যূথিকা রায়
(২০ এপ্রিল,১৯২০ – ৫ ফেব্রুয়ারি,২০১৪)
সঙ্গীত শিল্পী।
চার দশকের সঙ্গীত জীবনে ভক্তিমূলক ভজনগানে হিন্দি ও বাংলা চলচ্চিত্রে অসামান্য প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে গেছেন । তিনি ২০০ টির বেশি হিন্দি ও ১০০ টির বেশি বাংলা চলচ্চিত্রে নেপথ্য সঙ্গীতে কণ্ঠ দেন।
১৯২০ খ্রিষ্টাব্দের ২০ এপ্রিল বাংলাদেশের খুলনা জেলার সেনহাটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ডাক নাম ছিল
রেণু। তাঁর পিতা সত্যেন্দ্র রায় ছিলেন স্কুল ইন্সপেক্টর।
মায়ের নাম স্নেহময়ী দেবী। ছোট বেলা থেকে তিনি গানে
অত্যন্ত অনুরক্ত ছিলেন।
এই গ্রামের গায়িকা সুধীরা দাশগুপ্তা যূথিকার গান শুনে মুগ্ধ হন
এবং তিনি যূথিকাকে কলকাতায় গিয়ে গান পরামর্শ দেন। এই পরমার্শ অনুসারে ১৯২৭
খ্রিষ্টাব্দে পিতার সাথে কলকাতায় আসেন। তিনি গান শেখানোর জন্য কমল দাশগুপ্তের বড়
ভাই বিমল দাশগুপ্তের কাছে নিয়ে যান। কিন্তু বিমল দাশগুপ্ত ব্যস্ততার জন্য তাঁকে গান
শেখাতে রাজী হন নি। এরপর যূথিকা রায় কলকাতা বেতারকেন্দ্রে কণ্ঠ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ
হয়েছিলেন। পরীক্ষায় তিনি খালি গলায় গেয়েছিলেন- রবীন্দ্রনাথের গান- 'আর রেখো না
আঁধারে।
তাঁর বাবার
বদলির চাকরি ছিল। ঘন ঘন বদলির কারণে ছেলেমেয়ের লেখাপড়ায় বিঘ্ন ঘটতো। সেই কারণে তাঁর
মা কলকাতার চিৎপুরে এসে বাসা নেন। এই সময় থেকে তিনি পরিবারের
সাথে কলকাতায় বসবাস করা শুরু করেন। এই সময় তাঁর বড় বোন বেথুন কলেজে ভর্তি হন। এই সময়
যূথিকা বরানগরে জ্ঞানরঞ্জন সেন-এর কাছে গানের তালিম নেওয়া শুরু করেন।
ঘটনাক্রমে কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর গান শুনে মুগ্ধ হন। ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দে নজরুল
ইসলামের চেষ্টায় প্রথম গ্রামোফোন রেকর্ড প্রকাশিত হয়। গানটি ছিল 'স্নিগ্ধ শ্যাম বেণী বর্ণা’। প্রশিক্ষক ধীরেন দাস। রেকর্ডটি বাতিল হয়ে যায়।
এরপর কমল দাশগুপ্ত তাঁকে দিয়ে
প্রণব রায়ের
রচিত দুটি গান রেকর্ড করান। গান দুটির সুরকার ছিলেন
কমল দাশগুপ্ত।
গান দুটি হলো-‘আমি ভোরের যূথিকা’ আর ‘সাঁঝের তারকা আমি পথ হারায়ে’। ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বর মাসে
গান দুটি এইচএমভি থেকে প্রকাশিত হয়েছিল।
এরপর থেকে ধীরে
ধীরে তিনি জনপ্রিয় শিল্পীতে পরিণত হন। তাঁর জন্য নতুন গান রচনার জন্য কাজী
নজরুল ইসলামকে অনুরোধ করেছিলেন। সেই অনুরোধে নজরুল ইসলাম রচনা করেন 'নীল যমুনার জল'
ও 'হে কৃষ্ণ প্রিয়তমা'।
১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দে রামকৃষ্ণ পরমহংস-এর জন্মদিন উপলক্ষে তাঁর
সাথে কমল দাশগুপ্ত দ্বৈতকণ্ঠে গান করেন। তিনি কমল দাশগুপ্তের নির্দেশনায় বহু
নজরুলসঙ্গীত রেকর্ডে গেয়েছেন।
১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দের জুন মাসে এইচএমভি থেকে প্রকাশিত
গীতিচিত্রমালার প্রথম ফুলেত- দুটি গানে কণ্ঠ দান করেন। রেকর্ড নম্বর এন
১৭০৮২। গান দুটি হলো-
- পাহাড়-দেশের বন্ধু
আমার [কথা: প্রণব রায়। সুর কমল দাশগুপ্ত]
- রূপ-কাহিনীর দেশে
[কথা:
প্রণব রায়। সুর কমল দাশগুপ্ত]
১৯৪৭ খ্রিষ্টব্দের ১৫ই আগষ্ট ভারতের স্বাধীনতা দিবসে দিল্লী
বেতারকেন্দ্র থেকে তিনি গেয়েছিলেন- 'সোনে কা হিন্দুস্তান মেরা'। এই বছরে কলকাতার
দাঙ্গার সময় মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী কলকাতায় বেলুড় মঠে
উঠেছিলেন। এখানে গান্ধীজীকে তিনি ভজন শোনান। এই গান শুনে
তিনি শুনে যূথিকাকে
‘মীরাবাঈ’ উপাধি উপহার দেন।
এই বছরের ৬ সেপ্টেম্বরে ধর্মতলায় ধ্র্মীয় সম্প্রীতির জন্য এক
বিশাল জনসভার আয়োজন করা হয়েছিল। এই সভায় ভাষাণ দেন মহাত্মা গান্ধী। এই সভার সমাপনী
গান তিনি পরিবেশন করেছিলেন। গানটি ছিল- ওরে নীল যমুনার জল'।
তিনি তিনটি চলচ্চিত্রে গান গেয়েছিলেন। ছবিগুলো হলো- ঢুলি,
রত্নকার ও ললৎকার।
১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি পদ্মশ্রী উপাধি পান।
১৯৭৭ খ্রিষ্টাব্দে এইচএমভি রেকর্ড কোম্পানি 'গোল্ড ডিস্ক'
সম্মাননা প্রদান করেন।
২০১২ খ্রিষ্টাব্দে রবীন্দ্রসদনে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
তাঁকে সম্মননা প্রদান করেন।
২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের ৫ ফেব্রুয়ারি
তিনি কলকাতার রামকৃষ্ণ মিশন সেবা প্রতিষ্ঠানে মৃত্যবরণ করেন।
যূথিকা রায়ের গীত নজরুলসঙ্গীতের তালিকা