বিষয়: নজরুলসঙ্গীত
শিরোনাম : 
আঁধারের এলোকেশ ছড়িয়ে এলে
	
আঁধারের এলোকেশ ছড়িয়ে এলে
                           
তুমি ধূসর সন্ধ্যা।
তোমারে অর্ঘ্য দিতে বনে ফুটিল কি তাই
                                       
রজনীগন্ধা?
গোধূলির রং সম তব মুখ, হায়!
তরুণ হাসি কেন চকিতে মিলায়?
সহসা মহুয়া বনে চঞ্চল বায়
                        
হ'ল নিথর সুমন্দা॥
বিষাদ-গভীর তব নয়ন যেন নিশীথের সিন্ধু;
মুদিত কমলের দলিত দলে তুমি শিশিরের বিন্দু।
তুমি সকরুণ প্রার্থনা বেলাশেষের,
পথ-হারা পাখি তুমি দূর বিদেশের,
স্নিগ্ধ-স্রোত তুমি দূর অমরার অলকানন্দা॥
	
	- 
 ভাবসন্ধান: দিনশেষে পূজারীর নিবেদিত সন্ধ্যাবন্দনা হিসেবে এই গানটি উপস্থাপিত হয়েছে। স্থায়ীতে তার আভাস মেলে বিষাদিত উপমার মধ্য দিয়ে। দিনশেষে ধূসর সন্ধ্যায় চারিদকে আঁধারের কালো ছায়া নেমে আসে, কবি তাকে 
	'আঁধারের এলোকেশ'-এর উপমায় উপস্থাপন করেছেন। আবার দিনশেষে যখন রজনীগন্ধ্যা তার পাপড়ি মেলে ধরে, কবি মনে করেন, এ যেন- সন্ধ্যাকে বরণ করার জন্যই তার অর্ঘ্য নিবেদন।
	
 
 অন্তরাতে সন্ধ্যার আলোতে অপসৃত সৌন্দর্যের জন্য হাহাকার ফুটে ওঠে। অপরাহ্ণে গোধুলির তরুণের হাসির মতো যে রঙিন আভা ছড়ায়, সন্ধ্যার আগমনে তা ম্লান হয়ে যায়। থেমে যায় মাদকীয় মহুয়ার মৃদু মধুর বাতাস। এ গানের 'হায়' ধ্বনির ভিতর দিয়ে যেন অনেক হারানোর বেদনা তীব্রতর হয়ে ওঠে- হাহাকার হয়ে।
 
 আভোগে সন্ধ্যার মাঝে কবি দেখেছেন রাত্রির সাগরের মতো বিষাদ-গভীর বেদনার অন্ধকার। সে বেদনা যেন মুদিত পদ্মফুলের অবনমিত পাপড়িতে ঝরে পড়া বেদনার অশ্রুবিন্দুরূপী শিশিরের মতো। আভোগে কবি সন্ধ্যার রূপকে দেখেছেন বেলাশেষের সকরুণ প্রার্থনার মতো, অসহায় দিক্ভ্রান্ত পাখির মতো, কিম্বা স্বর্গের নদী অলকানন্দার স্নিগ্ধ-স্রোতের মতো। সব মিলিয়ে পুরো গানে ফুটে উঠেছে সন্ধ্যার 
		অরূপদর্শন।
	
		
			 [সূত্র: নজরুল সঙ্গীতের ভাবসন্ধান। প্রথম খণ্ড। 
			পর্যায়: প্রকৃতি। কামরুল হায়দার। নবযুগ প্রকাশনী। ফেব্রুয়ারি ২০২৫] 
		
	
 
 
	- 
	রচনাকাল ও স্থান: গানটির 
		রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। 
		১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর (অগ্রহায়ণ -পৌষ ১৩৪৩) মাসে 
	এইচএমভি রেকর্ড কোম্পানি থেকে গানটির প্রথম রেকর্ড প্রকাশিত হয়েছিল। সেই সময় নজরুল ইসলামের বয়স ছিল 
	৩৭ বৎসর ৬ মাস। 
 
- 
	রেকর্ড: 
	- 
	এইচএমভি।
	ডিসেম্বর ১৯৩৬ (অগ্রহায়ণ -পৌষ ১৩৪৩) এন ৯৮১৫।  শিল্পী: নিতাই ঘটক
- ১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ জানুয়ারি (মঙ্গলবার, ১৩ মাঘ ১৩৪৩) এইচএমভি'র 
			সাথে নজরুলের যে চুক্তিপত্র স্বাক্ষরিত হয়েছিল, তাতে গানটি ছিল।
 
 
- 
	স্বরলিপি ও স্বরলিপিকার:
	
	- পর্যায়: 
	
		- বিষয়াঙ্গ: প্রকৃতি, জাগতিক, ঋতুনিরপেক্ষ, বিমূর্ত, সন্ধ্যা
- সুরাঙ্গ: স্বকীয় বৈশিষ্ট্য