ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র ও
সোভিয়েট ইউনিয়নে এই দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৮২ থেকে ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি প্রথমে প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা এবং
পরবর্তী সাতটি সরকারের আমলে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন
করেন।
১৯৯২ থেকে ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি জাতিসংঘ সেক্রেটারি জেনারেলের পশ্চিম
সাহারা বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি ছিলেন।
২০০১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি সকল কর্ম থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের ২৬শে জানুয়ারি ইসলামাবাদে মৃত্যুবরণ করেন।
বিবাহ ও সন্তান: ইয়াকুব খান কলকাতার ইরানি খলিলি পরিবারের সদস্য বেগব তুবা খলিলিকে
বিয়ে করেছেন। তাঁর এক পুত্র শাহেবজাদা ইউনুস খান ও কন্যা জাহান আরা হাবিবুল্লাহ।