কমল দাশগুপ্ত
(১৯২৮-১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দে)
সুরকার, সঙ্গীতশিল্পী ও সঙ্গীত পরিচালক। পুরো নাম কমলপ্রসন্ন দাশগুপ্ত। তবে কমল দাশগুপ্ত নামেই অধিক পরিচিত। প্রখ্যাত নজরুল সঙ্গীত শিল্পী ফিরোজা বেগমের স্বামী। কমলদাশ গুপ্তের ভাইবোনদের ভিতরে সঙ্গীতে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন- সুবল দাশগুপ্ত, সুধীরা সেনগুপ্তা এবং ইন্দিরা সেন।

১৯১২ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ জুলাই, যশোহর জেলার নড়াইলের  কালিয়া থানার বেন্দা নামক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম তারাপ্রসন্ন দাশগুপ্ত। এঁদের পৈতৃক বাড়ি ছিল যশোহর জেলার কালিয়া গ্রামে। কর্মোপলক্ষে তারাপ্রসন্ন সপরিবারে কোচবিহার চলে যান। এরপর এঁরা সপরিবারে কলকাতা চলে আসেন।

সঙ্গীতে তাঁর হাতেখড়ি হয়েছিল তাঁর বড় ভাই অধ্যাপক বিমলগুপ্তের কাছে। তিনি তাঁর বড় ভাই বিমল দাশগুপ্তের কাছে ভারতীয় রাগসঙ্গীতের তালিম নেন এবং খেয়াল গান শেখেন। এরপর তিনি রামকৃষ্ণ মিত্র, দিলীপ রায়, কৃষ্ণচন্দ্র দে ও ওস্তাদ জমিরউদ্দিন খাঁর কাছে সঙ্গীতের তালিম নেন। এঁদের কাছ থেকে তিনি খেয়াল, ঠুমরী ও গজল গান শেখেন।

১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ক্যালকাটা একাডেমী থেকে মেট্রিক পাশ করেন। এরপর তিন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে বি.কম পাশ করেন। এই সময় থেকে তাঁর দাদার অনুপস্থিতিতে টুইন কোম্পানির অনেক গানের সুর দিয়েছিলেন। তবে সেসব গানের সুরকার হিসেবে নাম থাকতো বিমল দাশগুপ্তের।

১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি হিজ মাস্টার্স ভয়েসের সঙ্গীতের ট্রেনার হিসেবে দায়িত্ব পান। প্রথম দিকে তিনি সুরকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। পরে তিনি গায়ক হিসেবে সুপ্তিষ্ঠিত হন। এই সময় থেকে নজরুলের সাথে তাঁর বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। এই সূত্রে তিনি নজরুলের গানের সুরারোপ করা শুরু করেন।

১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি এইচএমভি (হিজ মাস্টার্স ভয়েস) গ্রামোফোন কোম্পানিতে সঙ্গীত পরিচালক ও সুরকার হিসেবে যোগদান করেন। এছাড়া কলাম্বিয়া রেকর্ড কোম্পানিতেও তিন কাজ করেছেন। এইচএমভি-তে এক মাসে তিনি ৫৩টি গান রেকর্ড করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। এই সময় তিনি হায়দ্রাবাদের নিজামের গোল্ডেন জুবলির বিশেষ গান রেকর্ড করেন। ভারতীয় জাতীয় সেনাবাহিনীর 'মার্চিং সঙ' তার সুরে রেকর্ড করা হয়।

১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি চলচ্চিত্রের গানে প্রথম সুরারোপ করেন। সতু সেনের পরিচালিত এই ছবিটি ছিল ' পণ্ডিত মশাই '। গীতিকার শিলেন শৈলেন রায় এবং প্রণব রায়।
 
১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দে এইচএমভি স্টুডিওতে গান করছেন কমল দাশগুপ্ত। তবলায় পরেশ ভট্টাচার্য।  গানটি ছিল "কেন ফিরে ফিরে চলে যাব"
১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দে মীরা-বাঈন চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালক হিসাবে বেনারসের হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট উপাধি লাভ করেন।

১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর সাথে নজরুল সঙ্গীত শিল্পী ফিরোজা বেগমের বিবাহ হয়।

১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। এই সময় তাঁর নতুন নাম হয় কামাল উদ্দীন আহমেদ।

১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে এইচএমভি-তে রেকর্ড-সংখ্যক গানের সুর করার জন্য সিলভার জুবিলি অনুষ্ঠত হয়। উল্লেখ্য তাঁর সুরারোপিত গানের সংখ্যা প্রায় আট হাজার। তিনি বাংলা ছাড়াও হিন্দি, উর্দু, তামিল, তেলেগু ভাষার গানেও সুরারোপ করেছেন। এছাড়া তিনি সঙ্গীতের শর্টহ্যান্ড পদ্ধতিতে স্বরলিপি করার কৌশল উদ্ভাবন করেছিলেন।

১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দের ২০ জুলাই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

তিনি প্রায় ৮০টি চলচ্চিত্রে সঙ্গীত  পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রগুলো হলো — পণ্ডিত মশাই (১৯৩৬), শেষ উত্তর (১৯৪২), সহধর্মিনণী (১৯৪৩), যোগাযোগ (১৯৪৩), বিদেশিনী (১৯৪৪), নন্দিতা (১৯৪৪), ভাবীকাল (১৯৪৫), রাঙ্গামাটি (১৯৪৮), অনুরাধা (১৯৪৯), প্রার্থনা (১৯৫৩), সন্ধান (১৯৫৩), নববিধান (১৯৫৪), ব্রতচারিণী (১৯৫৫), মনরক্ষা (১৯৫৬), বধূবরণ (১৯৬৭)।

হিন্দি ছবিতে কণ্ঠদানের জন্য তিনি একাধিকবার পুরস্কৃত হয়েছেন। এর ভিতরে উল্লেখযোগ্য ছবিগুলো ছিল- জওয়াব (১৯৪২), হসপিটাল (১৯৪৩), রানি (১৯৪৩), মেঘদূত (১৯৪৫), এ্যারাবিয়ান নাইটস (১৯৪৬), বিন্দিয়া (১৯৪৬), কৃষ্ণলীলা (১৯৪৬), ফয়সালা (১৯৪৭, অনুপম ঘটকের সাথে), গিরিবালা (১৯৪৭), ইরান কি এক রাত (১৯৪৯), ফুলওয়ারি (১৯৫১)।

কমল দাশগুপ্তের সুরারোপিত নজরুল সঙ্গীত

সূত্র :