যতীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়
১৮৭৭-১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দ
ব্রিটিশ ভারতে ব্রিটিশ-বিরোধী বাঙালি বিপ্লবী।  অন্য নাম নিরালম্ব স্বামী

১৮৭৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ নভেম্বর বর্ধমানের চান্না গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম কালিদাস বন্দ্যোপাধ্যায়।

শৈশবে যতীন্দ্র দুরন্ত প্রকৃতির ছিলেন। তাঁকে সুশীল বালক রূপে গড়ে তোলার জন্য তাঁর পিতা এক সাধুর কাছে নিয়ে যান। সাধু দাবি করতেন যে, বন্দুকের গুলিতে বিদ্ধ হন না। লোকে তাঁকে বলতেন ‌অ-বন্দুকবিদ্ধ‌। যতীন তাঁর পিতার পিস্তল দিয়ে ওই সাধুকে গুলি করার জন্য প্রস্ততি নিয়েছিলেন।

তিনি এফ,এ পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। পরে তাঁর সাথে হিরন্ময়ী নামক এক অল্প বয়স্কা বালিকার সাথে বিবাহ দেওয়া হয়। কিছুদিন পর ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে পড়েন। উদ্দেশ্য ছিল কোনো দেশীয় রাজার সেনাবাহিনীতে চাকরি নেবেন। বাংলা বাইরের চাকরি করতে গেলে হিন্দি জানা প্রয়োজন, তাই তিনি এই পরিভ্রমণের সময় এলাহাবাদে প্রবাসী পত্রিকার সম্পাদক রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে কিছু দিন হিন্দি শেখেন। এই সময় বরোদার রাজ্যের প্রাইভেট সেক্রেটারি ছিলেন
অরবিন্দ ঘোষ। যতীন তাঁর সাহায্যে  ১৮৯৭ খ্রিষ্টাব্দে বরোদা রাজ্যের অশ্বারোহী বাইনীতে যোগদান করেন। এই সময় তিনি নতুন নাম নিয়েছিলেন যতীন্দর উপাধ্যায়। যতীন্দ্র নিজ কর্মদক্ষতায় পরে মহারাজের দেহরক্ষী হিসেবে মনোনীত হন।

যতীন্দ্র অরবিন্দ ঘোষের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে- ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিপ্লবে উদ্বুদ্ধ হন। ১৯০১ বরোদায় মহারাজার আমন্ত্রণে ভগিনী নিবেদিতা,  বরোদা যান এবং সেখানেই তাঁর সাথে অরবিন্দ ঘোষের সাথে তাঁর পরিচয় হয়। অরবিন্দের বৈপ্লবিক ভাবনা দ্বারা নিবেদিতা প্রভাবিত হন। এই সময় বরোদা রাজপ্রাসাদে অরবিন্দ নিবেদিতা এবং যতীন্দ্র গুপ্ত বিপ্লবী সমিতি গঠনের বিষয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। 

১৯০২ খ্রিষ্টাব্দে
অরবিন্দের নির্দেশে তিনি  কলকাতায় আসেন। উদ্দেশ্য ছিল, কলকাতা তথা বাংলায় বিপ্লবী দল গঠনের উপযোগী পরিবেশ আছে কিনা এবং কলকাতায় এরূপ কোন বিপ্লবী সংগঠন গড়ে উঠেছে কিনা। যতীন্দ্র কলকাতায় এসে প্রথম ১০২ সার্কুলার রোডে একটি বাসা ভাড়া নেন। এই সময় তাঁর পাশে ছিলেন ভগিনী নিবেদিতা। উভয়ের প্রচেষ্টায় ধীরে ধীরে ১০২ সার্কুলার রোডস্থ বাসাটিকে আগ্রহী বিপ্লবীদের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়।

১৯০৩ খ্রিষ্টাব্দে ভগিনী নিবেদিতা মেদিনীপুর শহরে বিপ্লবীদের প্রথম আখড়ার উদ্বোধন করেন । উদ্দেশ্য ছিল শহরের যুবকদের কুস্তি, লাঠিখেলা ইত্যাদির মাধ্যমে বলশালী ও সাহসী করা । ভগিনী নিবেদিতা প্রায় এক সপ্তাহ মেদিনীপুরের হেমচন্দ্র মহাশয়ের গৃহে বাস করেছিলেন। পাঁচদিন ধরে প্রত্যহ সন্ধ্যায় স্থানীয় বেলী হলে নিবেদিতা বক্তৃতা দিতেন এবং প্রাতঃকালে অভ্যাগতদের সঙ্গে ধর্ম , রাজনীতি , শিক্ষা , সাহিত্য এবং বিশেষভাবে ভারতের অতীত গৌরব ও ইতিহাস আলোচনা করতেন। নিবেদিতার আগমনে সারা মেদিনীপুর জুড়ে এক অদ্ভুত উদ্দীপনার সঞ্চার ঘটেছিল। কলকাতার শ্ৰীভূপেন্দ্রনাথ দত্তও এই সময়ে মেদিনীপুর জেলার নানা স্থানে ঘুরে বিপ্লববাদ প্রচার করতেন।

১৯০৩ খ্রিষ্টাব্দে বিপ্লবী যোগেন্দ্র বিদ্যাভূষণের বাড়িতে
বাঘা যতীন ও ললিতচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সাথে পরিচয় ঘটে।

১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দের ৫ সেপ্টেম্বর মৃত্যবরণ করেন।