বিষের বাঁশী
কাজী নজরুল ইসলাম
বন্দিবন্দনা
আজি রক্ত নিশি-ভোরে
একি এ শুনি ওরে
মুক্তি-কোলাহল বন্দী-শৃঙ্খলে,
ঐ কাহারা কারাবাসে
মুক্তি-হাসি হাসে,
টুটেছে ভয়-বাধা স্বাধীন হিয়া-তলে॥
ললাটে লাঞ্ছনা-রক্ত-চন্দন,
বক্ষে গুরু শিলা, হস্তে বন্ধন
নয়নে ভাস্বর সত্য-জ্যোতি-শিখা,
স্বাধীন দেশ-বাণী কণ্ঠে ঘন বোলে,
সে ধ্বনি ওঠে রণি' ত্রিংশ কোটি ঐ
মানব-কল্লোলে॥
ওরা দু'পায়ে দ'লে গেল মরণ-শঙ্কারে
সবারে ডেকে গেল শিকল ঝঙ্কারে,
বাজিল নভ-তলে স্বাধীন ডঙ্কা রে,
বিজয়-সঙ্গীত বন্দী গেয়ে' চলে'
বন্দীশালা মাঝে ঝঞ্ঝা প'শেছে রে
উতল কলরোলে॥
আজি কারার সারা দেহে মুক্তি-ক্রন্দন,
ধ্বনিছে হা হা-স্বরে ছিঁড়িতে বন্ধন,
নিখিল গেহ যথা বন্দী-কারা, সেথা
কেন রে কারা ত্রাসে মরিবে বীর-দলে।
'জয় হে বন্ধন' গাহিল তাই তারা
মুক্ত নভ-তলে॥
আজি ধ্বনিছে দিগ্বধূ-শঙ্খ দিকে দিকে,
গগনে কা'রা যেন চাহিয়া অনিমিখে,
ধু ধু ধু হোম-শিখা জ্বলিল ভারতে রে,
ললাটে জয়টীকা, প্রসূন-হার-গলে
চলে রে বীর চলে;
সে নহে নহে কারা, যেখানে ভৈরব
রুদ্র-শিখা জ্বলে॥কোরাস:
জয় হে বন্ধন-মৃত্যু-ভয় হর! মুক্তি-কামী জয়!
স্বাধীন-চিত জয়! জয় হে! জয় হে! জয় হে!
পাঠভেদ:
রচনা ও
প্রকাশকাল:
'বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিক'য় প্রকাশিত গানটির
সাথে রচনার স্থান উল্লেখ ছিল- কান্দিরপাড়, কুমিল্লা'। উল্লেখ্য
নজরুল
কান্দিরপাড়ে এসেছিলেন ১৩২৮ বঙ্গাব্দের ৪ঠা আষাঢ় (১৮ই জুন ১৯২১) মাসে। ১৩২৮
বঙ্গাব্দের
২৪ আষাঢ় (৮ই জুলাই
১৯২১) তিনি কলকাতার
উদ্দেশ্যে রওনা দেন। তাই ধরেই নেওয়া যায়- এই গানটি তিনি রচনা করেছিলেন ৪ঠা
আষাঢ় থেকে ২৪ আষাঢ়ের ভিতরে। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ২২ বৎসর ১-২ মাস।